নিজস্ব প্রতিবেদক : স্বাস্থ্য খাতের ব্যাপক অনিয়ম, অক্সিজেন সংকটসহ করোনা চিকিৎসায় অব্যবস্থাপনা নিয়ে জাতীয় সংসদে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের কঠোর সমালোচনা করেছেন জাতীয় পার্টি ও বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্যরা। আজ শনিবার সংসদের ত্রয়োদশ অধিবেশনের সমাপনী দিনে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে ‘নির্লজ্জ’ আখ্যা দিয়ে সংসদ সদস্যরা তার পদত্যাগ দাবি করেন।
জাতীয় পার্টির রুস্তম আলী ফরাজী স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কঠোর সমালোচনা করে বলেন, সেদিন সংসদে আমি সার্জিক্যাল মাস্ক কেনা নিয়ে কথা বলেছিলাম। আমরা আশা করেছিলাম স্বাস্থ্যমন্ত্রী সেটা তদন্ত করবেন, বিষয়টি দেখবেন। কিন্তু তিনি বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বললেন, এটি সত্য নয়। এ জন্য আজকে আমি তথ্য-প্রমাণ নিয়ে এসেছি। সংসদীয় কমিটি বিষয়টি আলোচনা করেছে, বিভিন্ন গণমাধ্যমে এসেছে। সত্য বিষয়টি এড়িয়ে না গিয়ে তার তদন্ত করা উচিত ছিল। তাই আমার দাবি এ বিষয়ে তদন্ত করতে হবে।
জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, জিজ্ঞেস করলেই স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন সব দিচ্ছি কিন্তু কোথাও কিছু নেই। এভাবে আমরা একটা বছর সময় নষ্ট করেছি। আমাদের সংসদ সদস্যকে দায়িত্ব দিলে অর্থ দিলে আমরা সব কিছু ঠিক করে দিতে পারতাম। আইসিইউ বেড আছে কিন্তু প্রশিক্ষিত ডাক্তার নার্স নেই, অক্সিজেনের ব্যবস্থা নেই। অধিকাংশ রোগী অক্সিজেনের অভাবে মারা যাচ্ছেন। বিভিন্ন ঘটনায় তদন্ত কমিটি হয় কিন্তু কোনো তদন্ত কমিটির রিপোর্ট আজ পর্যন্ত আমাদের সামনে আসেনি। মানুষের জীবনের কি কোনো দাম নেই? করোনাতো এখন সারা বিশ্বেই রয়েছে। কিন্তু চিকিৎসায় কী ধরনের অনিয়ম মানা যায়?
তিনি আরও বলেন, সাতক্ষীরায় অক্সিজেনের অভাবে সাত জন কোভিড রোগী এক ঘণ্টার মধ্যে ছটফট করতে করতে মারা গেছেন। আগের স্বাস্থ্যমন্ত্রী রুহুল হকের বাড়ি সেখানে। সেখানকার হাসপাতালটি ফাইভ স্টার মানের হওয়া উচিত ছিল। মন্ত্রীরা যান, মন্ত্রী আসেন। কিন্তু নিজের এলাকাটাও ঠিক রাখতে পারেন না।
জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থাকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তুলনা করেন। তিনি বললেন, এক বছরে নাকি অনেক কাজ করেছেন। আজকের খবর আসছে বাংলাদেশের ৩৭টি জেলায় অক্সিজেনের ব্যবস্থা নেই। হাসপাতালে পাঁচ জন রোগী অক্সিজেন পায় তো ২০ জন লাইনে থাকে। কেবলমাত্র অক্সিজেনের কারণে যারা ছটফট করে মারা যাচ্ছেন। পত্রিকায় এত লেখালেখি হচ্ছে স্বাস্থ্যমন্ত্রী কি একটি হাসপাতালে গিয়ে এগুলো দেখেছেন। তিনি কি করেন? তিনি জুম মিটিং করেন।
কোভিড চিকিৎসার সময় নিউজিল্যান্ডের স্বাস্থ্যমন্ত্রী রেস্টুরেন্টে খেতে যাওয়ার কারণে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের স্বাস্থ্যমন্ত্রী কী মানুষ! বুঝলাম না। উনার লজ্জা শরম কিছু নাই! চরিত্র নেই! তার রিজাইন দেওয়া উচিত।
বিএনপির সংসদ সদস্য গোলাম মুহম্মদ সিরাজ বলেন, বগুড়া এখন কোভিডের হটস্পট। গত তিন দিনে সেখানে ২৪ জন মারা গেছেন। সেখানে হাই ফ্লো নজেল ক্যানোলা সংকট।
স্বাস্থ্য মন্ত্রীর সমালোচনা করে বিএনপির হারুনুর রশীদ বলেন, করোনা পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ, যে কোনো মূল্যে করোনা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। যেভাবে সংক্রমণের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে আগামী ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে এটা ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। ক্ষুধা দারিদ্র্যের কারণে আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়ে। সেনাবাহিনী নামানো হয়েছে। সামনে ঈদুল আজহা, গরিব মানুষের জন্য দ্রুত খাদ্য দেওয়ার দাবি করছি। কোরবানির পশু পরিবহন ও কেনা-বেচায় শিগগির সুনির্দিষ্ট নীতিমালা তৈরি করতে হবে, না হলে এটা নিয়েও সংকট তৈরি হবে।
Comment here