নিজস্ব প্রতিবেদক : একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক শিবির নেতা রাজশাহীর বোয়ালিয়ার মো. আব্দুস সাত্তার ওরফে টিপু রাজাকার ওরফে টিপু সুলতানের ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
আজ বুধবার বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ রায় ঘোষণা করেন। এটি হচ্ছে ট্রাইব্যুনালের ৪১তম রায়।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে প্রসিকিউটর হিসেবে ছিলেন মোখলেসুর রহমান বাদল। তার সঙ্গে ছিলেন সাবিনা ইয়াসমিন খান মুন্নি। আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী গাজী এম এইচ তামিম।
এর আগে আসামি টিপু সুলতানের উপস্থিতিতে গত ১৭ অক্টোবর উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখেন আদালত। পরে রায় ঘোষণার জন্য আজকের দিন ঠিক করেন ট্রাইব্যুনাল।
গত বছরের ২৭ মার্চ এ আসামির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করা হয়। এরপর আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়। পরে একই বছরের ৮ আগস্ট তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।
অভিযোগ চূড়ান্তের পর তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান খান বলেছিলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে রাজশাহীর বোয়ালীয়ায় ১০ জনকে হত্যা, দুজনকে দীর্ঘদিন আটকে রেখে নির্যাতন, ১২ থেকে ১৩টি বাড়ির মালামাল লুট করে আগুন দেওয়ার অপরাধ উঠে এসেছে তদন্তে। এসব অপরাধে এ আসামির বিরুদ্ধে দুটি অভিযোগ আনা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের প্রথম দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও গণহত্যা চালিয়েছিল পাকিস্তানি আর্মি ও স্থানীয় রাজাকাররা। স্থানীয় সেই সব রাজাকারদের মধ্যে টিপু সুলতানই বেঁচে আছেন। তাকে আমরা গ্রেপ্তার করেছি।’
‘মুক্তিযুদ্ধের সময় আসামি জামায়াতে ইসলামী ছাত্র সংগঠন ‘ইসলামী ছাত্র সংঘ’ পরবর্তীতে ইসলামী ছাত্র শিবিরের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ১৯৮৪ সালের পর থেকে রাজনৈতিক কোনো কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি’ বলে উল্লেখ করেন আব্দুল হান্নান খান। তিনি বলেন, ‘আসামি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে পড়াশোনা করেন। ১৯৮৪ সালে নাটোরের লালপুর উপজেলার গোপালপুর ডিগ্রি কলেজে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। ২০১১ সালে অবসরে যান।’
তদন্ত সংস্থা জানায়, ১৯৮৪ সালের পর সরাসরি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত না থাকলেও আসামি জামায়াতে ইসলামীর সমর্থক। ১৯৭৪ সালের ১০ আগস্ট তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। যদিও পরবর্তী সময়ে তিনি ছাড়া পান। ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি বিস্ফোরক আইনের মামলায় মতিহার থানার পুলিশ তাকে ফের গ্রেপ্তার করে। পরবর্তীতে তাকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
আব্দুস সাত্তারের বিরুদ্ধে যে দুটি অভিযোগ আনা হয়েছে সেগুলো হলো-
১৯৭১ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর দুপুর দেড়টা থেকে পরদিন মধ্যরাত পর্যন্ত আসামি মো. আব্দুস সাত্তার ওরফে টিপু সুলতান ওরফে টিপু রাজাকার স্থানীয় অন্যান্য রাজাকার ও পাক সেনারা বোয়ালিয়া থানার সাহেব বাজারের এক নং গদিতে (বর্তমানে জিরো পয়েন্ট) হামলা চালিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা বাবর মণ্ডলকে আটক করে। পরে তাকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শামসুজ্জোহা হলে স্থাপিত সেনা ক্যাম্পে নিয়ে দিনভর নির্যাতন করার পর গুলি করে হত্যা করে মরদেহ মাটিচাপা দেয়।
১৯৭১ সালের ২ নভেম্বর রাত আনুমানিক ২টায় এ আসামি, স্থানীয় রাজাকার ও ৪০ থেকে ৫০ পাক সেনা বোয়ালিয়া থানার তালাইমারী এলাকায় হামলা চালায়। এ হামলায় আওয়ামী লীগ নেতা চাঁদ মিয়া, আজহার আলী শেখসহ ১১ জনকে আটক করে নির্যাতন চালায়। এ সময় তারা তালাইমারী এলাকার ১২ থেকে ১৩টি বাড়ি লুট করে। পরে আটক ১১ জনকে রাবির শহীদ শামসুজ্জোহা হলে স্থাপিত অস্থায়ী ক্যাম্প ও টর্চার সেলে নিয়ে গিয়ে ৪ নভেম্বর মাঝরাতে ৯ জনকে গুলি করে হত্যা করে মাটিচাপা দেয়।
Comment here