আসাদুর রহমান ও মুহম্মদ আকবর : নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন নিয়ে সরগরম দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন। প্রথমবারের মতো আইনের আলোকে রাষ্ট্রপতি গঠিত সার্চ কমিটির কাছে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও ইসি পদের জন্য বিভিন্ন শ্রেণিপেশার বিশিষ্টজন ও রাজনৈতিক দলগুলো তিন শতাধিক নাম প্রস্তাব করেছে। সেই তালিকায় সাবেক বিচারপতি, সচিব ও পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন পেশার মানুষের নাম রয়েছে।
ইতোমধ্যে সার্চ কমিটি এই তালিকা কাটছাঁট করে চল্লিশে নামিয়ে এনেছে বলে জানা গেছে। যোগ্য সিইসি ও ইসি বাছাইয়ে আজ আবার সুপ্রিমকোর্টের জাজেস লাউঞ্জে বৈঠকে বসবে সার্চ কমিটি। বৈঠকে তালিকা চূড়ান্ত না হলেও আরও সংক্ষিপ্ত হবে বলে জানা গেছে। এর পর সার্চ কমিটি আরও একটি বৈঠকের মাধ্যমে ১০ জনের নাম চূড়ান্ত করে দু-একদিনের মধ্যেই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে জমা দেবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচন পরিচালনাসহ সার্বিক বিবেচনায় কাটছাঁট করা তালিকায় প্রাধান্য পাচ্ছেন প্রশাসনের সাবেক শীর্ষ আমলারা। সে ক্ষেত্রে সিইসি হতে যাচ্ছেন একজন সাবেক সচিব। এর মধ্যে যাদের নাম আলোচনায় রয়েছে তারা হলেন- সাবেক প্রতিরক্ষা সচিব কাজী হাবিবুল আউয়াল, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা, মোহাম্মদ শফিউল আলম ও সরকারি কর্মকমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক নির্বাচন কমিশন সচিব ড. মোহাম্মদ সাদিক। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশনার পদে পুলিশের সাবেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, সাবেক জেলা ও দায়রা জজ ও অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তার নাম আলোচনায় রয়েছে।
এর আগে বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন সার্চ কমিটি নতুন ইসি গঠনে বিশিষ্ট নাগরিকের সঙ্গে চার দফা পরামর্শ সভা করেছে। এর পরে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন মাধ্যম থেকে প্রাপ্ত নাম বাছাইয়ে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি একটি বৈঠক হয়। তিন ঘণ্টার বেশি সময় ধরে করা বৈঠকে ৩২২ জনের নাম থেকে কাটছাঁট করে প্রাথমিক তালিকায় ৪০ জনকে রাখা হয়েছে। আজ শনিবার বেলা ১১টায় সুপ্রিমকোর্টের জাজেস লাউঞ্জে কমিটির ছয় সদস্য বৈঠকে বসবে। বৈঠকে ৪০ জনের তালিকা অর্ধেকে নামিয়ে আনা হতে পারে। তবে তালিকা চূড়ান্ত করতে কমিটি দু-একদিনের মধ্যে ফের বসবে। সেখানে ১০ জনের চূড়ান্ত তালিকা করা হতে পারে বলে জানিয়েছে সূত্র। সেই তালিকা রাষ্ট্রপতির কাছে উপস্থাপনের লক্ষ্যে ২২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে জমা দেবে সার্চ কমিটি।
এদিকে রাষ্ট্রপতির কাছে চূড়ান্ত নাম প্রেরণের তিন দিন আগে প্রতিবেদনটিসহ তালিকা প্রকাশ্যে আনার দাবি জানিয়েছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। একই সঙ্গে সার্চ কমিটিতে কারা কার নাম প্রস্তাব করেছে তাও প্রকাশের আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে এক আলোচনাসভায় একই দাবি জানিয়েছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
সার্চ কমিটির সদস্যদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমিও মিটিংয়ে গিয়েছিলাম। দশ জনের যে নামের তালিকা রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাবেন, তা আগেই জনগণের সামনে প্রকাশ করুন। এ ছাড়া সার্চ কমিটির বৈঠকে অংশ নেওয়া বিশিষ্ট নাগরিকদের মধ্যে বেশ কয়েকজন অনেকে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের আহ্বান জানিয়েছেন। এ বিষয়ে সার্চ কমিটির পক্ষ থেকে কিছু বলা হয়নি। আইনে নাম প্রকাশের বিষয়ে কিছু বলা নেই।
এ বিষয়ে সার্চ কমিটির এক সদস্য আমাদের সময়কে বলেন, তালিকা প্রকাশের বিষয়ে আইনে কিছু স্পষ্ট করে বলা নেই। আমরা প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করেছি। চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের বিষয়ে কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সূত্র জানায়, বিষয়টি নিয়ে সার্চ কমিটির সর্বশেষ বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। সেখানে অধিকাংশ সদস্য চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছেন। পাশাপাশি এর আইনি ও অন্যদিক পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। আজকের বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে বলে জানা গেছে।
এদিকে বঙ্গভবন সূত্র জানিয়েছে, আগামী ২৪ অথবা ২৫ তারিখ রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সার্চ কমিটির সদস্যদের সাক্ষাৎ হতে পারে। আগামী ২৭ তারিখের আগে তারা দেখা করবেন।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন’-এর আলোকে ৬ সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করা হয়। আপিল বিভাগের বিচারপতি কেএম ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন এই কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- বিচারপতি এসএম কুদ্দুস জামান, সাবেক নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন, লেখক-অধ্যাপক আনোয়ারা সৈয়দ হক, মহাহিসাব নিয়ন্ত্রক ও নিরীক্ষক মুসলিম চৌধুরী এবং সরকারি কর্মকমিশন চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন।
আইন অনুযায়ী, ইসি গঠনে নামের সুপারিশ চূড়ান্তের জন্য সার্চ কমিটির জন্য সময় ১৫ দিন। সেই হিসাবে আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় হাতে রয়েছে এই কমিটির কাছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কমিশনার নিয়োগে রাষ্ট্রপতির কাছে ১০ জনের নাম প্রস্তাব করতে সার্চ কমিটি প্রস্তাবিত ব্যক্তিদের নামের তালিকা সংগ্রহ করেছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সিইসি ও নির্বাচন কমিশনার হিসেবে ৩২২ ব্যক্তির নাম জমা পড়ে সার্চ কমিটিতে। নিবন্ধিত দুই ডজন রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি ছয় পেশাজীবী সংগঠন এবং ব্যক্তিপর্যায় থেকে এসব নাম প্রস্তাব করা হয়। ইতোমধ্যে ৩২২ জনের নাম প্রকাশ করা হয়েছে। এখন চলছে চূড়ান্ত তালিকা প্রণয়নের কাজ।
চলতি সপ্তাহেই তালিকা চূড়ান্ত করে আইন অনুযায়ী যোগ্য বিবেচিতদের মধ্য থেকে ১০ জনের নাম রাষ্ট্রপতির কাছে প্রস্তাব করবে সার্চ কমিটি। তাদের মধ্যে থেকে পাঁচজনকে বেছে নিয়ে রাষ্ট্রপতি গঠন করবেন নির্বাচন কমিশন। নতুন ইসির কাঁধে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব।
Comment here