নিজস্ব প্রতিবেদক : নারায়ণগঞ্জের খানপুর তল্লা এলাকার বায়তুস সালাত জামে মসজিদে একসঙ্গে ছয়টি এসির বিস্ফোরণে দগ্ধদের মধ্যে ১২ জন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। গতকাল শুক্রবার রাত সাড়ে আটটার দিকে এশার নামাজের সময় এসি বিস্ফোরণের এ ঘটনায় অর্ধ-শতাধিক মুসল্লি আহত হন।
ওই মসজিদে কেন, কীভাবে ছয়টি এসির বিস্ফোরণ ঘটল, সে বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে সুনির্দিষ্ট করে কেউ কিছু বলতে পারেননি। তবে মসজিদে গ্যাসের লাইনের লিকেজ থেকে বের হওয়া গ্যাস জমে এই দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে ধারণা করছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা।
ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর ফায়ার সার্ভিসের প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাজ্জাদ হোসাইন এমনটিই জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘মসজিদের ফ্লোরের নিচ দিয়ে একটি গ্যাসের লাইন গেছে। সেই লাইন থেকে গ্যাস লিক হয়ে বদ্ধ মসজিদের ভেতরে জমা হয়। এসি থাকায় পুরো মসজিদ বন্ধ ছিল। লিক হওয়া গ্যাস বের হতে পারেনি। তা ছাড়া এসিতেও গ্যাস থাকে। সুইচ অন বা অফ করার সময় কোথাও বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট হয়েছে। গ্যাস উপরের দিকে থাকায় এসিগুলো বিস্ফোরিত হয় বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।’
এরপরেও ঘটনা খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে জানিয়ে মো. সাজ্জাদ হোসাইন বলেন, ‘তারা পুরো বিষয়টি তদন্ত করে দেখবেন। গ্যাস যে ফ্লোর থেকে লিক হচ্ছে তার বড় প্রমাণ আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের দেওয়া পানির মধ্যে ফ্লোরে গ্যাস বুদবুদ করছে।’
ফায়ার ব্রিগেডের উপপরিচালক দেবাশীষ বর্ধন বলেন, ‘এসিতে ব্যবহৃত ফ্রেয়ন গ্যাসের অস্থিত্ব আমরা মসজিদের ভেতরে বাতাসে পেয়েছি। এর পেছনে অন্য কোনো ঘটনা আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তারপরেও আমরা সব বিষয় মাথায় রেখে সিআইডি ক্রাইম সিনের সদস্যদের ডেকেছি। তারা আলামত সংগ্রহ করছে। পাশাপাশি পুলিশ তদন্ত করে দেখছে এর পেছনে অন্য কোনো কারণ বা ঘটনা আছে কি না।’
তিনি আরও বলেন, তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ গ্যাসের লাইন বন্ধসহ প্রয়োজনীয় কাজ করেছে। মসজিদের বিদ্যুৎ লাইনও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সেখানে বাড়তি পুলিশ প্রহরা বসানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম বলেন, ‘ফায়ার ব্রিগেডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এবং ঘটনাস্থল দেখে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে, গ্যাসের কারণেই এই বিস্ফোরণ ঘটেছে।’
গতকাল রাতে মসজিদে এসি বিস্ফোরণের বর্ণনায় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিস্ফোরণের ধাক্কায় মসজিদের সবগুলো জানালার কাচ উড়ে গেছে, কোনো কোনো জানালা ফ্রেমসহ উপড়ে গেছে দেয়াল থেকে।
মসজিদের পাশেই রিকশা গ্যারেজের মালিক রতন মিয়া বলেন, বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শুনে ছুটে এসে দেখেন মসজিদের ভেতর থেকে লোকজন হুড়োহুড়ি করে বের হচ্ছেন। অনেকের শরীরে আগুন জ্বলছে। অনেকের শরীর আগুনে ঝলসে গেছে। তারা শরীরের আগুন নেভাতে মসজিদের সামনের সড়কের ময়লা পানিতে হামাগুঁড়ি দিচ্ছেন।
এদিকে, বিস্ফোরণে বিদ্যুতের ভয়ে উপস্থিত লোকজন তাদের সামনে যেতে ভয় পাচ্ছিলেন। পরে বিদ্যুৎ বন্ধ করা হলে আশপাশের লোকজন তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
বিস্ফোরণের খবর শুনে ছুটে আসা মোশারফ হোসেন রনি বলেন, ‘এই মসজিদটি এলাকায় চামারবাড়ি মসজিদ নামে পরিচিত। আমাদের ব্ল্যাড ডোনেশন গ্রুপের কিছু ছেলে আমাকে ফোন করে জানায়, মসজিদে এসি বিস্ফোরিত হয়েছে। অনেক মানুষ দগ্ধ হয়েছে। তাড়াতড়ি ৮-১০টি রিকশা পাঠানোর জন্য বললে আমরা রিকশা পাঠাই। পরে আমরা ঘটনাস্থলে এসে দেখি বিস্ফোরণে মসজিদের এসি জ্বলে গেছে। দগ্ধদের প্রথমে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে সেখান থেকে ঢাকায় পাঠানো হয়।’
নারায়ণগঞ্জের বায়তুস সালাত জামে মসজিদে একসঙ্গে ছয়টি এসির বিস্ফোরণে দগ্ধদের মধ্যে ১২ জন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। শনিবার সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক ডা.পার্থ শঙ্কর পাল।
তিনি জানান, নারায়ণগঞ্জে এসি বিস্ফোরণে দগ্ধ হয়ে শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি হওয়া ৩৭ জনের মধ্যে ১২ জন মারা গেছে। বাকি ২৫ জন চিকিৎসাধীন রয়েছে। তাদের উপযুক্ত চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
মৃত ১২ জন হলেন- মসজিদের মুয়াজ্জিন মো. দেলোয়ার (৪৮), জুয়েল (০৭), মো. জামাল (৪০), সাব্বির (১৮), জুবায়ের (১৮), হুমায়ুন কবীর (৭০), কুদ্দুস বেপারী (৭০), মো. ইব্রাহিম (৪২), মোস্তফা কামাল (৩৪), রিফাত (১৮), জুনায়েত (২৮), (১২), রাশেদ (৩০)।
Comment here