নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে (২১) পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় এখন পর্যন্ত ছয়জনকে আটক করেছে পুলিশ। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার আবদুল বাতেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আজ আজ সোমবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শের-ই বাংলা হলে গিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ তথ্য জানান আবদুল বাতেন। তিনি বলেন, এই ঘটনায় সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতেই ছয়জনকে আটক করা হয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে বিবৃতি দেওয়া হবে।
আবরার হত্যায় এখন পর্যন্ত আটক চারজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এবং মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী অনিক সরকার, ক্রীড়া সম্পাদক ও নেভাল আর্কিটেকচার অ্যান্ড মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফুয়াদ হোসেন। তারা শের-ই-বাংলা হলে থাকেন।
সকালে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুইজনকে আটক করে চকবাজার থানা পুলিশ। এর আগে গতকাল রোববার দিবাগত রাত ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শেরে বাংলা হলের নিচতলা থেকে আবরার ফাহাদের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরিবার ও সহপাঠীদের দাবি, তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
এদিকে ফাহাদ যে কক্ষে পিটুনির শিকার হন, সেখানকার শিক্ষার্থীরা ঘটনার পর থেকেই পলাতক রয়েছেন। হলের কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, ওই কক্ষে চার শিক্ষার্থী থাকেন। এর মধ্যে তিনজন পলাতক রয়েছেন। তারা হলেন-বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আইনবিষয়ক উপসম্পাদক ও সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র অমিত সাহা, উপদপ্তর সম্পাদক ও কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র মুজতাবা রাফিদ, সমাজসেবাবিষয়ক উপসম্পাদক ও বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র ইফতি মোশারফ ওরফে সকাল। আরেকজন চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থী। তিনি দুর্গাপূজার ছুটিতে দুই দিন আগে গ্রামের বাড়িতে গেছেন।
হলের শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, বুয়েটের শেরে বাংলা হলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেলের অনুসারী একদল নেতাকর্মী তাকে পিটিয়ে হত্যা করেছেন।
হল শাখা ছাত্রলীগ সূত্রে জানা গেছে, আবরারকে জেরা ও পেটানোর সময় ওই কক্ষে অমিত সাহা, মুজতাবা রাফিদ, ইফতি মোশারফ ওরফে সকালসহ তৃতীয় বর্ষের আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী ছিলেন। ওই কক্ষে এসে দ্বিতীয় দফায় আবরারকে পেটান বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এবং মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী অনিক সরকার, ক্রীড়া সম্পাদক ও নেভাল আর্কিটেকচার অ্যান্ড মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের একই বর্ষের মেফতাহুল ইসলাম জিয়নসহ কয়েকজন৷ তারা সবাই মেহেদী হাসান রাসেলের অনুসারী।
চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহরাব হোসেন জানান, বুয়েটের ছাত্র নিহতের ঘটনায় প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রাসেল ও ফুয়াদ নামে দুজনকে আটক করা হয়েছে। এ বিষয়ে এখনো কোনো মামলা হয়নি। মামলা দায়েরের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।
তবে আটক দুজন মারধরের সময় অংশ নিয়েছিল কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, ‘বিষয়টি নিশ্চিত না। তবে তদন্তের পর বলা যাবে।’
আবরার ফাহাদ ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। কুষ্টিয়ার পিটিআই সড়কে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফের বাসার পাশেই তাদের বাড়ি।
নিহতের সহপাঠীরা বলছেন, গতকাল রাত ৮টার দিকে শেরে বাংলা হলের ১ হাজার ১১ নম্বর কক্ষ থেকে কয়েকজন আবরারকে ডেকে নিয়ে যায়। এরপর রাত ২টা পর্যন্ত তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাদের ধারণা, ২ হাজার ১১ নম্বর রুমে নিয়ে তাকে পেটানো হয়। পরে শেরে বাংলা হলের একতলা ও দুই তলার মাঝখানের সিঁড়ির ল্যান্ডিংয়ে আবরারকে পড়ে থাকতে দেখেন তারা।
Comment here