সিদ্দিকবাজারের ভবনে বিস্ফোরণ নিয়ে যা বললেন ডিবির হারুন - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

সিদ্দিকবাজারের ভবনে বিস্ফোরণ নিয়ে যা বললেন ডিবির হারুন

রাজধানীর সিদ্দিকবাজারে ভবনে বিস্ফোরণে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) প্রধান হারুন অর রশীদ বলেছেন, ‘যে ভবনটিতে বিস্ফোরণ ঘটে তার নাম কুইন স্যানিটারি মার্কেট। এক সময় এটার নাম ছিল কুইন ক্যাফে। ১০ তলা ভবনের প্ল্যান করা হলেও ১৯৯২ সাল পর্যন্ত বেইসমেন্ট ও এক তলা কমপ্লিট ছিল। এর বেইসমেন্টে ছিল রান্নাঘর আর একতলায় ছিল খাবারের হোটেল।’

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলে

হারুন অর রশীদ বলেন, ‘এই রান্নাঘরে কমার্শিয়াল গ্যাসের বড় লাইন ছিল যা পরে লিখিতভাবে তিতাসের কাছে সারেন্ডার করা হয়। ২০০৪ সালে ভবনটির সাত তলা পর্যন্ত কমপ্লিট করা হয়। বর্তমানে একটি আন্ডারগ্রাউন্ড বেইসমেন্টসহ সাত তলা পর্যন্ত ভবনটি কমপ্লিট আছে। ভবনটির প্রকৃত মালিক মরহুম হাজী মোহাম্মদ রেজাউর রহমান। ২০১১ সালে তার মৃত্যুতে তার তিন ছেলে, দুই মেয়ে এবং স্ত্রী বর্তমানে ভবনটির মালিক।’

বিস্ফোরণ ও ভবনটি নিয়ে বেশ কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন ডিএমপির ডিবি প্রধান। তিনি বলেন, ভবনটির বেইসমেন্টে পার্কিংয়ের কথা থাকলেও সেখানে এক সময় রান্না ঘর ছিল। বর্তমানে ‘বাংলাদেশ স্যানিটারি’ নামক একটি কমার্শিয়াল প্রতিষ্ঠানে স্যানিটারি মালামাল বিক্রি করা হয় প্রায় ১৮০০ স্কয়ার ফিটের এ আন্ডারগ্রাউন্ডে, যা সম্পূর্ণটাই গ্লাসে ঘেরা। বড় বড় দুটি এসিতে ঠাণ্ডা করা হয় এ স্যানিটারি দোকান।

হারুন বলেন, এ আন্ডারগ্রাউন্ডে আরও আছে একটি বড় পানির ট্যাংক। সাত তলা ভবনের কোথায় সুয়্যারেজ সেপটিক ট্যাংক অবস্থিত তা ভবনের মালিকরা নিশ্চিত না। ধারণা করা হয় উত্তর পাশের ভবনের সঙ্গে এ অবনের যে আড়াই-তিন ফিট গলি আছে সেখানেই দুই ভবনের সেপটিক ট্যাংক অবস্থিত।

ডিবির হারুনের দেওয়া পর্যবেক্ষণগুলো হলো:

১. বেইসমেন্টে কার পার্কিং থাকলে বাতাসের ভেন্টিলেশন থাকত। কোনো গ্যাস জমা হতো না। বিস্ফোরণও হয়তো হতো না।

২.  সাত তলা ভবনের বেইসমেন্টসহ তিনটি ফ্লোরের কমার্শিয়াল লোকজন, বাসা বাড়ির লোকজনের পয়োঃবর্জ্য যেখানে জমা হয় দীর্ঘ সময় সেই জায়গা পরিষ্কার না করায় সেখানেও বায়োগ্যাসের জন্ম হতে পারে যা বিভিন্ন কারণে বিস্ফোরিত হয়ে ব্যাপক ক্ষতির সৃষ্টি করে।

৩. একসময় এই বেইজমেন্টের রান্নাঘরে কমার্শিয়াল বড় লাইনে গ্যাস সরবরাহ করা হতো যা পরবর্তীতে বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু বাড়ির অন্যান্য ফ্লোরের ডোমেস্টিক লাইন এখনো চলমান। ফলে এই লাইন সম্পূর্ণ বন্ধ না হয়ে সেখান দিয়েও তিতাস গ্যাস লিক হতে পারে। কোনোভাবে জমা গ্যাসে স্পার্কের মাধ্যমে বিস্ফোরণের হতে পারে।

৪. ভবন মালিকদের তথ্য মতে, মূল ক্ষতিগ্রস্ত ভবন এবং তার উত্তরপাশে ব্র্যাক ব্যাংকের ভবনের মাঝখানে সরু একটি গলি আছে। এ গলিতে পয়োঃবর্জ্য পদার্থের সেপটিক ট্যাংক, এসির আউটার ইত্যাদি অবস্থিত। বিস্ফোরণে সেপটিক ট্যাংকের পাশের দেয়ালগুলো সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পয়োঃবর্জ্য পদার্থের বায়োগ্যাসের বিস্ফোরণে এমনটি হতে পারে।

৫. এই ভবনটির আন্ডারগ্রাউন্ড বা বেইসমেন্টে বড় একটি স্যানিটারি দোকান, নিচ তলায় পাঁচটি দোকান, দোতলাতে স্যানিটারি এবং কাপড়ের দুটি দোকান ছিল। যেগুলোর জন্য অনেক কাঁচ এবং ইন্টেরিয়রের কাজ করা হয় এবং পাওয়ারফুল এসি ব্যবহার করা হয়। এসিগুলোকে সময়ে সময়ে সার্ভিসিং না করালে বা ত্রুটিপূর্ণ থাকলে তা থেকেও বিস্ফোরণের কারণ হতে পারে, যেটা ২-৩ বছর আগে গুলশানে আরব আমিরাতের ভিসা সেন্টারে ঘটেছিল।

৬. ভবনটি কোনো পরিত্যক্ত পাবলিক স্পেস/ভবন নয়। ব্যক্তি  মালিকানাধীন। বিভিন্ন ব্যবসায়ীর সার্বক্ষণিক নজরদারি ও সিসি ক্যামেরার সার্ভিলেন্সে ছিল এটি। ফলে বিপুল ক্ষয়ক্ষতির জন্য যে পরিমাণ বিস্ফোরক প্রয়োজন তা এখানে সবার অজান্তে জমা রাখা প্রায় অসম্ভব।

৭. বিস্ফোরণের প্রকৃত কারণ সম্পর্কে ফায়ার সার্ভিস, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, ঢাকা মহানগর পুলিশের সিটিটিসির বোম্ব ডিসপোজাল টিম আলাদা আলাদাভাবে তদন্ত করছে। বিভিন্ন দিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তারা একটা যৌক্তিক সিদ্ধান্তে উপনীত হয়ে প্রতিবেদন দেবেন তাতেই প্রকৃত কারণটি জানা যাবে। তবে এখনো পর্যন্ত বিস্ফোরক বা সেবুট্যাজের কোনো আলামত সেখানে পাওয়া যায়নি।

০৮. ভবনটির বিভিন্ন ফ্লোরের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে সিসি ক্যামেরা ছিল। সিসি ক্যামেরার ডিভিআর থেকে ফুটেজ সংগ্রহ করার চেষ্টা চলছে। ভবনের মালিক, দোকানের মালিকদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বিস্ফোরণের কারণ জানা চেষ্টা অব্যাহত আছে।

Comment here