সুস্থ দুজনের একজন বাড়ি ফিরেছেন - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

সুস্থ দুজনের একজন বাড়ি ফিরেছেন

নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত তিনজনের মধ্যে দুজন সুস্থ। এর মধ্যে একজন বাড়িও ফিরে গেছেন। এ ছাড়া দেশে নতুন করে আর কারও মধ্যে ভাইরাসটি পাওয়া যায়নি। গতকাল শুক্রবার মহাখালীর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নতুন ভবনের সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা।

আইইডিসিআর সব প্রস্তুতিই নেওয়া হয়েছে জানিয়ে ডা. ফ্লোরা জানান, বর্তমানে বিভিন্ন হাসপাতালে আটজনকে ‘আইসোলেশনে’ রাখা হয়েছে।

আর যারা বিদেশ থেকে দেশে এসেছেন, তাদের ১৪ দিন কোয়ারেনটাইনে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কেউ যদি তা না মানেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। সৌদি আরব গমনের ক্ষেত্রে ট্রানজিট না নিয়ে সরাসরি ফ্লাইটে যাওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

আক্রান্তদের সুস্থ হয়ে ওঠার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে দুটি পরীক্ষায় দুজনের রেজাল্ট নেগেটিভ এসেছে। আর পর পর দুবার নেগেটিভ এলে তাদের হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া যায়। এরই মধ্যে একজনকে ছুটি দেওয়ায় তিনি বাড়ি চলে গেছেন। সুস্থ অন্যজনের পারিবারিক কিছু বিষয় আছে। তার বাড়ির আরও কিছু মানুষ কোয়ারেনটাইনে আছেন। পরিবারের আরও একজন হাসপাতালে। তার শরীরে এখনো ভাইরাসের সংক্রমণ রয়ে গেছে। তাই সবার অনুরোধে সুস্থ ব্যক্তিকে হাসপাতালে রেখেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘গত ২৪ ঘণ্টায় (সংবাদ সম্মেলনের আগ পর্যন্ত) ২৪ জনসহ এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ১৮৭ জনের। তবে নতুন করে কারও শরীরে করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি।’

বিদেশফেরতরা ১৪ দিন ঘরে না থাকলে ব্যবস্থা : ডা. ফ্লোরা বলেন, ‘বিদেশফেরতরা ১৪ দিন ঘরে থাকুন। আমরা অনেক ক্ষেত্রে দেখছি, তারা কোয়ারেইনটাইনে থাকছেন না। এতদিন তাদের অনুরোধ করেছি। কিন্তু সরকারের সহানুভূতিশীল পদক্ষেপ তারা মানছেন না। সে ক্ষেত্রে আমরা সংক্রামক ব্যাধি আইন প্রয়োগ করতে পারি। যদিও আমরা শক্ত পদক্ষেপে যেতে চাই না। সবাই মিলে এ পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে চাই। অনেকেই মিথ্যা তথ্য ও গুজব রটিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসংশ্লিষ্ট সবাইকে বর্ণিত আইনানুযায়ী এবং নির্দেশিত পন্থায় যথাযথভাবে দায়িত্ব পালনের অনুরোধ জানাচ্ছে। ব্যত্যয়ের ক্ষেত্রে আইনের সংশ্লিষ্ট শাস্তিমূলক ধারা প্রয়োগ করা হবে।

বিদেশফেরত কারও মধ্যে করোনার উপসর্গ দেখা গেলে আইইডিসিআরে সরাসরি না গিয়ে হটলাইনে যোগাযোগের আহ্বান জানান মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা, ‘এভাবে যাতায়াতের কারণে রোগটি অন্যের শরীরে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। হটলাইনে ফোন করলে আইইডিসিআরের কর্মীরা বাড়ি গিয়ে নমুনা নিয়ে আসবেন। কারণ আপনাদের কারও মধ্যে যদি সত্যিই এ ভাইরাসের উপস্থিতি থাকে, তা হলে সেটা কিন্তু এখানে আসা অন্য আরেকজনের শরীরে সংক্রমিত হতে পারে। শুধু আইইডিসিআরে আসা লোকজন আক্রান্ত হবে এমন না। আপনারা যে গণপরিবহন ব্যবহার করেন, আপনাদের সঙ্গে যিনি আসেন, প্রত্যেকেরই ঝুঁকি তৈরি হয়।’

সরাসরি সৌদি যাওয়ার পরামর্শ আইইডিসিআরের : আইইডিসিআর পরিচালক বলেন, ‘বাংলাদেশের যারা মধ্যপ্রাচ্যে কাজ করেন তাদের জানাচ্ছি, সৌদি আরবে যাওয়ার জন্য কোনো স্বাস্থ্য সনদের প্রয়োজন নেই। সৌদি দূতাবাস জানিয়েছে, যারা দেশটিতে যাবেন তারা যেন সরাসরি ফ্লাইটে যান। ট্রানজিট আছে এমন ফ্লাইটে নয়। মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশ থেকে আশ্বস্ত করা হয়েছে, ওয়ার্ক পারমিট ও ভিসার মেয়াদ বাড়াবে। তাই আমাদের যেসব শ্রমিক মধ্যপ্রাচ্যে কাজ করেন তাদের আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই।’

