নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের রিজিওনাল ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেন নড়াইল সদর উপজেলার শেখাটি ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি তরিকুল ইসলাম মানিক। করোনাভাইরাসের কারণে প্রতিষ্ঠান ছুটি দেওয়ায় তিনি কয়েকদিন আগে নিজ গ্রাম শেখাটি চলে আসেন। গত বৃহস্পতিবার কাঁচাবাজার থেকে কেনাকাটা করে বাড়ি ফেরার সময় মুখে মাস্ক না থাকায় তাকে আটকে ফেলেন শেখাটি ফাঁড়ি পুলিশের দুই সদস্য। ফাঁড়িতে নিয়ে তাকে পেটানো হয় ঘণ্টাব্যাপী।
ঘটনার পর মানিক ভর্তি হন নড়াইল সদর হাসপাতালে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ শনিবার জেলা পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন তিনি। এদিকে শেখাটি ফাঁড়ি পুলিশ বলছে, মানিক তাদের সঙ্গে বেয়াদবি করেছেন। তাকে মারধর করা হয়নি। সামান্য ধাক্কাধাক্কি হয়েছে।
নড়াইল জেলা বরাবর মানিক যে অভিযোগ করেছেন-
ঘটনার দিন সকাল ৯টার দিকে তিনি কাঁচাবাজার করে বাড়ি ফেরার সময় শেখাটি বাজারে সাদা পোশাকে শেখাটি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) এনামুল ও এক কনস্টেবল তাকে ধরে ‘এখানে করোনা ছড়াতে এসেছিস?’- বলে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেন। মারতে মারতে ফাঁড়িতে নিয়ে এসআই এনামুল, এএসআই আলমগীর ও কয়েক কনস্টেবল প্রায় এক ঘণ্টা থেমে থেমে রুল দিয়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গার আঘাত করেন।
পরে ফাঁড়ির সহকারী ইনচার্জ আলমগীরসহ তিন পুলিশ মানিককে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) কাছে আনলে তিনি এলাকায় গিয়ে বিষয়টি মীমাংসার কথা বলে ছেড়ে দেন।
দুপুর ১টার দিকে মানিক সদর হাসপাতালের ইমার্জেন্সি বিভাগে চিকিৎসা করাতে গেলে এএসআই আলমগীর টের পেয়ে হাসপাতালে গিয়ে বলেন, তার চিকিৎসার প্রয়োজন নেই। এ সময় তিনি মানিকের ভাই রতনের কাছ থেকে চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন নিয়ে নেন এবং মানিককে সঙ্গে নিয়ে শেখাটি চলে যান। রাত ৮টার দিকে মানিকের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে অ্যাম্বুলেন্সে তাকে সদর হাসপাতালে এনে ভর্তি করা হয়।
হাসপাতালে গিয়ে এ ব্যাপারে কথা হলে মানিক জানান, ফাঁড়ির পুলিশ একজনের মাধ্যমে বিষয়টি তাকে টাকা দিয়ে মীমাংসা করতে প্রস্তাব দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি যেহেতু কোনো অন্যায় করেননি, তাই কোনো আপসে যাননি। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন শেখাটি ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি তরিকুল ইসলাম মানিক।
শেখাটি বাজার কমিটির সভাপতি মনিরুল ইসলাম সরদার বলেন, ‘মুখে মাস্ক না থাকার অভিযোগে প্রায় এক ঘণ্টা ধরে পুলিশ মানিকে পিটিয়েছে। আমরা বাজার কমিটির লোকজন পুলিশের হাত-পা ধরলেও তারা কথা শোনেনি।’
এ ব্যাপারে কথা হলে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি চঞ্চল শাহরিয়ার মিম জানান, শেখাটি এলাকায় ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠার মানিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। ছাত্রলীগসহ এ ঘটনার তদন্তপূর্বক দোষীদের শাস্তির দাবি করেন তিনি।
ঘটনার বিষয়াদি অস্বীকার করে অভিযুক্ত শেখাটি ফাঁড়ির ইনচার্জ এনামুল বলেন, ‘সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী আমরা ডিউটি পালন করছিলাম। তার মাস্ক পরা ছিল না। তাকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করায় সে পুলিশের সঙ্গে বেয়াদবি করে। তাকে মারা হয়নি। সামান্য ধাক্কাধাক্কি হয়েছে।’
টাকার বিনিময়ে মীমাংসার বিষয়টি অস্বীকার করে এএসআই আলমগীর বলেন, ‘মানিককে চিকিৎসা দিতে বাধা দেওয়া হয়েছে, বিষয়টি ঠিক নয়।’
নড়াইল পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, ‘বিষয়টি সম্পর্কে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। দেশের এ অবস্থায় হয়তো কিছুটা ধাক্কাধাক্কি হতে পারে। তারপরও বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।’
Comment here