মাঠে সেনা, ১০ দিনের ছুটি - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

মাঠে সেনা, ১০ দিনের ছুটি

নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনা ভাইরাসের কারণে ২৬ মার্চ থেকে সাপ্তাহিক ছুটিসহ ৪ এপ্রিল পর্যন্ত টানা ১০ দিন বন্ধ থাকবে দেশের সব সরকারি-বেসরকারি অফিস। তবে হাসপাতালসহ জরুরি সেবা সংস্থাগুলো খোলা থাকবে। এ সময় সীমিত আকারে গণপরিবহন চলবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যাংকিং সেবাও সীমিত আকারে দেওয়া হবে। মাঠ প্রশাসনকে সহযোগিতা করতে আজ মঙ্গলবার থেকে মাঠে নামছে সশস্ত্র বাহিনী। এ অবস্থায় সারাদেশ কার্যত লকডাউন হতে যাচ্ছে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম গতকাল সোমবার বিকালে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সরকারি ছুটি; এর সঙ্গে ২৭ ও ২৮ তারিখ সাপ্তাহিক ছুটি আছে। এর সঙ্গে ২৯ মার্চ থেকে ২ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হচ্ছে। ৩ ও ৪ এপ্রিল সাপ্তাহিক ছুটি। সে হিসাবে টানা ১০ দিন বন্ধ থাকছে সরকারি-বেসরকারি অফিস। তবে সব সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, ফার্মেসি ও কাঁচাবাজার খোলা থাকবে।

কোভিড-১৯ রোগে বিশ্বজুড়ে তিন লাখের বেশি আক্রান্ত ও ১৫ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যুর পর বাংলাদেশেও ৩৩ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। মারা গেছেন তিনজন। এই পরিস্থিতিতে ভাইরাসের ব্যাপক বিস্তার ঠেকাতে সরকার জনসাধারণকে বাসাবাড়ির বাইরে না যেতে উৎসাহিত করছে। ইতোমধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছুটি দেওয়া হয়েছে। জনসমাগমের মতো কর্মসূচিও বন্ধ হয়ে গেছে। স্বাধীনতা দিবসের কর্মসূচিও বাতিল করা হয়েছে।

এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিতের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে রবিবার। জামিন ও জরুরি বিষয় ছাড়া নিম্নআদালতের বিচারকাজ মুলতবির নির্দেশ দিয়ে সার্কুলার জারি করেছেন সুপ্রিমকোর্ট। দোকান মালিক সমিতিও বৃহস্পতিবার থেকে দোকানপাট বন্ধ রাখবে। দূরপাল্লার বাসও চলছে কম। কয়েকটি রুটের বাস চলাচল বন্ধ করার ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে।

সরকার যদিও বলছে, বৈজ্ঞানিকভাবে লকডাউন বলতে কিছু নেই। কিন্তু সাধারণ ছুটি ঘোষণার মাধ্যমে সারাদেশ কার্যত বিচ্ছিন্ন-ই থাকবে। শনিবার মাদারীপুরের শিবচরে ও রবিবার গাইবান্ধার সাদুল্যাপুরে সব কিছু বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যেই গতকাল এলো সারাদেশে সাধারণ ছুটির ঘোষণা। এদিকে গত কয়েক দিনে

রাজধানী ঢাকায় যানবাহন ও জনসাধারণের চলাফেরা বেশ সীমিত হয়ে পড়ে। অনেক বেসরকারি অফিস তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বাসা থেকে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছে। চিরচেনা ঢাকা শহরে কোলাহল নেই। রাস্তাঘাট অনেকটা ফাঁকা। ধুলাবালিসহ নানা দূষণে বিষাক্ত ঢাকার বাতাসও পরিচ্ছন্ন মনে হচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমরা বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। তিনি বন্ধের এ সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। করোনা ভাইরাস বিস্তৃত হওয়ায় সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কোনোভাবেই যেন মানুষ জরুরি বিষয় ছাড়া ঘরের বাইরে না যায়। আমরা দেখেছি, মানুষ সচেতন না হয়ে বিনোদনকেন্দ্রগুলোয় ভিড় করছেন। এ সময় যদি প্রয়োজনীয় কাজ করতে হয় অনলাইনে করতে হবে।