বৃদ্ধদের মৃত্যুর হার বেশি : সারাবিশ্বে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে উল্লেখ করে ডা. ফ্লোরা বলেন, ‘চীনের পরিস্থিতি অনেকখানি নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু এর বাইরে বেশকিছু দেশে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। আক্রান্তদের মধ্যে ছোটদের বা যাদের বয়স কম তাদের মৃত্যুর হার কম। বৃদ্ধদের মৃত্যুর হার বেশি।’

চিকিৎসার জন্য শনাক্তের প্রয়োজন নেই : আইইডিসিআরের ব্রিফিংয়ের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন গণমাধ্যম এবং টেলিভিশন টকশোতে বলা হচ্ছে, ঢাকার বাইরে করোনা ভাইরাস টেস্টিং ফ্যাসিলিটি নেই। তারা বলতে চাইছে, এটার খুব দরকার আছে। আসলে এটার কোনো দরকারই নেই। কেননা করোনা ভাইরাস শনাক্তকরণের সঙ্গে চিকিৎসার কোনো সম্পর্ক নেই। নমুনা পরীক্ষায় নিশ্চিত না হয়েও এ রোগটির লক্ষণ ও উপসর্গ দেখে চিকিৎসা শুরু করা সম্ভব।’

তিনি আরও বলেন, ‘দেশে যে তিনজনের শরীরে ভাইরাসটির উপস্থিতি পাওয়া গেছে, তাদের আমি করোনা রোগী বলতে চাই না। তাদের শরীরে ভাইরাসের সংক্রমণ হয়েছিল। প্রথম দিন শরীরে একটু বেশি জ্বর ছিল। পরের দিনই তারা সুস্থ হয়ে ওঠেন। ফলে কারও শরীরে যদি করোনার সংক্রমণ এবং রোগের লক্ষণও থাকে, তবে তাকে পরীক্ষার মাধ্যমে ভাইরাস নিশ্চিতের দরকার নেই। অধিক সতর্কতা হিসেবে আমরা পরীক্ষা করি। দেশে কতজন আক্রান্ত হয়েছে তা জানতে পরীক্ষা চলছে। রোগতত্ত্ববিদ লক্ষণ ও উপসর্গ দেখেও চিকিৎসা শুরু করতে পারেন।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘আমরা সারাদেশে এমন নেটওয়ার্ক তৈরি করেছি, সন্দেহভাজন রোগী সম্পর্কে জানতে পারলে নিজেরা গিয়েই পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করতে পারব। পরীক্ষা করার পর রোগীকে তা জানিয়ে দেব। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। আইইডিসিআরের পরীক্ষা-নিরীক্ষার যে ক্যাপাসিটি আছে তার খুব কমই আমরা ব্যবহার করছি। প্রয়োজনে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণাকেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি), চট্টগ্রামে সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল ও কক্সবাজারে পরীক্ষা করতে পারব।’

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক ডা. শাহনীলা ফেরদৌসি, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বাংলাদেশ প্রতিনিধি বর্ধন জং রানাসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা।

ওমরাহ করে আসা দম্পতি কোয়ারেনটাইনে : ওমরাহ পালন শেষে বাড়ি ফেরা বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার এক দম্পতিকে নিজ বাড়িতেই কোয়ারেনটাইনে রাখা হয়েছে। গত বুধবার তারা সৌদি আরব থেকে বাড়ি ফিরেছেন। এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তোফাজ্জল হোসেন ম-ল বলেন, ‘করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে দুজনকে নিজ বাড়িতে কোয়ারেনটাইনে রাখা হয়েছে। তবে তারা সুস্থ আছেন।’

টাঙ্গাইলে ১০০ বেডের আইসোলেশন ওয়ার্ড : করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে টাঙ্গাইলের জেলা সদর হাসপাতালে ১০০ বেডের আইসোলেশন ওয়ার্ড খোলা হয়েছে। এ ছাড়াও প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৬ বেডের আইসোলেশন ওয়ার্ড। এরই মধ্যে সিঙ্গাপুর ও চীনফেরত দুজনকে কোয়ারেনটাইনে রাখা হয়েছে। তবে তদের শরীরে করোনার কোনো উপসর্গ পাওয়া যায়নি।

প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া এবং চাঁদপুর, নরসিংদী ও টাঙ্গাইল প্রতিনিধি

Comment here