শ্রীপুরে ৯৯৯,ফোন পেয়ে জিম্মিদের উদ্ধার করতে গিয়ে, হামলার শিকার হন দুই,পুলিশ ও এক আনসার সদস্য - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

শ্রীপুরে ৯৯৯,ফোন পেয়ে জিম্মিদের উদ্ধার করতে গিয়ে, হামলার শিকার হন দুই,পুলিশ ও এক আনসার সদস্য

শেখ মোঃ হুমায়ূন কবির,বিভাগীয় ব্যুরো প্রধান, ঢাকা : গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার রাজাবাড়ি ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামে (কসাইপট্টি এলাকায়) ২৫/০৯/২০২০ইং শুক্রবার রাতে দুই আদম ব্যবসায়ীকে জিম্মিদশা থেকে উদ্ধার করতে গিয়ে হামলার শিকান হন দুই পুলিশ ও এক আনসার সদস্য সহ পাঁচ ব্যবসায়ী আহত হয়েছেন।
এসময় তাদের উদ্ধার করতে যাওয়া পুলিশের শর্টগান ও গুলি ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগ করে পুলিশ। পরে ওসি’র নেতৃত্বে পুলিশের একাধিকদল অভিযান চালিয়ে ছয়জন হামলাকারীকে আটক এবং ছিনিয়ে নেয়া অস্ত্র-গুলি উদ্ধার করে।
আটককৃতরা হলেন,
১/রোশনি আরা (৪০),
সাং- দমদমা, থানা- কালিগঞ্জ, জেলা- শেরপুর।
২/শ্রীপুর উপজেলার নোয়াগাঁও গ্রামের নাজমুল হোসেন রকির স্ত্রী মনিষা ওরফে মনি (২৫)
৩/একই উপজেলার দিঘিপাড়া নয়নপুর গ্রামের আফসার উদ্দিনের ছেলে ফরহাদ (১৮)
৪/একই গ্রামের মৃত রইছ উদ্দিনের ছেলে রফিকুল ইসলাম মন্ডল কসাই,
৫/ নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলার লাফুয়া গ্রামের জাফর মোল্ল্যার ছেলে তাজুল ইসলাম মোল্ল্যা (২৪)
৬/ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলার হাজারীগঞ্জ গ্রামের সোলাইমানের ছেলে আব্দুর রহমান (২০)।
 ওই ঘটনায় আহতরা হলেন
১/কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বার উপজেলার জাফরাবাদ গ্রামের ইদ্রিস মিয়া ছেলে আবুল কালাম,
২/একই উপজেলার নবিয়াত গ্রামের আয়াত আলীর ছেলে রনি,
৩/একই উপজেলার চান্দিনা উপজেলার কাতকী গ্রামের আব্দুল মালেকের ছেলে মাসুম,
৪/কুমিল্লা জেলার হোমনা থানার মঙ্গলকান্দি গ্রামের শাহ্ আলমের ছেলে ফয়সাল,
৫/লক্ষীপুর জেলার রায়পুরা উপজেলার কেওড়া ডুবি গ্রামের নিখিল বেপারীর ছেলে ওমর বেপারী।
ওই হামলার শিকার কুমিল্লার দেবীদ্বার থানার নবিয়াদার গ্রামের আবুল হোসেন রনি, দৈনিক মুক্ত আওয়াজকে, জানান।
তিনি ঢাকার পুরানা পল্টন এলাকার (রাখা ইন্টারন্যাশনাল) এর মার্কেটিং অফিসার হিসেবে কর্মরত আছেন। লাইসেন্সধারী এ প্রতিষ্ঠান থেকে বিভিন্ন দেশে বৈধভাবে লোক পাঠানো হয়। এবছরের ফেব্রুয়ারিতে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার রাজাবাড়ি নোয়াগাঁও এলাকার ইসমাইল হোসেন ও শাহাদত হোসেন নামের দুইজনকে দুবাই পাঠানো জন্য তাদের কাছ থেকে (দুই লাখ ৬০ হাজার টাকা নেয়া হয়)।