আনোয়ারুল বলেন, ‘সাধারণ মানুষকে গণপরিবহন পরিহার করার অনুরোধ করা হচ্ছে। ২৪ মার্চ (আজ মঙ্গলবার) সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতকরণের জন্য ও সতর্কতামূলক বিষয় হিসেবে সশস্ত্র বাহিনী জেলা প্রশাসনকে সহায়তা করার জন্য নিয়োজিত থাকবে। করোনার কারণে জেলা প্রশাসকদের আর্থিক ও খাদ্য সহায়তা দেওয়ার কথা বলা হয়। এ কাজটি করবে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়। তিনি আরও বলেন, নিম্নআয়ের ব্যক্তিদের সহায়তা করবে সরকার। যদি তাদের কেউ আক্রান্ত হন, তা হলে ‘ঘরে ফেরো প্রকল্পে’ ব্যবস্থা নিতে পারবে।

আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, বন্ধের সময় যদি কোনো অফিস-আদালতের প্রয়োজন হয়, তা হলে তা অনলাইনে সম্পন্ন করতে হবে। যদি কেউ জরুরি মনে করেন, তা হলে শুধু অফিস খোলা রাখতে পারবেন। জনসাধারণকে যথাসম্ভব গণপরিবহন পরিহারের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। যারা ব্যবহার করবেন, তাদের অবশ্যই করোনা ভাইরাস সংক্রমণ থেকে মুক্ত থাকতে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। গাড়িচালকদের গ্লাভস ও মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।

ছুটিকালীন বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকিং ব্যবস্থা সীমিতভাবে চালু রাখার প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবে। তিনি বলেন, জনসমাগমে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। অসুস্থ সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মসজিদে না যেতে বারবার নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। তা ভঙ্গ করে একজন মিরপুরে মসজিদে যাওয়ার জন্য অন্য ব্যক্তিও আক্রান্ত হয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমেদ কায়কাউস দেশে করোনা ভাইরাস মহামারী ঠেকাতে সরকারের নানা কার্যক্রম তুলে ধরেন।

ড. আহমেদ কায়কাউস বলেন, বৈজ্ঞানিকভাবে লকডাউন বলে কিছু নেই। দরকার সোশ্যাল ডিসট্যান্স (সামাজিক দূরত্ব)। সরকার সব সময় একে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করছে। নারায়ণগঞ্জে আক্রান্ত হয়েছেন তিনজন। বাংলাদেশ কিন্তু এটি নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছে। আমাদের ডাক্তারদের ভালো করে তোলার সামর্থ্য আছে। আতঙ্কের কিছু নেই।

তিনি আরও বলেন, এখন এমন একটি সময় এসেছে, যখন সব জাতিকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। আমাদের পুলিশ-আনসার একযোগে কাজ করে যাচ্ছে। আপনারা সাংবাদিকরাও নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। জনগণের বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠান, ২৬ মার্চের সব অনুষ্ঠানও বাতিল করা হয়েছে। জনগণের দিকে তাকিয়ে এটি করেছেন প্রধানমন্ত্রী। এ পরিস্থিতিতে সবাই সম্মিলিতভাবে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করলে সংকট মোকাবিলা করা যাবে।

সংবাদ সম্মেলনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব, তথ্যসচিব, প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, প্রধান তথ্য কর্মকর্তা (পিআইও) উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে গণপরিবহন চালু রাখার বিষয়ে স্বাস্থ্য সচিব আসাদুল ইসলাম বলেন, লকডাউন (সম্পূর্ণ) সায়েন্টিফিক নয়। গণপরিবহন চালু থাকবে, কোনোভাবেই বন্ধ করা হবে না। কেউ যদি শহরে যায় বা গ্রামে যায়, তা হলে চলাচল প্রয়োজন হতে পারে। বাড়িতে থাকার জন্য বলা হয়েছে, গণপরিবহন ব্যবহারে সতর্ক করা হচ্ছে।

