অনেকেই তাকে বলতেন পাগল পুলিশ। কারণ পুলিশের পোশাক পরে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি মানুষকে ধূমপান থেকে বিরত রাখতে দিনরাত লড়াই করে চলেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) বাড্ডা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শফিকুল ইসলাম।
দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে ধূমপানমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে কাজ করছেন তিনি। নিজ উদ্যেগে গড়ে তুলেছেন একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। যার নাম ‘ধূমপানমুক্ত বাংলাদেশ চাই’।
সম্প্রতি দৈনিক আমাদের সময় অনলাইনে ‘অনেকেই বলত “পাগল পুলিশ”, তবুও থামেনি শফিকুলের লড়াই’ এই শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। তার এমন ভাল কাজকে অনুপ্রাণিত করতে ডিএমপি তাকে পুরস্কৃত করেছে।
গতকাল মঙ্গলবার ডিএমপি কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের অপরাধ পর্যালোচনা সভায় তাকে পুরস্কৃত করেন।
যেভাবে শুরু ‘ধূমপানমুক্ত বাংলাদেশ চাই’ -এর লড়াই
দেশ সেবার শপথ নিয়ে ১৯৯৬ সালে এক তরুণ কনস্টেবল হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশে যোগদান করেছিলেন শফিকুল ইসলাম। কিন্তু পুলিশি দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ওই তরুণের মনের মধ্যে একটি স্বপ্ন লুকিয়ে রেখেছিলেন তিনি। মনের গভীরে লুকিয়ে রাখা সেই স্বপ্নটির নাম ‘ধূমপানমুক্ত বাংলাদেশ গড়া’। যদিও কলেজে পড়াকালীন বন্ধুদের চক্করে অল্প কিছুদিন নিজেও ধূমপান করা শুরু করেছিলেন তিনি। কিন্তু অল্প কিছুদিন যেতে না যেতেই গলা ব্যথা ও কাশি শুরু হয় তার।
চিকিৎসকের পরামর্শে ধূমপান ছেড়ে দেন তিনি। এরপর ধূমপানের ক্ষতিকর দিকগুলো নিজে অনুধাবন করতে পেরে অন্য মানুষকেও ধূমপান থেকে বিরত রাখবেন বলে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেন।
অবশেষে ২০০৩ সালে ‘ধূমপানমুক্ত বাংলাদেশ গড়া’র স্বপ্নটার আত্মপ্রকাশ ঘটিয়ে ব্যক্তিগত উদ্যোগে শুরু করেন ‘ধূমপানমুক্ত বাংলাদেশ চাই’ আন্দোলন।
বর্তমানে তার সংগঠনে সদস্য সংখ্যা ৩০ হাজারের ওপরে। সারা দেশের জেলায় ও উপজেলায় রয়েছে কমিটি। শুধুমাত্র দেশে নয়, বিশ্বের ২৪টি দেশেও রয়েছে তার সংগঠনের শাখা। এ ছাড়া পুলিশ, শিক্ষক, চিকিৎসকসহ বিভিন্ন পেশার ৩০০ জনের ওপরে বিসিএস কর্মকর্তা তার এই সংগঠনের উপদেষ্টা হিসেবে রয়েছেন।
‘ধূমপানমুক্ত বাংলাদেশ চাই’-এর চেয়ারম্যান হিসেবে ফেসবুকে তার ফলোয়ার প্রায় দুই কোটির বেশি মানুষ।
শফিকুল জানান, পুলিশের চাকরি শুরু করার পর থেকে নিজের দায়িত্ব পালন শেষে যে অবসর সময়টুকু তিনি পান, সেই সময়টুকু রিকশাচালক, ভ্যানচালক, ফুটপাতের দোকানদারসহ নিম্ন আয়ের নানা মানুষের পেছনে ব্যয় করেন। প্রথম দিকে এসব নিম্ন আয়ের মানুষদের কাছেই ধূমপানের ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরে আলোচনা করতেন তিনি। পরে ধীরে ধীরে সমাজের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে পৌঁছে গেছেন শফিকুল। এমনকি কর্তব্যরত অবস্থাতেও সুযোগ পেলেই ধূমপায়ী মানুষের কাছে গিয়ে তাদের নানাভাবে বোঝান।
শফিকুলের ভাষ্য, তার এমন ব্যতিক্রম কার্যক্রম দেখে প্রথম দিকে অনেকে তাকে পাগল পুলিশ বলে ডাকত। কোনো চায়ের দোকানে, সিগারেট খাওয়া হচ্ছে এমন জায়গায় গেলে যারা তাকে চিনত তারা বলত, ‘এই পাগল পুলিশ আইছে।’ তবে সেসব কথায় কোনোদিনই বিরক্ত হননি শফিকুল।
Comment here