রহমান জাহিদ : রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারে নিজ বাসায় ২০১১ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি নৃশংসভাবে খুন হন সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারোয়ার ও মেহেরুন রুনি। ঘটনার পর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন বলেছিলেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে হত্যাকারীদের বিচারের আওতায় আনা হবে। কিন্তু এর পর একে একে আট বছর পার হয়ে গেলেও হত্যাকারীদের বিচারের আওতায় আনা দূরের কথা, আদালতে চাঞ্চল্যকর এই মামলার প্রতিবেদনটাই এখনো জমা দিতে পারেনি তদন্ত সংস্থা র্যাব। এ হত্যাকাণ্ডের আট বছর পূর্তির একদিন আগে আজ সোমবার ফের মামলাটিতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য আছে।
যদিও র্যাবের একটি সূত্র বলছে, তদন্ত শেষ না হওয়ায় আজও আদালতে প্রতিবেদন জমা দিতে পারছে না তারা। আজও আদালতে সময় চাওয়া হবে। এভাবে গত আট বছরে প্রায় ৭০ বার প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ ধার্য করেছেন আদালত। কিন্তু কোনো তারিখেই প্রতিবেদন দাখিল হয়নি।
অবশ্য তার পরও খুনি গ্রেপ্তার এবং বিচারের আশা ছাড়ছেন না সাগর-রুনির স্বজনরা। সাগর সারোয়ারের মা সালেহা মনির বলেন, ‘৩০ বছর পর যদি সগিরা মোর্শেদ হত্যা মামলার বিচার শুরু হতে পারে, তবে আমাদের সন্তান হত্যার বিচার কেন হবে না। একদিন না একদিন বিচার হবেই। হয়তো আমি দেখে যাব, না হয় দেখে যেতে পারব না।’
তিনি বলেন, ‘তদন্ত সংস্থার সদিচ্ছা দরকার। আর আদালতকে ভূমিকা নিতে হবে। তারা (আদালত) তদন্তের জন্য একটি সময় বেঁধে দিতে পারেন। যদি আমার সন্তানরা রাষ্ট্রদ্রোহী হয়ে থাকে তদন্ত করে দেখাক, আমি বিচার চাইব না। মামলায় যারা গ্রেপ্তার হয়েছে তারা হতে পারে অন্য কোনো ক্ষেত্রে অপরাধী, তবে এ ঘটনায় নয়।’ তাই প্রকৃত আসামি গ্রেপ্তার এবং বিচারের আশায় আছেন বলে জানান তিনি।
এ সম্পর্কে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আবদুুল্লাহ আবু বলেন, ‘এটা দুঃখজনক যে, আট বছরেও মামলাটির তদন্ত শেষ হয়নি। বিলম্ব জনমনে প্রশ্ন সৃষ্টি করে। আশা করি তদন্ত সংস্থা সেটা উপলব্ধি করে দ্রুত তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন দাখিল করবে।’
মামলাটি প্রথম তদন্ত করে শেরেবাংলানগর থানাপুলিশ। তার পর এর তদন্তভার দেওয়া হয় ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখাকে (ডিবি)। দুই মাসের বেশি সময় ডিবি তদন্তের পর একপর্যায়ে ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে হাইকোর্টের নির্দেশে মামলার তদন্তভার বর্তায় র্যাবের ওপর। কিন্তু এখন পর্যন্ত র্যাবও তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি।
হত্যাকাণ্ডের পর মামলাটিতে নিহত রুনির কথিত বন্ধু তানভীর রহমান, বাড়ির সিকিউরিটি গার্ড এনাম আহমেদ ওরফে হুমায়ুন কবির, রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মিন্টু ওরফে বারগিরা মিন্টু ওরফে মাসুম মিন্টু, কামরুল হাসান অরুণ, পলাশ রুদ্র পাল ও আবু সাঈদ গ্রেপ্তার হন। তাদের মধ্যে তানভীর ও পলাশ রুদ্র পাল জামিনে আছেন।
Comment here