বেসরকারি হাসপাতালের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আসছে কিনা জানতে চাইলে স্বাস্থ্য সচিব বলেন, কীভাবে রোগীকে প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করবেন, কোনটি নিউমোনিয়া, কোনটি জেনারেল ফ্লু, সেটি কীভাবে বাছাই করবে, আমাদের যে চিকিৎসা প্রটোকল আছে, তা শেয়ার করা হয়েছে।

সেনাবাহিনী মাঠে নামছে আজ : করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে দুর্যোগের মতো পরিস্থিতিতে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করতে নামছে সেনাবাহিনী। মঙ্গলবার থেকে বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোয় সেনাবাহিনী প্রশাসনকে সহায়তায় নিয়োজিত হবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।

সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোয় সামাজিক দূরত্ব ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুবিধার্থে প্রশাসনকে সহায়তায় নিয়োজিত হবে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের সমন্বয়ে তারা জেলা ও বিভাগীয় করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাব্যবস্থা, সন্দেহজনক ব্যক্তিদের কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থা পর্যালোচনা করবে। সেনাবাহিনী বিশেষ করে বিদেশ ফেরত ব্যক্তিদের কেউ নির্ধারিত কোয়ারেন্টিন বাধ্যতামূলক সময় পালনে ত্রুটি বা অবহেলা করছে কিনা, তা পর্যালোচনা করবে।

জেলা ম্যাজিস্ট্রেটরা এ জন্য স্থানীয় আর্মি কমান্ডারের কাছে সেনাবাহিনী কর্তৃক অবস্থা পর্যালোচনার জন্য আইনানুসারে অনুরোধ জানাবে বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

সংবাদ সম্মেলনের পর আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) থেকে জানানো হয়, ২৪ মার্চ থেকে সামাজিক দূরত্ব, সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ, সন্দেহজনক ব্যক্তিদের কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থা পর্যালোচনায় বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোয় বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তায় ‘ইন এইড’ টু সিভিল পাওয়ার’- এর আওতায় সশস্ত্র বাহিনী নিয়োজিত থাকবে।

গার্মেন্টসের ওপর বাধ্যবাধকতা নেই : তৈরি পোশাক কারখানাগুলো ছুটির বিষয়ে জানতে চাইলে মুখ্য সচিব কায়কাউস বলেন, এ ক্ষেত্রে কারখানা মালিকরাই সিদ্ধান্ত নেবেন। তিনি বলেন, আমাদের যারা হেলথ প্রফেশনাল আছে, তাদের সঙ্গেও আলাপ হয়েছিল (বিষয়টি নিয়ে)। গার্মেন্টসে যারা কাজ করে সেটি ক্লোজ মনিটরে রেখেছি প্রথম থেকে।

এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, চিকিৎসকদের বিশেষ পোশাক তৈরিতে এখন গার্মেন্টসগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে। গার্মেন্টস আমরা ব্যবহার করছি পিপিই (পারসোন্যাল প্রোটেকশন ইকুইপমেন্ট), মাস্ক তৈরি করার জন্য। এগুলো তৈরির জন্য গার্মেন্টসের লোকজন আমাদের সহায়তা করছে। সে ক্ষেত্রে কিন্তু এটি (ছুটি) বাধ্যবাধকতা করছি না।

নিম্নআয়ের মানুষের জন্য ভাসানচর : দুর্যোগের মতো এ পরিস্থিতিতে নিম্নআয়ের কোনো ব্যক্তি শহরে জীবনযাপনে অক্ষম হলে সরকার তাকে ‘ঘরে ফেরা কর্মসূচি’র অধীনে নিজ গ্রামে/ঘরে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। জেলা প্রশাসকরা এ জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন বলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান। তিনি আরও বলেন, সরকার এ লক্ষ্যে ভাসানচরে পর্যাপ্ত আবাসন ও জীবিকা নির্বাহের ব্যবস্থা করেছে।

Comment here