পোশাক খাতে কাটছে ভয়, বাড়ছে রপ্তানি - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

পোশাক খাতে কাটছে ভয়, বাড়ছে রপ্তানি

আব্দুল্লাহ কাফি : চলতি বছরের শুরু থেকেই ন্যূনতম মজুরির দাবিতে শ্রমিকদের আন্দোলনে দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান উৎস পোশাক খাতে শুরু হয় অস্থিরতা। এখনও এই ইসু্যৃতে অস্থিরতার রেশ রয়ে গেছে। এ ছাড়া গত জুলাই ও আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, সর্বোপরি আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের লক্ষ্যে ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে ঘিরে দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে অস্থিতিশীলতা। এতে করে ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অনেক ক্রেতা মুখ ফিরিয়ে নেয়; থমকে যায় আমদানি-রপ্তানি। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস দায়িত্ব নেওয়ার অনেকটাই স্বস্তি ফিরে আসে। আমদানি-রপ্তানি স্বাভাবিক হয়। এর পরও এ খাতে অনেক সংকট রয়ে গেছে। কিন্তু এর মধ্যেও দেশের তৈরি পোশাক খাতে রপ্তানি আয় বেড়েছে। উদ্যোক্তাদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাও

ধীরে ধীরে কেটে যাচ্ছে। নতুন স্বপ্ন দেখছেন তারা। পরিবেশ স্বাভাবিক থাকলে রপ্তানি তো বটেই, নতুন বিনিয়োগও বাড়বে বলে মনে করছেন তারা। এক্ষেত্রে বেশকিছু সমস্যা সমাধানে সরকারকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা। তাদের মতে, তৈরি পোশাক খাতকে এগিয়ে নিতে গ্যাস, বিদ্যুতের সরবরাহ বাড়ানো প্রয়োজন। কারাখানা চালু রাখতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি। উপরন্তু ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচির উদ্যোগ নেওয়ারও কোনো বিকল্প নেই।

এদিকে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে তৈরি পোশাক থেকে রপ্তানি আয় হয়েছে ১ হাজার ৬১১ কোটি ৭১ লাখ ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১ হাজার ৪৩৪ কোটি ৬৫ লাখ ডলার। এ ক্ষেত্রে আগের বছরের চেয়ে রপ্তানির প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ। এ ছাড়া শুধু নভেম্বরে পোশাক রপ্তানি হয়েছে ৩৩০ কোটি ৬১ লাখ ডলার, যা আগের বছরের একই মাসে ছিল ২৮৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৬ দশমিক ২৫ শতাংশ।

এ ছাড়াও হোম টেক্সটাইল খাতে আলোচ্য সময়ে আয় হয়েছে ৩২ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। গত বছরের একই সময়ে এ খাতের রপ্তানি ছিল ৩১ কোটি ১১ লাখ টাকা। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ০৩ শতাংশ। এ ছাড়া মাসভিত্তিক গত বছরের নভেম্বরে যেখানে রপ্তানি হয়েছিল ৫ কোটি ৯৫ লাখ ডলার, সেখানে চলতি বছরের একই সময়ে রপ্তানি হয়েছে ৭ কোটি ১৮ লাখ ডলার বা ২০ দশমিক ৭৪ শতাংশ বেশি।

জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন আমাদের সময়কে বলেন, বিনিয়োগ বাড়াতে হলে শুরুতেই অভ্যন্তরীণ সিস্টেমগুলো বদলাতে হবে। একই ধরনের কাজের জন্য কয়েক টেবিল দৌড়াতে হয়। এটা বন্ধ করা দরকার। সরকার ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করেছে। এর বাস্তবায়ন দরকার। তিনি বলেন, বিনিয়োগকারীরা হয়রানি থেকে মুক্তি পেলে বিনিয়োগ বাড়বে।

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, রপ্তানির চিত্র দেখে উদ্যোক্তাদের মধ্যে স্বস্তি ফিরছে। বেশ কয়েক মাস ধরে নেতিবাচক অবস্থা থেকে এখন ভালোর দিকে যাচ্ছে। এটা ভালো খবর। তিনি বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও শ্রমিক অসন্তোষের কারণে চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে অর্ডারের অনেক পণ্য পাঠানো যায়নি। সেগুলো এখন পাঠানো হয়েছে। রপ্তানি বৃদ্ধির পেছনে এটি অন্যতম একটি কারণ।

মোহাম্মদ হাতেম বলেন, নতুন নতুন অর্ডার আসছে। কিন্তু কম দামে পণ্য নিতে চাচ্ছে। শ্রমিক অসন্তোষ ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছে কিছু ক্রেতা। তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি বিশ্বনেতারা বিশেষ করে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন এবং কারখানায় গ্যাস সরবরাহ কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় আমরা ভালো অবস্থায় আছি। গ্যাস সরবরাহ আরও বাড়লে আমাদের রপ্তানি আরও বাড়বে, বলেন তিনি।

তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল আমাদের সময়কে বলেন, গেল কয়েক মাস পরে রপ্তানি বেড়েছে এটা ভালো খবর। রপ্তানির এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারলে উদ্যোক্তাদের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার জোগাবে। তারা বিনিয়োগে আগ্রহী হবেন। উদ্যোক্তাদের মধ্যে ধীরে ধীরে ভীতি কাটছে। পরিবেশ ভালো হলে বিনিয়োগ ও রপ্তানি আরও বাড়বে। তিনি বলেন, সবার আগে কারখানায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা দরকার। পাশাপাশি গ্যাস, বিদ্যুৎ অবকাঠামোরও উন্নয়ন দরকার।

Comment here