নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা এলাকার ব্যবসায়ী শাহ্ মো. তোবারক হোসেন (৭০) হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেওয়া পাঁচ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা (ডিবি) পশ্চিম বিভাগ। এর আগে নিজ ফ্ল্যাটে ‘শান্তিনিকেতন’ এ খুন হন তিনি।
আজ রোববার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) মো. আবদুল বাতেন।
তিনি বলেন, ‘গতকাল শনিবার দেশের বিভিন্ন স্থানে ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে ডিবির তেজগাঁও জোনাল টিম ও পল্লবী জোনাল টিম।’
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, মো. গোলাম রাব্বী, মো. বাবুল প্রধান ওরফে বাবু, মো. সোহেল প্রধান, মো. ইমন হোসেন ওরফে হাসান ও মো. আলামিন খন্দকার ওরফে রিহান।
এ সময় ওই পাঁচজনের কাছ থেকে দুই লাখ ৪২ হাজার টাকা ও ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ রক্তের দাগযুক্ত তিনটি চাকু, খেলনা পিস্তলের (লাইটার) দুটি কাভার, রক্তমাখা স্কচটেপ, রক্তমাখা দড়ি ও একটি শাবল উদ্ধার করে।
হত্যাকাণ্ডের কারণ সম্পর্কে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, ‘গত ২৫ ডিসেম্বর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা এলাকায় এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। নিহত তোবারকের মহাখালীতে মামা প্লাজায় কিছু দোকান আছে। বেশ কয়েক বছর আগে শাহীন ও শিহাব নামের দুজন কেয়ারটেকার তার ব্যবসা দেখাশোনা করতেন।একপর্যায়ে তার সঙ্গে দ্বন্দ্ব তৈরি হওয়ায় তিনি শাহীনকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করেন।মূলত তখন থেকেই শাহীনের মধ্যে ক্ষোভ জন্মায় কিভাবে তোবারক সাহেবকে হেনস্তা করা যায়।’
ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, ‘সোহেল নামের একজনের সঙ্গে শাহীন বিষয়টি শেয়ার করেন। একই সঙ্গে সে জানায়, তোবারক সাহেব ব্যবসার জন্য প্রচুর নগদ টাকা বাসায় রাখেন। এরপর তারা সিদ্ধান্ত নেয় ওই বাসায় ডাকাতি করে সব টাকা লুট করবে। এই কাজে তারা চাঁদপুর থেকে চারজন ও কুমিল্লা থেকে একজন লোক ভাড়া করে। এটাকে বাস্তবায়ন করার জন্য তারা ইমন নামের একজনকে তোবারক সাহেবের বাসায় কৌশলে কাজে নিয়োগের ব্যবস্থা করে।’
যেভাবে ব্যবসায়ী তোবারককে হত্যা করা হয়
ডিবি পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘ঘটনার দিনে বাসার দারোয়ান ফজরের নামাজ পড়তে গেট খুলে মসজিদে গেলে ইমন নিচে নেমে এসে উক্ত অ্যাপার্টমেন্ট ঢোকার গলির মুখ থেকে রাব্বী, বাবু, রিমন, সিহাব ও হৃদয়কে ভিকটিমের চার তলার ফ্ল্যাটে নিয়ে তার রুমে রাখে। শাহিন ও সোহেল অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়ের বাইরের রাস্তায় অবস্থান নেয়। এরপর ইমন ও অন্যরা ছুরি, স্কচটেপ ও দড়ি নিয়ে তোবারকের শয়নকক্ষে প্রবেশ করে ঘুমন্ত তোবারক হোসেন ও তার সহকারী সাইফুলকে বিছানার সঙ্গে চেপে ধরে। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে দুজনের হাত-পা দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলে, চোখে-মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে দেয় এবং ছুরি দিয়ে আঘাত করে। তোবারক হোসেন নিস্তেজ হয়ে গেলে আহত সাইফুলকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় ফেলে রেখে বাসায় থাকা শিল ও সঙ্গে নিয়ে যাওয়া শাবল দিয়ে আলমারী ভেঙে নগদ অর্থ লুট করে নিয়ে যায় তারা।’
পুরো ঘটনার পরে তারা সবাই নিহতের বাসা থেকে বের হয়ে যায়। প্রথমে তারা নর্দায় ইমন ও রিমনের মেস বাসায় গিয়ে টাকা ভাগ করে এবং পরে সবাই ঢাকার বাইরে চলে যায়। এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত দুজন পলাতক রয়েছে। পলাতক দুজনকে গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলেও জানিয়েছে ডিবি।
Comment here