নিজস্ব প্রতিবেদক : গত কয়েকদিনের তীব্র শীতে একটু উষ্ণ থাকতে নগরবাসীর চেষ্টার কমতি নেই। তবে উচ্চ ও মধ্যবিত্তের সঙ্গে নিম্নবিত্তদের এই চেষ্টার মধ্যে পার্থক্য আছে। বিশেষ করে বস্তিবাসী ও ছিন্নমূল মানুষরা নিজেদের মতো করেই শীতের সঙ্গে লড়াই করছেন। রাজধানীর মিরপুরের কালশী বাউনিয়া বাঁধ বস্তির মানুষরাও এর বাইরে নয়। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার রাতের আগুন যেন এক মুহূর্তে তাদের সব লড়াইকে ব্যর্থ করে দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে আগুনে পুড়ে গেছে ওই বস্তির শতাধিক ঘর। খবর পেয়ে রাত ১টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের ১১টি ইউনিট গিয়ে দেড় ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় সব হারিয়ে তীব্র শীতের মধ্যে খোলা আকাশের নিচেই হাহাকার করতে দেখা যায় বস্তির শত শত মানুষকে। গরম কাপড় ও খাবারের অভাবে অসহনীয় কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে বৃদ্ধ ও শিশুদের।
স্থানীয়রা জানান, বাউনিয়া বাঁধের এ অংশে খালের ওপরে ৮০টির মতো দোকানসহ তিন শতাধিক বস্তিঘর ছিল। অধিকাংশ ঘর ও দোকানই কাঠের বা টিনের। এতে রিকশা-ভ্যানচালকসহ নিম্নআয়ের মানুষরা থাকতেন। আগুনে এসব ঘর ও দোকান পুড়ে যাওয়ায় এ মানুষগুলো সর্বস্ব হারিয়েছেন। রাতে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনলে নিজেদের পোড়া জিনিসপত্র দেখে গভীর রাতে কান্নার রোল পড়ে যায় বস্তিবাসীর মধ্যে। এক কাপড়ে বের হয়ে আসা বস্তির মানুষরা এ শীতের মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধদের কোথায় নিয়ে রাখবেন তা নিয়ে ছোটাছুটি শুরু করেন।
রবিউল নামে বস্তির এক বাসিন্দা বলেন, ‘সামনেই ছিলাম। আগুন দেখার পর বাইরে আসছি। কিন্তু কিচ্ছু আনতে পারি নাই। শুধু জানডা নিয়া দৌড় দিছি।’ সুমন নামে আরেকজন বলেন, ‘কে কখন কীভাবে বের হইছে ঠিক নাই। সব হারায়ে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির রাতে এখন খোলা আকাশের নিচে থাকতে হচ্ছে। আমাদের অনেকের গরম কাপড় নেই। এই শীত আর বৃষ্টির মধ্যে বাচ্চাগো কষ্ট সবচেয়ে বেশি।’
নান্নু মিয়া নামে আরেকজন বলেন, ‘রাতে ঘুমাইছিলাম। হঠাৎ দোকানদার আকতার মিয়ার চিৎকার। আগুন আর ধোঁয়া দেইখা দৌড় দিছি। আগুনে পুড়ে সব শ্যাষ। এখন কোথায় যাব, কই থাকব কিচ্ছু জানি না।’
ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কর্মকর্তা রাসেল শিকদার জানান, বস্তিতে বিদ্যুতের অবৈধ সংযোগ ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকেই বস্তিতে আগুন লাগে। অধিকাংশ ঘর কাঠ ও টিনের হওয়ায় আগুন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় ধোঁয়ায় এক ব্যক্তি অসুস্থ হয়ে পড়লেও উদ্ধারের পর প্রাথমিক চিকিৎসা দিলে তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন।
পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপকমিশনার মোস্তাক আহমেদ বলেন, আগুন লাগার খবর পেয়ে পুলিশও ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। তারা ফায়ার সার্ভিসকে সহায়তা করে। আগুনে বস্তিবাসীর দুটি গরু পুড়ে মারা গেছে।
এদিকে স্থানীয় সংসদ সদস্য মো. ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছেন।
Comment here