ভারত গত শনিবার বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী ‘টাঙ্গাইলের শাড়ি’ তাদের ভৌগোলিক নির্দেশক-জিআই পণ্য হিসেবে নিবন্ধন দিয়েছে। অথচ টাঙ্গাইলের শাড়ি কেবল বাংলাদেশের নিজস্ব পণ্য। এই পণ্যের নিজস্বতা ধরে রাখতে শিগগিরই ভারতের সঙ্গে আলোচনা করবে বাংলাদেশ সরকার। এক দেশের পণ্য অন্য দেশ নিজেদের বলে চালিয়ে দিতে পারে না- জানিয়েছেন বাংলাদেশের জিআই সনদ দেওয়া প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। তবে নিজেদের অবহেলার কারণে ভারত এই সুযোগটি নিয়েছে বলেও জানায় পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেড মার্কস অধিদপ্তর-ডিপিডিটি। এদিকে বিতর্কের মুখে নিজেদের ফেসবুক পেজে টাঙ্গাইল শাড়িকে পশ্চিমবঙ্গের ঐতিহ্য উল্লেখ করে দেওয়া পোস্ট সরিয়ে নিয়েছে ভারতের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়।
অন্যদিকে ভারতের এমন কা-ে বাংলাদেশে অনেকে বিস্ময় ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তাঁত সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, সময়মতো বাংলাদেশ ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্যের আবেদন না করায় এমনটি ঘটেছে। এ ছাড়া দ্রুত ভারতের জিআই বাতিল করে টাঙ্গাইলের শাড়িকে বাংলাদেশের পণ্য ঘোষণার দাবিও জানিয়েছেন তারা। এ ঘটনায় ভারতের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের অধীন প্রতিষ্ঠান বিশ্ব মেধাসম্পদ সংস্থা-ডব্লিউআইপিওতে আপত্তি জানানোর সুযোগ রয়েছে। এ জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বা সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। জানা যায়, দুইশ বছরের ঐতিহ্য টাঙ্গাইল শাড়ি বোনা হয় টাঙ্গাইল সদর উপজেলার পোড়াবাড়ি, দেলদুয়ার উপজেলার পাথরাইল ও কালিহাতীর বল্লা এলাকায়। এই পেশার সঙ্গে জেলাটির প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ যুক্ত রয়েছেন।
এদিকে দেশে ২০১৩ সালে ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (নিবন্ধন ও সুরক্ষা) আইন হয়। ২০১৫ সালে বিধিমালা তৈরির পর জিআই পণ্যের নিবন্ধন নিতে আহ্বান জানায় ডিপিডিটি। ডব্লিউআইপিও নিয়ম মেনে পণ্যের স্বীকৃতি ও সনদ দিয়ে থাকে সরকারের এ বিভাগটি। কোনো এলাকার পণ্য নিজস্বতা স্বীকৃতি (জিআই) সনদ পেতে ডিসি থেকে আবেদন করা হয় ডিপিডিটির কাছে। কিন্তু টাঙ্গাইলের শাড়ির জন্য এ পর্যন্ত কোনো আবেদন আসেনি ডিপিডিটির কাছে। এই সুযোগটাই ভারত কাছে লাগিয়েছে।
ডিপিডিটির মহাপরিচালক মো. মুনিম হাসান এখন দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। ফলে এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারছে না অধিদপ্তর। ডিপিডিটির পরিচালক আলেয়া বলেন, টাঙ্গাইল বাংলাদেশের একটি ভৌগোলিক এলাকা। ভারত কীভাবে জিআই দেয়? তারা তাদের এলাকারটা দেবে। এটা তারা দিতেই পারে না। ডিসিও আবেদন করেনি। তারা আবেদন করেছে টাঙ্গাইলের চমচম নিয়ে। সেটার জিআই দিয়েছি। দেশের অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানও আবেদন করেনি। করলে আমরা দিয়ে দিতাম।
Comment here