নিজস্ব প্রতিবেদক : নানা অপকর্মের অভিযোগে গ্রেপ্তার নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক শামীমা নূর পাপিয়া ও তার স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরীর বিপুল পরিমাণ অর্থ-সম্পদ, ফ্ল্যাট-প্লট ও গাড়ির সন্ধান পেয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
আজ রোববার বিকেলে রাজধানীর কাওরানবাজারের র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাব-১-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সফিউল্লাহ বুলবুল।
এর আগে পালিয়ে দেশত্যাগ করার সময় গতকাল শনিবার রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে পাপিয়াসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। গ্রেপ্তার বাকিরা হলেন, পাপিয়ার স্বামী মফিজুর রহমান সুমন চৌধুরী (৩৮) এবং তাদের সহযোগী সাব্বির খন্দকার (২৯) ও শেখ তায়্যিবা (২২)।
আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র্যাব জানায়, নির্দিষ্ট কোনো পেশা না থাকা সত্ত্বেও খুব অল্প সময়ে তারা বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন।
বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সফিউল্লাহ বুলবুল জানান, আজ রাজধানীর ইন্দিরা রোডের বিলাসবহুল একটি ভবনে পাপিয়া-সুমন দম্পতির দুটি ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়ে একটি বিদেশি পিস্তল, ২০টি গুলিসহ দুটি পিস্তলের ম্যাগাজিন, পাঁচ বোতল দামি মদ, নগদ ৫৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা, যার বৈধ উৎস তারা দেখাতে পারেননি, তিনটি পাসপোর্ট, চেক বই, বিদেশি মুদ্রা, বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি এটিএম কার্ড উদ্ধার করা হয়।
এ ছাড়া আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র্যাব জানায়, গ্রেপ্তার আসামিদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে তাদের বর্তমান সম্পদ ও বিলাসবহুল জীবন সমন্ধে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য উঠে আসে। তাদের নির্দিষ্ট কোনো পেশা না থাকা সত্ত্বেও খুব অল্প সময়ে তারা বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন। তাদের ইন্দিরা রোডে দুটি ফ্ল্যাট, নরসিংদীতে দুটি ফ্ল্যাট, একাধিক ব্যক্তিগত গাড়ি, নরসিংদীর বাগতি এলাকায় দুই কোটি টাকা মূল্যের দুটি প্লট, এফডিসি একালাকায় কার এক্সচেঞ্জ নামে অংশীদারিত্বের অপর একটি গাড়ির ব্যবসা, যেখানে তাদের এক কোটি টাকার বিনিয়োগ আছে বলে তারা জানান, নরসিংদীতে কেএমসি কার ওয়াশ অ্যান্ড অটো সল্যিউশন নামের একটি প্রতিষ্ঠানে ৪০ লাখ টাকা বিনিয়োগ আছে বলেও তারা জানান।
এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে নামে-বেনামে তাদের অ্যাকাউন্টে প্রচুর পরিমাণে অর্থ গচ্ছিত আছে বলেও তারা প্রাথমিকভাবে র্যাবকে জানিয়েছেন।
র্যাব জানায়, প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা যায় যে, গ্রেপ্তার আসামি শামিমা নূর পাপিয়া ও তার স্বামী সুমন চৌধুরী নরসিংদী এলাকায় অবৈধ অস্ত্র ও মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণা, জমির দালালি, সিএনজি পাম্পের লাইসেন্স প্রদান, গ্যাস লাইন সংযোগ ইত্যাদির নামে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করে আসছেন। এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্যমতে, আসামিরা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) ও বংলাদেশ রেলওয়েতে বিভিন্ন পদে চাকরি দেওয়ার নামে মোট ১১ লাখ টাকা, একটি কারখানায় অবৈধ গ্যাস সংযোগ দেওয়ার কথা বলে ৩৫ লাখ টাকা, একটি সিএনজি পাম্পের লাইসেন্স করে দেওয়ার কথা বলে ২৯ লাখ টাকাসহ ঢাকা ও নরসিংদী এলাকায় চাঁদাবাজি, মাদক ও অস্ত্র ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা অবৈধভাবে উপার্জন করেছেন।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল সফিউল্লাহ বুলবুল আরও জানান, এ ছাড়া আসামি শামিমা নূর পাপিয়া ও তার স্বামী সুমন চৌধুরীর নরসিংদী এলাকায় ‘কিউ অ্যান্ড সি’ নামক একটি ক্যাডার বাহিনী আছে, যাদের মাধ্যমে তারা নরসিংদীর বিভিন্ন এলাকায় চাঁদাবাজি, মাসোহারা আদায়, অস্ত্র ও মাদক ব্যবসাসহ এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের জন্য সব ধরনের অন্যায় কাজের সঙ্গে জড়িত বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। তাদের এই ক্যাডার বাহিনীর অনেকের নাম ইতিমধ্যে জানা গেছে, যাদের গ্রেপ্তারের লক্ষে র্যাবের অভিযান অব্যাহত আছে।
Comment here