বন্যার সঙ্গে যমুনায় ভাঙন, দিশেহারা পাড়ের বাসিন্দারা - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

বন্যার সঙ্গে যমুনায় ভাঙন, দিশেহারা পাড়ের বাসিন্দারা

নিজস্ব প্রতিবেদক,বগুড়া : বগুড়ার সারিয়াকান্দি ও সোনাতলায় যমুনায় পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দেখা দিয়েছে তীব্র নদীভাঙন। নদীভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছে যমুনার চরের মানুষ। গত শুক্রবার বগুড়া সারিয়াকান্দিতে যমুনার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। আজ মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত যমুনার পানি বিপৎসীমার ৬০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। ফলে যমুনার প্রবল স্রোতে ভাঙন দেখা দিয়েছে।

উপজেলার চালুয়াবাড়ি এবং বোহাইল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) প্রায় ৩০০ বাড়িঘর বিলীন হয়েছে। এসব বাড়িঘর নিয়ে বিপাকে রয়েছেন ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষ। তারা এখন তাদের বাড়িঘর সরিয়ে নিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। ভাঙা বাড়িঘর গৃহপালিত পশু এবং পরিজনদের নিয়ে নৌকা বোঝাই দিয়ে চলে যাচ্ছেন অন্যত্র। যাদের নিজেদের জায়গা জমি নেই তারা বাড়িঘর ভেঙে নিয়ে উঠছেন অন্যের বাড়ির উঠানে। বর্তমানে তারা নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য বেড়ি বাধে ছুটে আসছেন।

অপরদিকে বাঙ্গালী নদীতে পানি বৃদ্ধির ফলে উপজেলার হাটশেরপুর ইউনিয়নের ভেড়ামাড়া, নিজ বরুরবাড়ী, নারচী ইউনিয়নের গোদাগাড়ী, সারিয়াকান্দি সদর ইউনিয়নের পাইকপাড়া, গোসাইবাড়ি, ফুলবাড়ী ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর, ডেমান্দি ও কুতুবপুর ইউনিয়নের মাছিরপাড়া এলাকায় নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে।

নদী ভাঙনে ফসলি জমিসহ সদর ইউনিয়নের পাইকপাড়া-গোসাইবাড়ি সড়ক এবং হাটশেরপুর ইউনিয়নের নিজ বরুরবাড়ি  গ্রামীণ সড়ক নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছেন। এদিকে সোনাতলায় যমুনা ও বাঙালি নদীতে পানি বৃদ্ধির সঙ্গে নদীভাঙন শুরু হয়েছে। ফলে চরাঞ্চলে বসবাসকারী লোকজন বাড়িঘর নিরাপদে স্থানে সরিয়ে নিচ্ছেন। উপজেলার তেকানীচুকাইনগর ইউনিয়নের খাবুলিয়া, সরলিয়া, জন্তিয়ারপাড়া, মহব্বতেরপাড়া, ভিকনেরপাড়া এলাকায় প্রায় দেড় শতাধিক ঘরবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যেতে দেখা যায়।

গতকাল সোমবার সকালে উপজেলার চালুয়াবাড়ি ইউপির সুজাতপুর গ্রামে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, যমুনা পাড়ের মানুষরা তাদের বাড়িঘর সরিয়ে নেওযার কাজ করছেন। কেউ সিমেন্টের খাম তুলছেন, কেউ টিন খুলছেন, আবার দলবদ্ধভাবে কয়েকজন ঘরের টিনের চালা তুলছেন নৌকায়। অনেকদিন ধরেই সুজাতপুর বাওলাপাড়ায় ছিলেন ঝরনা বেগম। এখানে তার এক ছেলে এক মেয়ে বড় হয়েছে।

কয়েকবার নদী ভাঙার পর এখানে তিনি বাড়ি করেছিলেন ৫ বছর আগে। সেই জায়গাটুকুও কেড়ে নিল যমুনা। তিনি এখন অন্যত্র আশ্রয় নেওয়ার জন্য নৌকায় ঘরবাড়িসহ তার সংসারের সবকিছু তুলেছেন। যাচ্ছেন নতুন ঠিকানায়। এ গ্রাম থেকে ছেড়ে যাওয়ার সময় তিনি তার স্বজনদের সঙ্গে উচ্চস্বরে আহাজারি করছিলেন।

চালুয়াবাড়ী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শওকত আলী জানান, এ ইউনিয়নে প্রায় ২৫০ বাড়িঘর নদীভাঙনের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে মানিকদাইড় গ্রামের ১৫০ এবং সুজাতপুর গ্রামের ১০০টি ঘর।

বোহাইল ইউপির চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান খাঁন বলেন, গত দুই দিনে আমার ইউনিয়নের বোহাইল এবং কাজলা গ্রামের ৪৬টি বাড়িঘর যমুনায় বিলিন হয়েছে। যে হারে নদী ভাঙতে শুরু করেছে তাতে কয়েক দিনে কয়েক শ বাড়িঘর ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে।

সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘নদীভাঙন ঠেকাতে জরুরি ভিত্তিতে চালুয়াবাড়ী ইউপির মানিকদাইড় গ্রামে জিও ব্যাগ ফেলানো হবে। বন্যার্তদের সহযোগিতায় কাল-পরশুর মধ্যে শুকনা খাবার বিতরণ করা হবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান বলেন, চরাঞ্চলে ভাঙন ঠেকাতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। ইতোমধ্যেই জরুরি ভিত্তিতে কিছু কাজ শুরা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

 

Comment here