প্রাথমিকে স্নাতক, কলেজ কমিটির সভাপতির যোগ্যতা উচ্চ মাধ্যমিক - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

প্রাথমিকে স্নাতক, কলেজ কমিটির সভাপতির যোগ্যতা উচ্চ মাধ্যমিক

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হতে শিক্ষাগত যোগ্যতা লাগে ন্যূনতম স্নাতক। অথচ এর উপরের স্তর মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজগুলোর পরিচালনা কমিটির সভাপতি হতে ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা লাগবে ‘উচ্চ মাধ্যমিক পাস’। এমনটা নির্ধারণ করতে যাচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে স্কুল-কলেজের পরিচালনা কমিটিতে দাতা সদস্য হলেও কেউই পর পর দুই বারের বেশি সভাপতি হতে পারবেন না বলেও বিধান করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রাথমিকের চেয়ে ওপরের স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালনা কমিটির সভাপতির শিক্ষাগত যোগ্যতা যেখানে বেশি হওয়ার কথা, সেখানে যোগ্যতা কমিয়ে ‘উচ্চ মাধ্যমিক’ নির্ধারণ করা বিস্ময়কর ও বেমানান। এ ছাড়া শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও দাতা সদস্যরা দুই বারের বেশি সভাপতি হতে না পারা হবে তাদের যোগ্যতা ও অবদানকে অসম্মান করা।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের স্কুল-কলেজের পরিচালনা কমিটি সংক্রান্ত সংশোধিত খসড়া নীতিমালায় এই বিধান করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। এতে বলা হয়েছে, মাধ্যমিক স্কুল-কলেজের পরিচালনা কমিটিতে দাতা সদস্যরা আগের ন্যায় থাকতে পারবেন। তবে সভাপতি পদে দুই বারের বেশি কেউ থাকতে পারবেন না। এই বিধান রেখে সংশোধন করা হচ্ছে বিদ্যমান ‘গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটি প্রবিধানমালা-২০০৯’।

জানা গেছে, এতদিন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজগুলোর সভাপতি ও সদস্যদের ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ করা ছিল না। ফলে দেশের অনেক স্থানে ‘স্বশিক্ষিত’ লোকজনও সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। এখন ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ করে দিতে প্রবিধানমালা বদলের উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ।

সংশোধিত প্রবিধানমালার নাম দেওয়া হচ্ছে ‘মাধ্যমিক স্তরের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটি প্রবিধানমালা-২০২৪’। শিগগির নীতিমালাটির গেজেট জারি হবে। প্রসঙ্গত, বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটিকে স্কুল ম্যানেজিং কমিটি (এসএমসি) এবং কলেজের পরিচালনা পর্ষদকে বলা হয় গভর্নিং বডি।

শিক্ষাসংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে শৃঙ্খলা, শিক্ষার মানোন্নয়নে পরিচালনা বা ব্যবস্থাপনা কমিটির ভূমিকা বিভিন্ন কারণে প্রশ্নবিদ্ধ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় রাজনীতিকরা সম্পৃক্ত থাকেন বলে তাদের দ্বারা একটি প্রতিষ্ঠান সুন্দর ও সুশৃঙ্খল এবং এর শিক্ষার মানোন্নয়ন হওয়ার কথা। কিন্তু যেসব কমিটি হচ্ছে, তাদের অধিকাংশই শিক্ষার উন্নয়নের চেয়ে নিজেদের উন্নয়নে বেশি ব্যস্ত। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার আড়ালে বেশির ভাগ কমিটিই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রভাব বিস্তার, স্বজনপ্রীতি, দলীয় প্রীতি, ভর্তি বাণিজ্য, নিয়োগ বাণিজ্য, কেনাকাটায় অর্থ আত্মসাৎসহ নানাবিধ মুনাফায় জড়িয়ে পড়েন।

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটি গঠনের অনুমোদন দিয়ে থাকে শিক্ষা বোর্ডগুলো। এ প্রসঙ্গে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটি প্রবিধানমালা সংশোধন সংক্রান্ত সভাগুলোতে উপস্থিত থাকা আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির প্রধান ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার গতকাল বুধবার আমাদের সময়কে বলেন, সভায় অনেকগুলো বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছিল। তবে এতটুকু মনে আছে, দীর্ঘদিন ধরে আলোচনার পর বেসরকারি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটির সভাপতি হওয়ার জন্য ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা ‘উচ্চ মাধ্যমিক’ নির্ধারণ করা। একই সঙ্গে এক ব্যক্তি পরপর দুবারের বেশি সভাপতি হতে পারবেন না।

তবে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেসব দাতা সদস্য সভাপতি হিসেবে আছেন এবং একাধিকবার তাদের কমিটির প্রধান নির্বাচন করা হয়েছেÑ এদের ক্ষেত্রে কোনো ব্যতিক্রম হবে কিনা? এ প্রশ্নের জবাবে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির প্রধান জানান, সভাপতি দুই বারের বেশি নয়। তবে যারা দাতা সদস্য হিসেবে কমিটিতে আছেন, তারা থাকবেন। এখনো আগের নিয়মেই দাতা সদস্য হিসেবে কমিটিতে থাকতে পারবেন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১৯ সালের নভেম্বরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি হতে স্নাতক পাস লাগবে বলে নীতিমালা জারি করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এতে করে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে অনেকাংশে শৃঙ্খলা ফিরে আসে। এর পর মাধ্যমিকেও সভাপতির শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক নির্ধারণের দাবি ওঠে বিভিন্ন মহল থেকে। অবশেষে সব শিক্ষা বোর্ড, প্রশাসনের কর্মকর্তা ও শিক্ষাবিদদের পরামর্শে এই মানদণ্ড আপাতত এইচএসসি পাস নির্ধারণ করা হয়।

এ প্রসঙ্গে শিক্ষাবিদ ইমেরিটাস প্রফেসর সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী আমাদের সময়কে বলেন, কমিটি বদলিয়ে কিছু হবে না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার আড়ালে বর্তমানে কমিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রভাব বিস্তার, স্বজনপ্রীতি, দলীয় প্রীতি, ভর্তি বাণিজ্য, নিয়োগ বাণিজ্য, কেনাকাটায় অর্থ আত্মসাৎসহ নানাবিধ মুনাফায় জড়িয়ে পড়েন। আসলে, সমাজটাকে বদলাতে হবে। সমাজে যেটা হচ্ছে, শিক্ষিত লোকেরা বেশি দুর্নীতি করে। একজন উচ্চশিক্ষিত উপাচার্যের বিরুদ্ধেও দুর্নীতির খবর প্রকাশ হচ্ছে। সমস্যা সমাজের সর্বত্র স্বচ্ছতা, জবাবদিহি এবং নৈতিক মূল্যবোধহীনতায় কলুষিত করা হচ্ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কমিটিতে যোগ্য সৎ লোকদের সম্পৃক্তির বিষয়টিতে সরকারের নজর দিতে হবে।

Comment here