লকডাউন এলাকায় নতুন ‘গাইডলাইন’ - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

লকডাউন এলাকায় নতুন ‘গাইডলাইন’

নিজস্ব প্রতিবেদক : দিনকে দিন দেশে বেড়েই চলেছে বরোনাভাইরাস সংক্রমণের মাত্রা। তাই সরকার সাধারণ ছুটি বাতিলের পর আবার নতুন করে লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। সংক্রমণের মাত্রার ওপর নির্ভর করে কিছু এলাকাকে লাল, হলুদ ও সবুজ হিসেবে চিহ্নিত করে পরিচালনার জন্য গাইডলাইন ঠিক করা হয়েছে।

জানা গেছে, লকডাউন ঘোষিত এলাকায় সাধারণত চলাচল বন্ধ থাকবে। কেবল রাতে মালবাহী যান চলতে পারবে। ওই এলাকার মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের জন্য হোম ডেলিভারি ও নির্ধারিত ভ্যানে করে কাঁচাবাজার কেনাবেচার সুযোগ থাকবে। সেখানকার অফিস-আদালত বা অন্য প্রতিষ্ঠানও সাধারণত বন্ধ থাকবে। খুব প্রয়োজনে চললেও তা হবে খুবই নিয়ন্ত্রিতভাবে। করোনাভাইরাসের পরীক্ষার জন্য থাকবে প্রয়োজনীয়সংখ্যক নমুনা সংগ্রহ বুথ। থাকবে চিকিৎসা পরামর্শের সুযোগ।

কেন্দ্রীয় একটি কমিটির অধীনে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলের নেতৃত্বে পুলিশ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও সিটি করপোরেশনের প্রতিনিধিসহ স্থানীয় মানুষকে সম্পৃক্ত করে কমিটি গঠনের মাধ্যমে লকডাউনসহ অন্যান্য বিষয় বাস্তবায়িত হবে।

এসব লাল, হলুদ ও সবুজ এলাকা কীভাবে চলবে, তা বিস্তারিতভাবে ওই গাইডলাইনে বলা হয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম গতকাল রোববার গাইডলাইন তৈরির বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ‘এখন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে এলাকা চিহ্নিত করে দেওয়া হলেই তা বাস্তবায়িত করা হবে। প্রাথমিকভাবে শুরুর জন্য ইতিমধ্যে দু-একটি জায়গা ঠিক করা হয়েছে।’

জানা গেছে, লাল, হলুদ ও সবুজ এলাকায় ভাগ করে আজ সোমবার রাত অথবা কাল মঙ্গলবার থেকে ঢাকায় শুরু হতে পারে এলাকাভিত্তিক ভিন্নমাত্রার লকডাউন। উত্তর সিটি করপোরেশনের পূর্ব রাজা বাজার এলাকাকে লাল এলাকা (রেড জোন) ঘোষণা করে এই লকডাউন শুরু হতে পারে। পর্যায়ক্রমে তা অন্য এলাকায় হবে। রাজধানীর বাইরে ইতিমধ্যে নারায়ণগঞ্জের তিনটি এলাকায় লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে।

যেভাবে চলবে জীবনযাত্রা

গাইডলাইনে বলা হয়েছে, মেয়রের সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয় ব্যবস্থা কমিটি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চিহ্নিত করা এলাকা থেকে অগ্রাধিকার ও পারিপার্শ্বিক সক্ষমতা বিবেচনা করে এলাকা বা স্থান বাছাই করে নির্ধারিত জোনে (মূলত লাল) লকডাউনসহ অন্যান্য ব্যবস্থাপনার বিষয়ে নির্দেশনা দেবে। এরপর সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলরের নেতৃত্বে করা কমিটি লকডাউন বাস্তবায়ন করবে।

সরকারের এটুআই প্রকল্পের দেওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অগ্রাধিকার ভিত্তিতে লাল, হলুদ ও সবুজ এলাকা চিহ্নিত করবে, যা প্রায় শেষ পর্যায়ে। লাল চিহ্নিত এলাকার মানুষের চলাচল নিষিদ্ধ থাকবে। এই এলাকার মানুষের করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ‘নমুনা সংগ্রহ বুথ’ স্থাপন করা হবে। আর হলুদ এলাকায় অফিস, কারখানা, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ-শিল্পে ৫০ শতাংশ কর্মী দিয়ে চালু রাখতে পারবে। এ ধরনের ক্ষেত্রে স্থানীয় আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানাকে আগেই জানিয়ে রাখতে হবে। তবে এই এলাকায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে।

থাকবেন ভ্রাম্যমাণ আদালত

লাল ও হলুদ এলাকার করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কঠোর ভূমিকা পালন করবে। আইন অমান্যকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য লাল ও হলুদ এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হবে।

লকডাউন এলাকার কোনো ব্যক্তিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য এলাকার বাইরে আসার প্রয়োজন হলে দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্যদের অনুমতি নিয়ে বাইরে আসা যাবে। কোনো রোগীকে হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হলে রোগীর পরিবারের পক্ষ থেকে ১৬২৬৩ বা চিকিৎসক ‘পুলে’ ফোন করলে কোন হাসপাতালে ভর্তি করা যেতে পারে, সে বিষয়ে সহযোগিতা করা হবে।

আর লকডাউন এলাকায় কেউ মারা গেলে আল মারকাজুল ইসলাম, আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম বা এ ধরনের কাজে নিয়োজিত সংস্থার মাধ্যমে দাফন বা সৎকার করা হবে।

নানা বিধিনিষেধ

লাল এলাকায় মানুষদের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের জন্য হোম ডেলিভারির ব্যবস্থা থাকবে। লাল ও হলুদ এলাকায় শপিং মল বন্ধ থাকবে। তবে হলুদ ও সবুজ এলাকায় মুদি দোকান খোলা থাকবে। লাল এলাকায় গণপরিবহন চলাচল করবে না। তবে কেবল রাতে মালবাহী যান চলাচল করতে পারবে।

হলুদ এলাকায় অর্ধেক যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন চলতে পারবে। একজন করে যাত্রী নিয়ে রিকশা ও অটোরিকশা চলতে পারবে। এই এলাকায় মালবাহী যানও চলবে। আর সবুজ এলাকায় যানবাহন চলতে পারবে। লাল এলাকার মসজিদে সাধারণের প্রবেশ নিষেধ থাকবে। তবে হলুদ ও সবুজ এলাকায় দূরত্ব বজায় রেখে মসিজিদে যাওয়া যাবে।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মিডিয়া সেলের প্রধান ও স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব হাবিবুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘লাল, হলুদ ও সবুজ—এই তিন ধরনের এলাকা চিহ্নিতকরণের কাজটি বিশেষজ্ঞরা করছেন। সেটি হওয়ার পরই সরকারে সিদ্ধান্তে তা কার্যকর হবে। তবে ঢাকার দু-একটি জায়গায় দু-এক দিনের মধ্যে তা চালুর চেষ্টা চলছে।’

Comment here