ফেঁসে যাচ্ছেন ইলিয়াস কাঞ্চন - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
বিনোদন

ফেঁসে যাচ্ছেন ইলিয়াস কাঞ্চন

অস্ত্র-গুলি নিয়ে চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের বিমানবন্দরের স্ক্যানিং মেশিন পার হওয়ার ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদন দাখিল করেছে। সিভিল এভিয়েশন (সিএবি) চেয়ারম্যানের দপ্তরে দাখিল এ প্রতিবেদনে নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের বিরুদ্ধে আনা হয়েছে আইন ভঙ্গের অভিযোগ।

পাশাপাশি শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রী তল্লাশির ক্ষেত্রে বেশ কিছু অব্যবস্থাপনার চিত্র তুলে ধরে ১৩ দফা সুপারিশ দেওয়া হয়েছে। গত ৫ মার্চ ঢাকা থেকে বিমানযোগে চট্টগ্রামে যান নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)-এর চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন।

তবে পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই একটি নাইন এমএম পিস্তল ও ১০ রাউন্ড গুলি নিয়ে তিনি শাহজালালের অভ্যন্তরীণ টার্মিনালে প্রবেশ করেন। পরে নভো এয়ারের বুকিং কাউন্টারে গিয়ে চিত্রনায়ক জানান, তার সঙ্গে পিস্তল ও গুলি আছে; যা অভ্যন্তরীণ টার্মিনালের প্রথম গেটের স্ক্যানারে ধরা পড়েনি। পাশাপাশি এ ঘটনায় নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন।

তবে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) দাবি, প্রথম স্ক্যানের সময় অস্ত্র থাকার কথা বলেননি ইলিয়াস কাঞ্চন। দ্বিতীয় স্ক্যানের আগেও জানাননি। স্ক্যানের সময় অস্ত্রটি মেশিনে ধরা পড়ার পরই তা স্বীকার করেন। যদিও এ ঘটনায় ইলিয়াস কাঞ্চনকে গ্রেপ্তার না করে পিস্তল বহনের নিয়মগুলো ব্রিফ করে অস্ত্র-গুলিসহ যেতে দেওয়া হয়।

ওই ঘটনার কিছুদিন আগে অর্থাৎ ১৪ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামে ‘বিমান ছিনতাই’ চেষ্টার আগে খেলনা পিস্তল সঙ্গে নিয়ে যুবকের বিমানবন্দর পারের ঘটনায় আলোড়ন সৃষ্টি হয়। সেটির রেশ কাটতে না কাটতেই বিনা বাধায় অস্ত্র-গুলি নিয়ে একজন ভিআইপির স্ক্যানিং মেশিন পার হওয়ার বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশ পেলে শুরু হয় তোলপাড়। এর পর সিএবির পক্ষ থেকে সংস্থাটির নিরাপত্তা কনসালটেন্স অবসরপ্রাপ্ত উইং কমান্ডার সাইদুর রহমানকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, গত ৫ মার্চ ইলিয়াস কাঞ্চন একটি আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে শাহজালাল বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ টার্মিনালের হেভি ল্যাগেজ গেট দিয়ে প্রবেশ করেন। সেটির দায়িত্বে থাকা স্ক্যানার এএসজি মো. ফজলার রহমান তার ব্যাগে থাকা অস্ত্র শনাক্ত করতে ব্যর্থ হন।

পরবর্তীতে প্রি-বোর্ডিং চেকিংয়ের স্ক্যানিং মেশিনের দায়িত্বে থাকা স্ক্যানার এলএসি মো. হেমায়েত উল্লাহ সুজন (অ্যাভসেক) আগ্নেয়াস্ত্রটি শনাক্ত করেন। তবে সিকিউরিটি পোস্ট ইনস্ট্রাকশন (এসপিআই) অনুযায়ী, দায়িত্ব হস্তান্তর ও গ্রহণ প্রক্রিয়া যথাযথভাবে অনুসরণ করা হয়নি। প্রথম পর্যায়ে যাত্রী ইলিয়াস কাঞ্চন স্ক্যানিং চেক পয়েন্ট অতিক্রমকালে মোবাইলে কথা বলা অবস্থায় ওই নিরাপত্তা বেষ্টনী অতিক্রম করেন, যা নিরাপত্তার পরিপন্থী। রাষ্ট্রীয় বিধি-বিধান অনুযায়ী, কোনো যাত্রীর সঙ্গে আগ্নেয়াস্ত্র থাকলে তা বিমানবন্দরের স্ক্যানিং চেক পয়েন্টে প্রবেশ করার আগেই ঘোষণা দিতে হয়। কিন্তু ইলিয়াস কাঞ্চন তার ব্যাগে অস্ত্র বহনের বিষয়টি আগে ঘোষণা দেননি।

যখন ডমেস্টিক প্রি-বোডিং চেকিং মেশিনে শনাক্ত করা হয়, তখনই তিনি তার ব্যাগে অস্ত্র রয়েছে বলে জানান। এতে তিনি অস্ত্র ব্যবহারকারী হিসেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আগ্নেয়াস্ত্র লাইসেন্স প্রদান, নবায়ন ও ব্যবহার বিধিমালা-২০১৬ বিধি-বিধান অনুসরণ করেননি। প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, বিমানবন্দরে পর্যাপ্ত পরিমাণে যোগ্য এবং সার্টিফাইড স্ক্যানার না থাকায় বিভিন্ন সময়ে সার্টিফাইড স্ক্যানারদের দীর্ঘ সময় ধরে স্ক্যানিং করতে হয়। আর এতে হিউম্যান ফ্যাক্টরস উপেক্ষিত হয় এবং পরবর্তীতে নিরাপত্তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনে ব্যর্থ হয়।

বিমানবন্দরে নিরাপত্তা কর্তব্যে নিয়োজিত বিভিন্ন সংস্থার (বিমান বাহিনী, পুলিশ বাহিনী, সিভিল এভিয়েশন, আনসার বাহিনী এবং এপিবিএন পুলিশ) মধ্যে সমন্বয়েরও অভাব রয়েছে বলেও তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। ঘটনার দিন দায়িত্ব হস্তান্তরের ক্ষেত্রে যথাযথ পদ্ধতি অনুসরণ না করায় এএসজি মো. ফজলার রহমান ও মো. মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে এবং অস্ত্র শনাক্তের পর সেটি হস্তান্তরে যথাযথ পদ্ধতি অনুসরণ না করায় পোস্ট সুপারভাইজার সার্জেন্ট আবদুল বারীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে।

এ ছাড়া যাত্রী ইলিয়াস কাঞ্চন নভোএয়ার চেক ইন কাউন্টারে গিয়ে বোর্ডিং কার্ড নেওয়ার সময় অস্ত্র জমা না দিয়ে পরবর্তীতে দ্বিতীয়বার কাউন্টার দিয়ে তা জমা দেন। এ ক্ষেত্রে যাত্রীর কাছ থেকে কোনো প্রকার ব্যাখ্যা না চাওয়ায় নভোএয়ারের নিরাপত্তা শাখাকে দায়িত্ব সম্পর্কে আরও সচেতন হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় চিঠি দেওয়ার কথাও বলা হয়।

সেই সঙ্গে বিভিন্ন দেশে আগ্নেয়াস্ত্র বহনের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ফি প্রদানের প্রচলন করতে এয়ারলাইন্সগুলোর প্রতি সুপারিশ করা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে। এ বিষয়ে বেবিচকের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম নাঈম হাসান আমাদের সময়কে বলেন, ‘তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেয়েছি। সেটি দেখে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তবে চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন দেশের বাইরে থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

Comment here