জয়ন্ত সাহা যতন : আব্দুল জব্বার বয়স সত্তর ছুঁইছুঁই। তার চার ছেলের কেউ খোঁজ রাখেন না।শেষ বয়সেও অন্যর জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করেন তিনি। স্ত্রী জয়গুন বেগমকে নিয়ে কোনো রকম সংসার চলে যায়। কখনো কল্পনা করেননি বৃদ্ধ বয়সে স্ত্রীকে নিয়ে পাকা ঘরে শুয়ে বাকি সময় পার করবেন তিনি। ইচ্ছে থাকলেও অভাবের কারণে তা সম্ভব হয়নি। কিন্তু যৌবনের সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে আজ।
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সর্বানন্দ ইউনিয়নের রামভদ্র (খানাবাড়ি) গ্রামের মৃত আব্দুল গনি মিয়ার ছেলে আব্দুল জব্বার এ বছর দুর্যোগ সহনীয় ঘর পেয়েছেন। শেষ বয়সে পাকা ঘরে মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়ে খুশি তিনি। সরকারি ঘরে স্ত্রীকে নিয়ে নিশ্চিন্তে বাকি সময়টা পার করবেন। নিজের পাকা ঘর পেয়ে আনন্দিত তার স্ত্রী জয়গুনও।
শুধু জব্বার-জয়গুন দম্পতি নয়, এ বছর উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার অসহায় ও দুস্থ ৪৩টি পরিবারকে দুর্যোগ সহনীয় ঘর নির্মাণ করে দিয়েছে সরকার। আর সরকারের দেয়া এসব ঘর পেয়ে স্বপ্নের মতো ভাবছেন সবাই। সুবিধাভোগীরা বলছেন, ভিটে ছিল কিন্তু মাথার ওপর কোনো চাল ছিল না। বৃষ্টিতে ভিজেছেন, রোদে শুকিয়েছেন তারা। মানুষ হয়েও পশু-পাখির চেয়ে খারাপ অবস্থায় দিন কাটালেও দেখার মতো কেউ ছিল না।
জানা গেছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের অধীনে দুর্যোগ সহনীয় গৃহনির্মাণ প্রকল্পের আওতায় এ উপজেলায় ৪৩টি দরিদ্র পরিবারকে দুর্যোগ সহনীয় ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়। প্রতিটি ঘর দুইকক্ষ বিশিষ্ট, ২০ ফুট লম্বা ও প্রশস্ত ১০ ফুট। চারপাশে ইটের দেয়াল, উপরে টিনের ছাউনি। ছাউনিতে মেহগনি অথবা কড়াই কাঠ ব্যবহার করা হয়েছে। আর মেঝে পাকাকরণে তিন ইঞ্চি ইটের ঢালাই দেয়া হয়েছে। রান্নাঘর ও টয়লেট করা হয়েছে ১৩ফুটের। এক নম্বর ইট, ছাউনির টিন লাগানো হয়েছে পয়েন্ট ৪৬ মিলিমিটার পুরত্বের রঙিন ঢেউটিন। ঘর ও রান্নাঘরের মাঝখানে সাত ফুট করিডোর আর উপরে টিনের ছাউনি দেয়া হয়েছে। দুই লাখ ৫৮ হাজার পাঁচশ ৩১ টাকা করে ৪৩টি ঘর নির্মাণে ব্যয় হয়েছে এক কোটি ১১ লাখ ১৬ হাজার টাকা। এই গৃহনির্মাণ প্রকল্পের উপজেলা কমিটির সভাপতি হলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও সদস্য সচিব হলেন প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা পিআইও। আর প্রতিটি ঘরই একটি প্রকল্প হিসেবে ধরা হয়।
তবে, শুরু থেকেই নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠে প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে। জুন মাসে প্রকল্পের মেয়াদ পেরিয়ে গেলেও সেই মাসে অগ্রীম বিল উত্তোলন করে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা। এরপর নানা অজুহাতে দেরিতে কাজ শুরু করেন। এ নিয়ে উপজেলা হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তাকে লাঞ্ছিত ও বন্দুকের ভয় দেখানোর অভিযোগ ওঠে। এ ছাড়াও অনেকটা কাজ শেষ না করেই একযোগে সারাদেশে এসব ঘরের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
সর্বানন্দ ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মাহবুবার রহমান বলেন, সরকারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আমরা প্রকৃত সুবিধাভোগী বেছে নিয়েছি। অসহায় ও দুস্থদের মাঝে এ ঘর বিতরণ করা হয়। তবে কাজের বরাদ্দ কম থাকায় কিছু বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোলেমান আলী কালের কণ্ঠকে বলেন, আমরা সুষ্ঠুভাবে এ প্রকল্পের কাজ শেষ করেছি। প্রকৃত অসহায় ও দুস্থ মানুষের মাঝে ঘরগুলো বণ্টন করে এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছি। তিনি অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে বলেন, সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গেলে কিছুটা অভিযোগ উঠবে। তবে এগুলো অভিযোগ আমলে নিয়ে সুষ্ঠুভাবে শতভাগ কাজ বাস্তবায়ন করেছি।
Comment here