ভয়ঙ্কর কিশোর গ্যাং ‘ডি কোম্পানি’ - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

ভয়ঙ্কর কিশোর গ্যাং ‘ডি কোম্পানি’

টঙ্গী প্রতিনিধি : ভয়ঙ্কর কিশোর গ্যাং ডেয়ারিং কোম্পানি ‘ডি কোম্পানি’র প্রধান পৃষ্ঠপোষক রাজীব চৌধুরী বাপ্পী ওরফে লন্ডন বাপ্পীসহ ১২ জনকে গ্রেপ্তার করেছেন র‌্যাব-১ সদস্যরা। গত শনিবার রাতে রাজধানীর উত্তরা ও টঙ্গী থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, ২টি চাপাতি, ২টি রামদা, ৩টি রড ও ১টি ছুরি উদ্ধার করা হয়।

সম্প্রতি টঙ্গীর পূর্ব থানাধীন আরিচপুর এলাকায় দুটি ঘটনায় নৃশংসভাবে হামলা চালিয়েছে এই ‘ডি কোম্পানি’র সদস্যরা। এই গ্যাংয়ের উদ্দেশ্য ছিল হামলা, ভাঙচুর, মারামারি এবং নৃশংস হত্যাকা-ের মতো ঘটনা ঘটিয়ে পুরো টঙ্গী নিয়ন্ত্রণ করা। গতকাল বিকালে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে অবস্থিত র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন র‌্যাব ১-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. আব্দুল মুত্তাকিম। তিনি বলেন, এই গ্যাংয়ের গ্রেপ্তার অন্যতম আরেক সদস্য মইন আহমেদ নীরব ওরফে ডন নীরব ও রাজীব আহমেদ নীরব ওরফে টম নীরব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও মেসেঞ্জারের মাধ্যমে দুই শতাধিক কিশোরকে সক্রিয় রাখত।

গ্রেপ্তারকৃত অন্যরা হলো মো. তানভীর হোসেন ওরফে ব্যাটারি তানভীর, মো. পারভেজ ওরফে ছোট পারভেজ, মো. তুহিন ওরফে তারকাটা তুহিন, মো. সাইফুল ইসলাম শাওন, মো. রবিউল হাসান, মো. শাকিল ওরফে বাঘ শাকিল, মো. ইয়াসিন আরাফাত ওরফে বিস্কুট ইয়াছিন, মো. মাহফুজুর রহমান ফাহিম, ইয়াছিন মিয়া ওরফে ইয়াছিন।

লে. কর্নেল মো. আব্দুল মোত্তাকিম বলেন, গত ১ জুন রাত সাড়ে ৯টার দিকে ‘ডি কোম্পানি’র সদস্যরা টঙ্গীর পূর্ব থানাধীন আরিচপুর এলাকার ভূঁইয়াপাড়া জামে মসজিদের সামনে মো. তুহিন আহমেদ এবং তুষার আহমেদকে দেশি অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ও পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। এ ঘটনায় পরের দিন তুহিন আহমেদ বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের পর দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি হয়। ঘটনার পর পরই র‌্যাব তদন্ত শুরু করে এবং আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করে। তিনি আরও বলেন, গ্রেপ্তারকৃতরা মাদক সেবন, স্কুল-কলেজে বুলিং-র‌্যাগিং, ইভটিজিং, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ডাকাতি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অশ্লীল ভিডিও শেয়ারসহ নানাবিধ অবৈধ কাজের সঙ্গে জড়িত ছিল বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে।

র‌্যাব সূত্র জানায়, এই গ্রুপের প্রধান রাজীব চৌধুরী বাপ্পী এর আগেও অস্ত্রসহ র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিল। এ ছাড়াও একটি অপহরণ মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। সম্প্রতি সে জামিনে বেরিয়ে ফের বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। তার ভাই পাপ্পু ওরফে লন্ডন পাপ্পু এক সময় লন্ডনে ছিল। লন্ডন থেকে ফিরে এলাকায় মাদককারবার, মারামারি, হত্যাচেষ্টা ও বিভিন্ন অপরাধে সে এখন কারাগারে রয়েছে। জামিনে বেরিয়ে সে ফের বেপরোয়া হওয়ার পরিকল্পনা করছে। এজন্য ‘ডি কোম্পানি’ প্রতিষ্ঠা করে পুরো টঙ্গী নিয়ন্ত্রণ করার লক্ষ্য তাদের। এমনকি দুটি হত্যাকা-ের ঘটনাও ঘটনাবে বলে গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে তথ্য পাওয়া গেছে। এজন্য তার ভাই বাপ্পী অস্ত্র মজুদ রেখেছে।

ওই সূত্র আরও জানায়, ‘ডি কোম্পানি’সহ টঙ্গীতে আরও কয়েকটি কিশোর গ্যাংয়ের সন্ধান পেয়েছেন তারা। একেক গ্রুপ মারামারি, ভাঙচুরসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে লিপ্ত রয়েছে। তাদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। এই গ্রুপে আরও যারা সক্রিয় : র‌্যাব সূত্র জানায়, ‘ডি কোম্পানি’র সঙ্গে আরও দুই শতাধিক কিশোর জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে তারা। এর মধ্যে রয়েছে টঙ্গীর বনমালা রোডের জুয়েল মাহমুদ পারভেজ, টঙ্গী বাজারের সাগর, জিল্লুর, শিহাব, আমান, ছোট রিমন, তার ভাই রিফাত, জয়, মিম, মইন, জিল্লু।

এ ছাড়াও টঙ্গীর মরকুন গুদারাঘাট এলাকার আসাদ শিকদারের নেতৃত্বে কিশোর গ্যাংয়ের আরেকটি গ্রুপে রয়েছে- রাব্বি, রিফাত, রাকিব, হাবিবসহ অর্ধশতাধিক কিশোর। দত্তপাড়া হাজীমার্কেট এলাকার সজল সরকারের নেতৃত্বে রয়েছে- সাব্বির ওরফে কবিডি, আলি, শৈশব, মহসিনসহ ২০-৩০ জন। মধুমিতা ভরান এলাকায় মহিনের নেতৃত্বে রয়েছে- বিপ্লব, জয়মিম, সৈকত। গোপালপুর এলাকায় সাদ্দাম মজুমদারের নেতৃত্বে রয়েছে- কিশোর গ্যাংয়ের একটি গ্রুপ। ওই গ্রুপেও রয়েছে প্রায় ২০ থেকে ৩০ জন।

 

Comment here