নিজস্ব প্রতিবেদক,বগুড়া ও আদমদীঘি প্রতিনিধি : করোনাভাইরাস সংক্রমিত কোভিড-১৯ নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য বলেছেন বগুড়ায় করোনাজয়ী পুলিশ কনস্টেবল আহসান হাবিব। গতকাল রোববার বিকেলে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লাইভে এসে করোনাজয়ের কথা এবং কষ্টের কিছু অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন এই ২৯ বছর বয়সী পুলিশ কনস্টেবল।
করোনাকালের কষ্টের কথা তুলে ধরে আহসান হাবিব বলেন, ‘করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবর শুনে আমার যতটা না খারাপ লেগেছে, তার চেয়ে বেশি কষ্ট পেয়েছি নিজ এলাকার মানুষের আচরণে। করোনা পজিটিভ শোনার পর তারা আমার বাড়িতে মল ছুঁড়ে মেরেছে। এমনকি আমার মায়ের গায়ে হাত তুলতেও তারা দ্বিধা করেনি।’
এলাকাবাসীর আচরণের সমালোচনা করে আহসান হাবিব বলেন, ‘আমি একজন দায়িত্বশীল মানুষ হওয়ায় গ্রামে আসার পর থেকে বাড়ির বাইরে যাইনি। শুধু একদিন আমি হাতে গ্লাভস পরে মোটরসাইকেল নিয়ে ওষুধের দোকানে গিয়েছিলাম। সেখানে ৩ ফুট দূর থেকেই ওষুধ কিনে বাড়ি ফিরেছিলাম। কিন্তু যখন আমার রিপোর্ট পজেটিভ আসলো তখন গ্রামের লোকজন নানাভাবে নির্যাতন শুরু করল। আমি আইসোলেশন সেন্টারে যেতে রাজি হওয়ার পরও তারা লাঠিসোটা নিয়ে আমার বাড়ি ঘেরাও করল। একপর্যায়ে তারা আমার বাড়িতে মল ছোড়া শুরু করল এবং আমার মায়ের গায়ে হাতও তুলল।’
করোনাজয়ী পুলিশ কনস্টেবল বলেন, ‘করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে কোনোভাবেই আতঙ্কিত হওয়া যাবে না। বরং মনে সাহস রেখে চিকিৎসকের দেওয়া ওষুধ খাওয়ার পাশাপাশি নিয়মিত গরম পানি খেতে হবে। গরম পানির সঙ্গে লবণ মিশিয়ে ঘন ঘন কুলকুচি করতে হবে। তা ছাড়া ওষুধের পাশাপাশি নিয়মিত গরম পানি পান করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ঢাকায় পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সহকর্মীদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তারা আমাকে নিয়মিত গরম পানি খেতে এবং গরম পানির সঙ্গে লবণ মিশিয়ে গারগিল করার পরামর্শ দেন। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী আমি ঘন ঘন গরম পানি খেয়েছি এবং গারগিল করেছি।’
আন্তরিকতা নিয়ে চিকিৎসা সেবা দেওয়ায় করোনা আইসোলেশন ইউনিট বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) ডা. শফিক আমিন কাজলের প্রশংসা করেছেন এই পুলিশ কনস্টেবল। আর নিজ বাহিনীর অভিভাবক হিসেবে সার্বক্ষণিক খোঁজ রাখার জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন বগুড়ার পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঁইয়ার প্রতি।
ঢাকা মহানগর পুলিশে (ডিএমপি) কর্মরত আহসান হাবিব গত ৮ এপ্রিল বগুড়ার আদমদীঘির সাঁওইল গ্রামে নিজ বাড়িতে আসেন। ঢাকাফেরত হওয়ায় সেদিনই তাকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়। তবে হালকা জ্বর-কাশি থাকায় ১৩ এপ্রিল তিনি নিজেই আদমদীঘি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নমুনা পরীক্ষা করাতে যান। তিন দিন পর ১৬ এপ্রিল রাতে রিপোর্ট আসে তার করোনা পজিটিভ।
ওই দিন রাতেই পুরো উপজেলা লকডাউন করা হয় এবং বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে আইসোলেশন ইউনিটে পুলিশ কনস্টেবলকে ভর্তি করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী ২১ এবং ২৩ এপ্রিল আবারও তার নমুনা পরীক্ষা করা হয়। পর পর দুটি পরীক্ষায় নেগেটিভ আসায় ২৫ এপ্রিল বেলা ৩টার দিকে তাকে ছাড়পত্র দেওয়া হলে সন্ধ্যায় তিনি বাড়ি ফিরে যান।
পুলিশ কনস্টেবল আহসান হাবিব বলেন, ‘যেহেতু হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার আগে থেকেই আমার জ্বর ছিল, তাই আগের চিকিৎসকের দেওয়া নির্দেশনা অনুযায়ী আমি ডোকোপা (ডক্সোফাইলিন), ফেনাডিন (ফেক্সোফেনাডিন), নাপা (প্যারাসিটামল) ও গ্যাসট্রিকের ওষুধ খেয়েছি। এগুলো শেষ হলে হাসপাতাল থেকে দেওয়া ওষুধগুলো খেয়েছি। তা ছাড়া হাসপাতালে অ্যাজিথ্রোমাইসিন (জিম্যাক্স), মন্টিলুকাস্ট (মন্টিকাশ), প্যারাসিটামল ও গ্যাসট্রিকর ওষুধ সেবন করতে দেওয়া হয়েছিল।’
আদমদীঘি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শহীদুল্লাহ দেওয়ান বলেন, ‘পুলিশ কনস্টেবল আহসান হাবিব বগুড়ায় হাসপাতালে ভর্তি হতে রাজি ছিলেন। কিন্তু তারপরও গ্রামের লোকজন নিজেরা সংক্রমিত হওয়ার ভয় থেকে বারবার উত্তেজিত হয়ে পড়ছিলেন। পরে আমরা তাদের বুঝিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করি। বর্তমানে তিনি সুস্থ হয়ে বাড়িতে রয়েছেন। বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে করোনাজয়ীর তালিকায় আহসান হাবিবের নাম দ্বিতীয় ক্রমিকে থাকলেও তিনি বগুড়া জেলার ক্ষেত্রে প্রথম করোনাজয়ী ব্যক্তি।’
Comment here