মোঃ আশিকুর রহমান (পলাশ) : ১ ফেব্রুয়ারি থেকে পানির দাম বাড়িয়েছে রাজশাহী ওয়াসা। আবাসিক ও বাণিজ্যিক উভয় ক্ষেত্রেই পানির দাম তিনগুণ বাড়ানো হয়েছে। এক লাফে পানির তিনগুন মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণায় হতবাক গ্রাহকরা।
গ্রাহকরা বলছেন, মূল্য বৃদ্ধির একটা সিস্টেম আছে। যুক্তি দিয়ে শতকরা ৫-১০ ভাগ দাম বাড়ানো যেতে পারে। কিন্তু এক লাফে তিনগুণ দাম বৃদ্ধি কোনো যুক্তিতেই চলে না। কেউ কেউ এটাকে তুঘলোকি কাণ্ড বলেও উল্লেখ করেছেন। নিত্য প্রয়োজনীয় সকল দ্রব্যের যখন অগ্নিমূল্য, তখন পানির এই দাম বৃদ্ধি গ্রাহকের জন্য ‘মরার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে নেমে আসবে।
রাজশাহী ওয়াসা বলছে, বিদ্যমান অবস্থায় পানির মূল্য তিনগুণ করার পরও উৎপাদন ব্যয়ের চেয়ে পানির মূল্য কম থাকবে। অর্থাৎ প্রতি হাজার লিটার পানির উৎপাদন ব্যয় যেখানে ৮ টাকা ৯০ পয়সা, সেখানে মূল্যবৃদ্ধির পরও সমপরিমাণ পানির জন্য আবাসিক গ্রাহকরা দেবেন ৬ টাকা ৮১ পয়সা। তবে বাণিজ্যিক সংযোগের ক্ষেত্রে প্রতি হাজার লিটার পানির মূল্য ধরা হবে ১৩ টাকা ৬২ পয়সা।
পানির মূল্য তিন গুণ বৃদ্ধি ও সামাজিক সংগঠনগুলোর প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) রাজশাহী জেলার সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল আলম বলেন, গ্রাহকরা এতটা মূল্যবৃদ্ধি মেনে নিতে পারেনি। তবে গ্রাহক ও সামাজিক সংগঠনগুলো জানে প্রতিবাদ কিংবা কোনো কর্মসূচি পালন করে লাভ হবে না। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যে সিদ্ধান্ত একবার নেয়, দিন শেষে সেটাই বাস্তবায়ন করা হয়। নেসকোর প্রিপেইড মিটার নিয়ে দিনের পর দিন আন্দোলন করে সেটা নগরবাসী বুঝেছে। এজন্য শুধু শুধু সময় নষ্ট ভেবে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও কেউ কোনো প্রতিবাদ জানায়নি।
`রাজশাহী ওয়াসার সরবরাহ করা পানি মানসম্মত নয়‘ গ্রাহকদের এমন অভিযোগ দীর্ঘদিনের। গ্রাহকরা বলছেন, কোনো কোনো সময় এত নোংরা পানি সরবরাহ করা হয়, যা ব্যবহার অনুপযোগী। খাওয়া তো দূরে থাক হাতে নিতেও রুচিতে বাধে। হলুদ এবং দুর্গন্ধযুক্ত এই ময়লা পানি নিয়ে গ্রাহকের অভিযোগের শেষ নাই।
নগরীর হড়গ্রাম এলাকার আবুল বাসার এবং মহিষবাথান এলাকার অবসরপ্রাপ্ত কলেজ শিক্ষক শামীম আরা সাপ্লাই পানি নিয়ে তাদের সীমাহীন দুর্ভোগের বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, বিষয়টি ওয়াসা কর্তৃপক্ষকেও জানিয়েছেন তারা। কিন্তু পরিস্থিতির কোনো সুরাহা নাই। এছাড়াও গ্রাহকদের অভিযোগ, কালো শেওলাও পাওয়া যায় পানির মধ্যে।
নগরীর কুমারপাড়া এলাকার বাসিন্দা মোহন চন্দ্র বলেন, ওয়াসার সরবরাহকৃত পানি মোটেও পানযোগ্য নয়। ময়লা ছাড়াও পানিতে প্রচুর আয়রন। পাত্রে সংরক্ষণ করলে হলুদ স্তর পড়ে যায়। ফুটিয়ে পান করতে গিয়ে দেখা যায় নিচে সাদা স্তর। অনেকটা নিরুপায় হয়েই মানুষ এই পানি ব্যবহারে বাধ্য হচ্ছে।
মহানগরীতে সুপেয় পানি সরবরাহের লক্ষে সিটি করপোরেশন থেকে পৃথক হয়ে ২০১০ সালের ১ আগস্ট রাজশাহী ওয়াসার কার্যক্রম শুরু হলে মানুষের আশা ছিল ওয়াসা নগরবাসির পানির চাহিদা পূরণে সক্ষম হবে। কিন্তু দীর্ঘ সময় পেরিয়ে এলেও ওয়াসার কার্যক্রমে সন্তুষ্ট হতে পারেননি গ্রাহকরা। পানির মান এবং পানি সরবরাহের সময় নিয়েও গ্রাহকদের মধ্যে রয়েছে অসন্তোষ।
নতুন মূল্য কার্যকর করার বিষয়ে রাজশাহী ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাকীর হোসেন বলেন, ওয়াসার আয়ের প্রধান উৎস পানির বিল বাবদ অর্থ। উৎপাদন খরচের চেয়ে অনেক কম দামে গ্রাহকদের পানি সরবরাহ দিচ্ছে ওয়াসা। এটা গ্রাহকরাও অবগত। এজন্য পানির মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে কেউ কোনো ধরনের প্রতিবাদ কিংবা অভিযোগ জানায়নি।
Comment here