হারুন-অর-রশিদ : করোনার সংক্রমণ এড়াতে ঘোষিত সাধারণ ছুটির মধ্যে সীমিত আকারে খোলা রয়েছে ব্যাংকগুলো। প্রথমদিকে ব্যাংকের শাখা খোলা রাখার নির্দেশ দিলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন অনেকেই। এরই মধ্যে সাধারণ ছুটির মধ্যে ১০ দিন অফিস করলে প্রণোদনা বাবদ অতিরিক্ত এক মাসের বেতন দেওয়ার আদেশ জারি করা হয়।
এ ছাড়া অফিসে কেউ আক্রান্ত হলে ৫ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের ঘোষণা দেওয়া হয়। এই দুই সার্কুলারের পর থেকেই ব্যাংকগুলোয় কর্মকর্তাদের ভিড় বেড়েছে। এ ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়টি মাথায় রাখছেন না কেউ। কর্মকর্তাদের অতিরিক্ত ভিড় সামলাতে হিমশিম খাওয়া ব্যাংকগুলো নতুন নির্দেশনা জারি করেছে। প্রণোদনা চালুর পর নিজ উদ্যোগে ব্যাংকে আসা কর্মকর্তারা প্রণোদনা পাবেন না। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, করোনার সংক্রমণ এড়াতে ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। কিন্তু ছুটিকালীন নগদ জমা ও উত্তোলন, রেমিট্যান্স পরিশোধ ও বৈদেশিক লেনদেনের জন্য সীমিত আকারে ব্যাংক খোলা রাখা হয়। প্রথমে ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত লেনদেন চালু করা হলেও বর্তমানে বাড়িয়ে ২টা করা হয়েছে। প্রথমদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংক খোলার নির্দেশের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং গণমাধ্যমের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করেন কর্মকর্তরা। ব্যাংকারদের বিভিন্ন সংগঠন চাপ সৃষ্টি করে।
১২ এপ্রিল সার্কুলার জারি করে মাসে মাত্র ১০ দিন অফিস করলেই এক মাসের বেসিক বেতনের সমপরিমাণ বোনাস দেওয়ার নিয়ম চালু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে কমপক্ষে ৩০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত বোনাস পাবেন কর্মকর্তারা। ১৫ এপ্রিল আরেকটি সার্কুলারে বলা হয়, অফিস এসে কেউ আক্রান্ত হলে ৫ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা স্বাস্থ্য বীমা পাবেন। কেউ মারা গেলে ক্ষতিপূরণ এর ৫ গুণ। এর পর থেকে ব্যাংক খোলা রাখার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ বন্ধ করে ব্যাংকের আসার পরিমাণ বাড়তে থাকে।
বিপুল পরিমাণ কর্মকর্তার উপস্থিতি বন্ধ করতে অগ্রণী ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগের অফিস আদেশে বলা হয়, ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনায় সামাজিক দূরত্ব মেনে রোস্টারিংয়ের মাধ্যমে উপস্থিত থাকার নির্দেশনা থাকলেও প্রণোদনা ঘোষণার পর ব্যাংকের নির্দেশনা উপেক্ষা করে বিপুলসংখ্যক নির্বাহী পর্যায়ের কর্মকর্তা, অন্য কর্মকর্তা ও কর্মচারী ব্যাংকে আসছেন। এতে ব্যাংকে সামাজিক দূরত্ব বজায রাখায় সম্ভব হয়নি। কর্মকর্তাদের এ আচরণে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। তাই ৮ এপ্রিলের আগে যারা রোস্টারিং মেনে অফিস করেছেন তারা প্রণোদনা প্রাপ্য হবেন। এ ছাড়া শাখাপ্রধানের লিখিত নির্দেশনায় যারা অফিস করেছেন তারাও এ প্রণোদনা পাবেন। এর বাইরে নিজ ইচ্ছায় অফিসে এলে কেউ প্রণোদনা পাবেন না।
সংশ্লিষ্টরা জানান, শুধু অগ্রণী নয়, প্রণোদনা চালুর পর অন্য সব ব্যাংকের শাখাগুলোয় কর্মকর্তাদের ব্যাপকহারে আগমন বাড়ে। বিশেষ করে ডিজিএম, এজিএম লেভেলের প্রায় সবাই অফিস করা শুরু করেন। শাখা পর্যায়ে হাতে লেখা হাজিরা খাতায় অনেকে একদিন এসেই বাকি দিনের স্বাক্ষর করে রেখেছেন। এখন ব্যাংকে উপস্থিতি দেখিয়ে প্রণোদনার অর্থ চেয়ে প্রধান কার্যালয়ে পাঠিয়েছে শাখাগুলো।
অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শামস উল ইসলাম বলেন, সীমিত আকারে ব্যাংক চালু রাখতে একটি নীতিমালা করা হয়েছে। এ নীতিমালার আওতায় যেসব কর্মকর্তার অফিসে আসার জন্য বলা হয়েছিল শুধু তারাই প্রণোদনা পাবেন। বাকিরা পাবেন না। আমরা নীতিমালার আওতায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রণোদনা দেব।
এদিকে শাখা পর্যায় থেকে কর্মকর্তাদের প্রণোদনা দেওয়ার প্রস্তাব বাস্তবতা বিবর্জিত বলে গ্রহণ করেনি এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। ব্যাংকটির মানবসম্পদ বিভাগ থেকে জারি করা সার্কুলারে বলা হয়, শাখা পর্যায়ে একজন ম্যানেজারসহ ৯ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে দিয়ে সীমিত ব্যাংকিং চালু রাখা সম্ভব। কিন্তু কোনো কোনো শাখা প্রয়োজনের অতিরিক্ত লোকবল নিয়োগ করে ২৯ মার্চ থেকে ২৭ এপ্রিল সময়ের বিশেষ প্রণোদনা দাবি করেছে, যা গ্রহণযোগ্য নয়। তাই বাস্তবতার নিরিখে আবার প্রস্তাব পাঠাতে হবে। প্রয়োজনের অতিরিক্ত লোকবলের প্রণোদনার প্রস্তাব বিবেচিত হবে না। অতিরিক্ত লোকবল হলে প্রস্তাব পাঠানোর আগে প্রধান কার্যালয়ের অনুমতি নিতে হবে।
এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের এমডি সৈয়দ হাবীব হাসনাত বলেন, করোনার পরিস্থিতি আমাদের জন্য অচেনা মহামারী। প্রথমে অনেকেই হতবিহ্বল হয়ে বাসায় ছিলেন। পরে শাখা বা অফিসের পাশে যাদের বাসা তারা অনেকেই ব্যাংকে এসেছেন। সবাই প্রণোদনা নেওয়ার জন্য অফিস করছেন এটি আমি মনে করি না। কাজের জন্যই অফিস করেছেন। তবে যাচাই-বাছাই করে আমরা প্রণোদনা দেব।
এ বিষয়ে ব্যাংকারদের সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেন, এটি নৈতিকতার বিষয়। আমরা লক্ষ করছি বিনা প্রয়োজনে অনেকে ব্যাংকে আসছেন। কর্মকর্তাদের এ ধরনের আচরণ কাম্য নয়।
Comment here