শাস্তির মুখে এসপিসহ শতাধিক পুলিশ সদস্য - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

শাস্তির মুখে এসপিসহ শতাধিক পুলিশ সদস্য

হাবিব রহমান :পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগবাণিজ্য রোধে এ বছর কঠোর অবস্থানে থাকার ঘোষণা দিয়েছিল পুলিশ সদর দপ্তর। সে অনুযায়ী ঘুষ লেনদেন বন্ধে ৬৪ জেলায় ৫ স্তরের নজরদারি শুরু হয়। এ প্রক্রিয়া চলমান ছিল পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়ায়।

এত কিছুর পরও পুলিশের কিছু অসাধু সদস্যসহ নিয়োগবাণিজ্যে আর্থিক লেনদেনের চেষ্টা করে। কিন্তু তাদের শেষ রক্ষা হয়নি। পুলিশ সদর দপ্তর ও জেলা পুলিশের জালে ধরা পড়ে শাস্তির মুখোমুখি হচ্ছে শতাধিক পুলিশ সদস্য ও সিভিল স্টাফ। তাদের বিরুদ্ধে স্ট্যান্ডরিলিজ, সাময়িক বরখাস্ত ও গ্রেপ্তারের মতো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

এ ছাড়া ঘুষ লেনদেনের চেষ্টাসহ নানা অভিযোগে সারাদেশে ১৮টি মামলায় ৪০ প্রতারককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে। কনস্টেবল নিয়োগ প্রক্রিয়া ঘিরে এবারই প্রথমবারের মতো এত সংখ্যক পুলিশ সদস্য ও পুলিশের বিভিন্ন কার্যালয়ে কর্মরত সিভিল স্টাফদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলো। এর আগে কখনো এ ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে দেখা যায়নি।

এ প্রক্রিয়াকে ‘নজিরবিহীন’ হিসেবে আখ্যায়িত করছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। এদিকে নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছ রাখতে ব্যাপক তৎপরতা চালিয়েছে অনেক জেলা পুলিশও। পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশনা এবং সমন্বয়ের মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছ রাখতে কাজ করেছেন তারা। পুলিশ সদর দপ্তর বলছে, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়মের বিরুদ্ধে শুরু থেকেই পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী কঠোর হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন।

নিয়োগ শুরুর আগে থেকেই আইজিপির নিজস্ব গোয়েন্দা ইউনিট পিআইও (পুলিশ ইন্টারনাল ওভারসাইট), রেঞ্জ ডিআইজির নজরদারি কমিটি, পুলিশ সদর দপ্তরের একজন পুলিশ সুপার (এসপি) ও একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের সমন্বয়ে গঠিত ৬৪টি বিশেষ টিম, মিডিয়া শাখার মনিটরিং এবং সংশ্লিষ্ট জেলায় গঠন করা কমিটি নিয়োগ বাণিজ্য রোধে তৎপর ছিল। এর ফলে নিয়োগ প্রক্রিয়ার শুরু থেকে দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরতে সক্ষম হয় পুলিশ সদর দপ্তর, যা শেষ পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।

এবারই প্রথম কোনো ধরনের তদবির ছাড়াই শুধু মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে বেশিরভাগ জেলায় নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। ঘুষ ছাড়া চাকরি পাওয়ায় অনেক জেলার প্রার্থীদের চোখে আনন্দের অশ্রু দেখা গেছে। এরই মধ্যে গত ২১ জুন টাঙ্গাইলে কনস্টেবল পদে চাকরি দেওয়ার কথা বলে ১০ লাখ টাকা লেনদেনের অভিযোগে পুলিশের এসআই মোহাম্মদ আলী এবং কথিত সাংবাদিকের স্ত্রী শাহানাতুল আরেফিন সুমিকে গ্রেপ্তার করে জেলা পুলিশ। এসআই মোহাম্মদ আলী জামালপুর আদালতে কর্মরত। তাদের গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে কনস্টেবল নিয়োগে অনিয়মবিরোধী কঠোর বার্তা প্রথম দৃশ্যমান হয়।

এর পর নিয়োগে তদবির করতে গিয়ে ঝিনাইদহ পুলিশের কনস্টেবল আবদুল হাকিম সাময়িক বরখাস্ত হন। তিনি মহেশপুর থানায় কর্মরত। কুড়িগ্রাম জেলা পুলিশ ও রংপুর রেঞ্জ সূত্র জানায়, নিয়োগ শুরুর আগেই অনিয়মে জড়িয়ে পড়ার খবর পেয়ে পাঁচজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে কুড়িগ্রাম জেলা পুলিশ। তাদের মধ্যে দুজন পুলিশ কর্মকর্তাকে তাৎক্ষণিক বদলি ও তিনজন সিভিল স্টাফকে বরখাস্ত করা হয়।

কনস্টেবল নিয়োগের বিষয়ে জানতে চাইলে কুড়িগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান আমাদের সময়কে বলেন, ‘আমরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে শুরু করে লিফলেটসহ বিভিন্নভাবে কোনো ধরনের আর্থিক লেনদেনে না জড়ানোর জন্য প্রচার চালিয়েছি। এ ছাড়া সব থানার ওসিদের দিয়ে কারা জমি বিক্রি করেছেন সেসব তথ্য সংগ্রহ করে অবৈধ আর্থিক লেনদেন বন্ধে কাজ করেছি।’ অপরদিকে গত ২৪ জুন এই মাদারীপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) সুব্রত কুমার হালদারের দেহরক্ষী কনস্টেবল নুরুজ্জামান সুমনকে ঘুষ গ্রহণের নগদ টাকাসহ আটক করে পুলিশ সদর দপ্তরের বিশেষ টিম।

এ ছাড়া পুলিশ লাইনের মেস ম্যানেজার জাহিদ হোসেন, টিএসআই গোলাম রহমান ও পুলিশ হাসপাতালের স্বাস্থ্য সহকারী পিয়াস বালার কাছ থেকেও ঘুষের ৭২ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়। পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, উদ্ধারকৃত টাকা লেনদেনের সঙ্গে মাদারীপুরের এসপি সুব্রত কুমার হালদারের সম্পৃক্ততা পেয়েছে কনস্টেবল নিয়োগে নজরদারি চালানো পুলিশ সদর দপ্তরের বিশেষ টিম।

এ ঘটনায় এসপির বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। কনস্টেবল নিয়োগ বিষয়ে জানতে চাইলে মাগুরা জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) খান মোহাম্মদ রেজওয়ান আমাদের সময়কে বলেন, ‘প্রথমে আমরা ঘুষবিরোধী লিফলেটসহ নানা প্রচার চালিয়েছি। পরে প্রাথমিকভাবে উত্তীর্ণ প্রার্থীরা যেন কারও সঙ্গে আর্থিক লেনদেনে না জড়ায় সেজন্য তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে অভিভাবকদেরও সতর্ক করেছি।’ পুলিশের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, এবারের নিয়োগে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় সব কিছু করেছে আইজিপি। কিন্তু তার পরও ছোটখাটো কিছু ঘটনা ঘটেছে।

তবে নিয়োগের অনিয়ম প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়ে পড়া কাউকে ছাড় দেওয়া হয়নি। এভাবে চললে আগামীতে মেধার ভিত্তিতে শতভাগ স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। উল্লেখ্য, গত ২২ জুন থেকে শুরু হওয়া ৯ হাজার ৬৮০ জন ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) নিয়োগ শেষ হয় ৯ জুলাই। এর মধ্যে ৬ হাজার ৮০০ জন পুরুষ ও ২ হাজার ৮৮০ জন নারী পিআরসি নিয়োগের কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে।

Comment here