সংকট নিয়েই শুরু হচ্ছে যাত্রা - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

সংকট নিয়েই শুরু হচ্ছে যাত্রা

আবু আলী ও রেজাউল রেজা : কোভিড মহামারী ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্ব অর্থনীতি এখনো অস্থিতিশীল। শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশে^র অনেক দেশেই নজিরবিহীন মূল্যস্ফীতি দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশে আমদানি ব্যয় অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। ডলারের দাম নিয়ে অস্থিরতা কাটেনি। অন্যদিকে ভাটা পড়েছে রপ্তানি ও প্রবাসী আয়ে। রিজার্ভ নিয়ে দুশ্চিন্তা এখনো পুরোপুরি কাটেনি। এ ধরনের নানা সংকট নিয়ে আজ শুরু হচ্ছে নতুন ইংরেজি বছরÑ ২০২৩। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ২০২৩ সাল হবে বাংলাদেশের সংকট মোকাবিলার বছর।

গেল বছর সরকারের নীতিনির্ধারকদের মাথাব্যথার বড় কারণ ছিল মূল্যস্ফীতি। নতুন বছরেও তাই। সঙ্গে আছে আরও কিছু আশঙ্কা রপ্তানি আয় কমে যেতে পারে, আমদানি করা খাদ্যপণ্যের দাম বাড়বে, কমে যেতে পারে রেমিট্যান্সও। বিশ্ব অর্থনীতি মন্দায় পড়লে তৈরি পোশাকের চাহিদা কমে যেতে পারে। এ ছাড়া বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে খাদ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা। কারণ অনেক গুরুত্বপূর্ণ খাদ্যপণ্য বাংলাদেশকে আমদানি করতে হয়।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি)

advertisement 4

বিশেষ ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান আমাদের সময়কে বলেন, ‘২০২২ সালের দ্বিতীয়ার্ধে বৈশ্বিক কারণে যেসব চ্যালেঞ্জ সামনে এসেছে, সেগুলো মোকাবিলা করতে হবে আগে। মূল্যস্ফীতি, রিজার্ভের ওপর চাপ কমানোÑ এসব বড় চ্যালেঞ্জ তো রয়েছেই; সেই সঙ্গে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা, মুদ্রা ব্যবস্থাপনা, রাজস্ব আহরণÑ এসব জায়গাতেও নতুন চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের যে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা রয়েছে, সেটা কাজে লাগাতে হবে। তা হলে চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা সহজ হবে। নতুন বছরে আমাদের অর্থনীতি ব্যবস্থাপনার মান কিভাবে উন্নত করা যায়, সেদিকে জোর দিতে হবে। যেমন মুদ্রা ব্যবস্থাপনা, ঋণের সুদহার ব্যবস্থাপনা, সামষ্টিক অর্থনীতি ব্যবস্থাপনা, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা, সুশাসনÑ এসব বিষয়কে অগ্রাধিকার দিতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘যখন বৈশ্বিক সমস্যাগুলো সামনে এসেছে, তখন এসব জায়গায় আমাদের যে পুঞ্জীভূত দুর্বলতা ছিল, তা আরও প্রকাশ পেয়েছে। তাই নতুন বছরে এ জায়গাগুলোকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। অপরদিকে মূল্যস্ফীতি ও ডলার সংকট বড় দুটি চ্যালেঞ্জ। মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে শুল্ক কমানো যেতে পারে। আমদানি স্তর অথবা উৎপাদন স্তর থেকে ভোক্তা স্তর পর্যন্ত যে অতিরিক্ত দাম বাড়ে, তা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এ জন্য বাজার ব্যবস্থাপনায় নজর দিতে হবে। পাশাপাশি সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি ও অন্য সুবিধাগুলোর পরিধি বাড়াতে হবে। বৈধ পথে রেমিট্যান্স বাড়াতে আরও জোর দিতে হবে। কারণ, অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলার ক্ষেত্রে রেমিট্যান্স অনেক বড় ভূমিকা রাখতে পারে।’

গত আগস্টে দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি এক যুগের মধ্যে সর্বোচ্চ উচ্চতায় উঠেছিল। ওই মাসে ৯ দশমিক ৫২ শতাংশ মূল্যস্ফীতি হয়েছিল দেশে; খাদ্য মূল্যস্ফীতি গিয়ে ঠেকেছিল প্রায় ১০ শতাংশে। এর আগে ২০১১ সালের মে মাসে সর্বোচ্চ ১০ দশমিক ২০ শতাংশ মূল্যস্ফীতি হয়েছিল। গত সেপ্টেম্বরে অবশ্য মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ১০ শতাংশে নেমে আসে। অক্টোবর ও নভেম্বরে ছিল যথাক্রমে ৮ দশমিক ৯১ এবং ৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ। ফলে আগামী বছরেও মূল্যস্ফীতির উত্তাপ থাকবে।

বিদায়ী বছরে ব্যাংক খাতে আলোচিত ঘটনা ছিল ডলার সংকট। আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়া ও প্রবাসী আয় কমে যাওয়ায় এই সংকট তীব্র হয়। তাতে খোলাবাজারে ডলারের দাম ১২০ টাকা ছাড়িয়ে যায়। বর্তমানে ১০৫ থেকে ১০৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নতুন বছরেও ডলার সংকট থাকতে পারে।

ডলার সংকট সামাল দিতে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) প্রায় ৭ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে। গত বছরের আগস্টে রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছিল। এখন তা কমে ৩৪ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে।

পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর মনে করেন, ‘বাংলাদেশ যদি এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে ঘুরে দাঁড়াতে পারে, তা হলে আর পেছন ফিরে তাকাতে হবে না।’

অপ্রাতিষ্ঠানিক চ্যানেল চাঙ্গা হওয়ায় বিদায়ী বছর দেশে প্রবাসী আয় ১০০ কোটি ডলার কমবে বলে বিশ্বব্যাংকের সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, গত সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত প্রতি মাসেই প্রবাসী আয় ১৬০ কোটি ডলারের নিচে ছিল। গত মাসের প্রথম ২৩ দিনে (১-২৩ ডিসেম্বর) দেশে প্রবাসী আয় এসেছে ১২৮ কোটি ৪২ লাখ ডলার। অর্থবছরের পাঁচ মাসের (জুলাই-নভেম্বর) রেমিট্যান্স প্রবাহে ২ দশমিক ১৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও অর্থবছর শেষে এই প্রবৃদ্ধি থাকবে কিনা, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় দেখা দিয়েছে।

বিশ^ব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন আমাদের সময়কে বলেন, ‘নতুন বছরে সবার আগে খাদ্য নিরাপত্তা ও জ¦ালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। ২০২৩ বছরটি হবে সংকট মোকাবিলার বছর হবে। আমাদের সবার আগে খাদ্য মূল্যস্ফীতিটা কমাতে হবে এবং ডলারের জোগান বাড়াতে হবে। ডলারের জোগান না বাড়ালে আমদানি ব্যাহত হবে। তাই এ দুটি বিষয়কে অগ্রাধিকার দিতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ঋণখেলাপি ও অর্থ পাচার ডলার সংকটের আরেকটা কারণ। এ ক্ষেত্রে সহনশীলতা যদি বাড়ানো হয়, তা হলে সমস্যার সমাধান অসম্ভব। এটা এমন তো নয় যে এদের পরিচয় বা প্রক্রিয়া অজানা; সবই জানা। সুতরাং সমাধান কঠিন নয়।’

 

Comment here