আমি বটি দিয়ে ভিকটিমের (স্ত্রীর) দুই হাতের কবজী ও দুই পায়ের রগ কেটে দেই। দুই হাত ও দুই পা কাটার পরে আমি বাসা ছেড়ে চলে যাই’-মোহাম্মদপুর থানা এলাকার শারমিন হত্যা মামলার আসামি স্বামী আমির হোসেন এভাবেই আদালতে স্ত্রীকে হত্যার বর্ণনা দিয়েছেন।
গ্রেপ্তারের পর গতকাল মঙ্গলবার পিবিআই ঢাকা মেট্রোর (উত্তর) উপ-পরিদর্শক ( এসআই) আলামিন শেখ তাকে আদালতে হাজির করেন। পরে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে খুনের কথা স্বীকার করেছেন তিনি। একইসঙ্গে স্ত্রীকে হত্যার বীভৎস বর্ণনাও দিয়েছেন তার জবানবন্দিতে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, স্ত্রী শারমিনকে হত্যার বর্ণনা দিয়ে আমির হোসেন বলেছেন, ‘আমি পেশায় একজন সিএনজি ড্রাইভার। নিহত শারমিনের সঙ্গে আমার প্রেমের সম্পর্ক থাকায় চার মাস পূর্বে তাকে বিবাহ করি। শারমিনকে বিবাহ করার পূর্বেও আমি আরো দুটি বিয়ে করি যা শারমিন জানতো না। আমার প্রথম স্ত্রীর নাম শাহিনা তার এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। আর দ্বিতীয় স্ত্রীর নাম তাসলিমা। শারমিন আমার তৃতীয় স্ত্রী। শারমিন আমার আগের বিয়ের কথা জানতে পারে। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ থাকার কথা জানতে পারলে সংসারে অশান্তি সৃষ্টি হয়।’
স্বীকারোক্তিতে তিনি আরও বলেছেন, ‘আমি ৩ হাজার টাকা আমার শ্বশুরের নিকট থেকে চাই। তারা তো টাকা দেয়ই না বরং আমার শ্যালক আমাকে বকাবাজি করে। আমি বিষয়টি ফোনে শারমিনকে জানালে সেও আমার সঙ্গে তর্ক-বিতর্ক করে। সে আমার সঙ্গে সংসার করবে না বলে জানালে আমার মাথা খারাপ হয়ে যায়। আমি বাজার থেকে ঘুমের ওষুধ ও স্কচটেপ কিনে নিয়ে আসি। আমি ভাতের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাওয়ায়ে দিলে শারমিন ঘুমায়ে পড়ে। তখন স্কচটেপ দিয়ে তার মুখ বাঁধি এবং দুই হাত ও পা ওড়না দিয়ে বেঁধে দেই।’
‘আমি বটি দিয়ে ভিকটিমের ( স্ত্রীর) দুই হাতের কবজী ও দুই পায়ের রগ কেটে দেই। রাত আনুমানিক ১টা ৩০ মিনিটের দিকে এ কাজ করেছি। দুই হাত ও দুই পা কাটার পরে আমি বাসা ছেড়ে চলে যাই’ বলে আরও জানায় আমির হোসেন।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে পিবিআই হেডকোয়ার্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে পিবিআই’র প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার আমির হোসেনকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি জানিয়েছেন।
তিনি জানান, মোহাম্মদপুর থানা এলাকার শারমিন হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন ও ঘাতক স্বামী আসামি মো. আমির হোসেনকে (২৮) গতকাল চট্টগ্রাম ইপিজেড এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে পিবিআই প্রধান জানান, মামলার বাদী শারমিনের বাবা ছাবেদ আলী ঢাকার মোহাম্মদপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। ওই অভিযোগে বলা হয়েছে যে, আসামি মো. আমির হোসেন (২৮) প্রেমের সম্পর্ক গড়ে গত চার মাস আগে মেয়ে শারমিন বেগমকে (২০) বিয়ে করেছেন। গত ৩০ জুন বিকেলে তার মেয়েসহ উক্ত আসামি বাসায় এসে ১০ হাজার টাকা যৌতুক চায়। তখন নিহত শারমিনের মা জানান যে তার কাছে কোনো টাকা নেই। এ কথা শুনে আমির তার বউ শারমিনকে নিয়ে বাসা থেকে চলে যায়।
বনজ কুমার জানান, পরদিন গত ১ জুলাই রাত সাড়ে ৮টায় আমির একা আবারো তার শাশুড়ির বাসায় আসেন এবং যৌতুক হিসেবে টাকা দাবি করেন। এ সময় তার শাশুড়ি আসামিকে এক হাজার টাকা দিয়ে আর টাকা নেই জানালে আসামি বাদীর মেয়েকে শেষ করে দিবে বলে ক্ষিপ্ত হয়ে চলে যায়।
পিবিআই তদন্ত সূত্রে জানা যায়, ওই রাতেই আসামি রাত অনুমানিক সাড়ে ৯টার দিকে শারমিনের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে ফোন করে পুনরায় তার দাবিকৃত টাকা দিতে বলে। না হলে তার মেয়েকে খুন করবে বলে হুমকি দেয়। পরবর্তীতে ভোর ৪টার সময় উক্ত আসামি ফোন করে জানায় ‘আপনার মেয়েকে খুন করে খাটের নিচে রেখেছি, লাশ নিয়ে যান।’
এরপর ওই বাসার ম্যানেজারের স্ত্রী মমতাজের মাধ্যমে খবর পেয়ে শারমিনের মা পঙ্গু হাসপাতালে যান। হাসপাতালে গিয়ে তার মেয়েকে মৃত অবস্থায় দেখতে পান।
এই ঘটনার বিষয়ে শারমিনের মা ফজিলা বেগম জানান, বাড়ির ম্যানেজারের স্ত্রী মমতাজ বেগম গোঙানির শব্দ শুনে আশপাশের লোকজন ডেকে অন্যান্যদের সহযোগিতায় গুরুতর আহত অবস্থায় ভিকটিমকে চিকিৎসার জন্য জাতীয় অর্থোপেডিক ও পুনর্বাসন কেন্দ্র (পঙ্গু হাসপাতাল) তিনি নিয়ে যান। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মেয়ে মারা যায়।
Comment here