কাগজপত্র প্রক্রিয়া করতে গিয়ে করোনাকালীন লকডাউনে তাদের কার্যক্রম স্থবির হয়ে যায়। এতে করে তাদের আর বিদেশ পাঠানো সম্ভব হয়নি। এমতাবস্থায় ইসমাইল হোসেন তাদের জমা দেয়া টাকা ফেরত দিতে বলেন। পরে এপ্রিলে ইসমাইলকে (৫০ হাজার টাকা বিকাশ করে ফেরত পাঠানো হয়)। পরে গত ১৫/০৯/২০২০ইং মঙ্গলবার ফোন করে ইসমাইল আমাকে তার গ্রামের বাড়িতে দাওয়াত দেন এবং আরো লোকজনকে বিদেশ পাঠানোর জন্য আলোচনা করার প্রস্তাব দেন। দাওয়াত পেয়ে ২৪/০৯/২০২০ইং বৃহস্পতিবার বিকেলে তিনি (আবুল হোসেন রনি) ও তার অপর বন্ধু মোঃ ফয়সাল আহমেদকে নিয়ে শ্রীপুরের নোয়াগাঁও ইসমাইলের বাসায় যান। পরে ইসমাইল তার ঘরের ভেতর আমাদের খাওয়া-দাওয়া করিয়ে ঘরের দরজা আটকে দিয়ে তার স্ত্রী শারমিন আক্তার রিমা ও শ্বশুর-শাশুড়িসহ আরো কয়েকজন নানা ভয়-ভীতি দেখিয়ে একটি ৩০০ টাকা মূল্যের সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেয় এবং তারা সঙ্গে থাকা দুইটি মোবাইল ফোনও ছিনিয়ে যায়। পরে ওই স্ট্যাম্পে ইসমাইল আমার কাছে ৫ লাখ টাকা পাবেন বলে লিখে এনে আমাকে ওইদিনই পাঁচ লাখ টাকা পরিশোধ করার জন্য চাপ দেয়। বিষয়টি জানিয়ে আমার সহকর্মী মোঃ ফয়সালকে খবর দিলে পরদিন ২৫/০৯/২০২০ইং শুক্রবার রাত ৮ টায় ফয়সাল, তার বন্ধু ওমর বেপারী, মোঃ কালাম ও মাসুমকে সঙ্গে নিয়ে ইসমাইলের বাড়িতে পৌঁছান, মাসুম ছাড়া অন্যরা ওই ঘরে ঢুকেন। তারপর ঘরের দরজা আটকে স্ট্যাম্প দেখিয়ে ৫ লাখ টাকা দাবি করে ইসমাইল ও তার লোকজন। একপর্যায়ে টাকা না নিয়ে যাওয়ায় তাদের উপর মারধর করেন। মাসুম বাইরে থেকে মারধরের বিষয়টি টের পেয়ে জাতীয় সেবা নাম্বার ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে বিষয়টি জানায়।
তবে ঘটনা জানতে মূল হামলাকারী ইসমাইলসহ অন্যরা পলাতক থাকায় তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
শ্রীপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খোন্দকার ইমাম হাসান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে,
দৈনিক মুক্ত আওয়াজকে জানান।
খবর পেয়ে রাত সাড়ে ৯ টার দিকে শ্রীপুর থানার টহল পুলিশের উপ-পরিদর্শক এস,আই মোঃ রফিকুল ইসলাম, ও  কনস্টেবল খোরশেদ আলম এবং এক আনসার সদস্য ইসমাইলের বাড়িতে যান।
এসময় পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে, ইসমাইল ও তার লোকজন অতর্কিতে পুলিশের উপরও হামলা চালায় এবং পুলিশের সঙ্গে থাকা শর্টগান ও পিস্তলের গুলিভর্তি ম্যাগজিন ছিনিয়ে নেয়। পরে অতিরিক্ত পুলিশ পাঠিয়ে ঘটনাস্থল থেকে দুই মহিলাসহ ৫ জনকে আটক করা হয়েছে ও ছিনিয়ে নেয়া অস্ত্র-গুলি উদ্ধার করা হয়।
আহত পুলিশ সদস্যদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে শ্রীপুর মডেল থানায় মারামারি, সরকারী কাজে বাধা ও অস্ত্র ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। মামলায় ২৪ জনের নাম উল্লেখ করে আরো অজ্ঞাত কয়েক জনকে আসামি করে পৃথক দুটি মামলা রুজ হয়েছে। আটককৃত ৬ জনকে মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।

Comment here