নিজস্ব প্রতিবেদক : ময়মনসিংহের গৌরীপুরে পরিত্যক্ত লাগেজ থেকে অচেনা তরুণীর মরদেহ উদ্ধারের ঘটনার প্রায় দুই মাস পর নিহতের পরিচয় ও হত্যার রহস্য জানা গেছে। সাবিনা (২০) নামের ওই গৃহকর্মীকে হত্যার পর লাশ পানিতে ফেলে দেন মেরিন ইঞ্জিনিয়ার আবুল খায়ের মো. জাকির হোসেন ওরফে সোহাগ ও তার স্ত্রী রিফাত জেসমিন ওরফে জেসি।
আজ শুক্রবার দুপুরে পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাস এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান। গত বুধবার রাতে মধ্য বারেরা এলাকা থেকে সোহাগ ও তার স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে সাবিনা হত্যাকাণ্ডের রহস্য। গতকাল বৃহস্পতিবার আদালতে ওই দম্পতি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে হত্যার আদ্যপান্ত জানিয়েছেন।
গত বছরের ৯ নভেম্বর সকালে ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কে গঙ্গাশ্রম এলাকায় জোড়া ব্রিজের কাছে খয়েরি রঙের একটি লাগেজ থেকে ওই তরুণীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সাবিনা মেরিন ইঞ্জিনিয়ার আবুল খায়ের মো. জাকির হোসেন ওরফে সোহাগ ও তার স্ত্রী রিফাত জেসমিন ওরফে জেসির বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করতেন। তদন্তে পিবিআই জানতে পারে-এই দম্পতিই নির্মম নির্যাতনের পর গৃহকর্মী সাবিনাকে হত্যার পর লাশ লাগেজে ভরে পানিতে ফেলে দেয়।
পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘গত ৯ নভেম্বর সকাল পৌনে ৮টার দিকে গৌরীপুরের গঙ্গাশ্রম গ্রামের জোড়া ব্রিজের নিচে সন্দেহজনক একটি লাগেজ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় অজ্ঞাতদের আসামি করে গৌরীপুর থানায় একটি হত্যা মামলা হয়। থানা পুলিশের পাশাপাশি মামলাটি তদন্ত করে পিবিআই। এরপর ভিকটিমকে শনাক্তের জন্য তার ছবি ফলাও করে প্রচার করা হয়। ’
গৌতম কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘জব্দকৃত আলামত বারবার পরীক্ষার পরও তদন্তে গতি আসছিল না। অবশেষে জব্দ লাগেজে একটি আইডেন্টিটি মার্কের সূত্র ধরে এগোতে থাকে তদন্ত। উম্মোচিত হয় চাঞ্চল্যকর, ক্লুলেস লাগেজ বন্দি লাশের হত্যা রহস্য।’
‘তিন বোনের মধ্যে সবার বড় সাবিনা পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। তার বাবা সিরাজুল ইসলাম সিরু দারিদ্রতার কাছে হার মেনে বন্ধ করে দেন মেয়ের লেখাপড়া। একটু ভালো থাকার আশায় সাবিনাকে ময়মনসিংহের কোতোয়ালী থানাধীন গঙ্গাদাস গুহ রোডের তৈমুর টাওয়ারে বসবাসরত মেরিন ইঞ্জিনিয়ার সোহাগের বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে দেন তার বাবা। এরপর সামান্য ত্রুটি হলেই তার ওপর নেমে আসত অমানুষিক শারীরিক ও মানষিক নির্যাতন। বন্ধ হয়ে যায় বাবা মায়ের সঙ্গে দেখা করার ও কথা বলার সুযোগ। গৃহকর্ত্রীর অমানষিক নির্যাতনে তিলে তিলে শীর্ণকায় হয়ে যায় সাবিনার দেহ। গত ৮ নভেম্বর তাদের নির্যাতনে সাবিনার মৃত্যু হয়’, বলেন তিনি।
পুলিশ সুপার আরও বলেন, ‘ওই দম্পতি গৃসাবিনার মৃতদেহ লুকানোর পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী সোহাগ ওই দিন সন্ধ্যা ৬টার দিকে তার ফ্ল্যাটের স্টোর রুম থেকে চটের বস্তা এবং তার মালিকানাধীন পার্শ্ববর্তী নির্মাণাধীন ফ্ল্যাট হতে এমএসবি লেখা সম্বলিত পাঁচটি ইট সংগ্রহ করেন। চাইল্ড বেডরুমের বারান্দা থেকে তার ব্যবহৃত পুরোনো মেরুন রঙের একটি লাগেজ বের করেন। প্রথমে বস্তার ভেতরে সাবিনার মৃতদেহ ও পাঁচটি ইট ভরে বস্তার মুখ বন্ধ করেন আর লাশ ভর্তি বস্তাটি লাগেজে ঢুকান। পরে ওই দম্পতি সাবিনার মৃতদেহ তাদের গাড়ির পেছনের ডালাতে ভরে রাত পৌনে ১০টার দিকে গঙ্গাশ্রম এলাকার জোড়া ব্রিজের নিচে পানিতে ফেলে দিয়ে আসেন।’
Comment here