১৪ সিএনজি চালক ধর্ষণ করল,ফোন দিয়েও রক্ষা হলো না - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
ক্রাইম

১৪ সিএনজি চালক ধর্ষণ করল,ফোন দিয়েও রক্ষা হলো না

কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলায় চাকরিজীবী এক তরুণীকে পাহাড়ে নিয়ে ১৪ জন সিএনজিচালক ধর্ষণ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গত রোববার উপজেলার কালারমারছড়া ইউনিয়নের চালিয়াতলী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, একটি প্রভাবশালী মহল এ ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে। তাই ভুক্তভোগীর পরিবার কোনো আইনি সহযোগিতা নিতে পারছে না। ওই তরুণীকে জিম্মায় রাখার নাম করে আটকে রাখা হয়েছে বলেও অভিযোগ তার পরিবারের।

ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চট্টগ্রামে চাকরি করেন ওই তরুণী। সম্প্রতি মুঠোফোনে মহেশখালীর গোরকঘাটা এলাকার এক তরুণের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে তার। ওই তরুণের সঙ্গে দেখা করতেই গত রোববার চট্টগ্রাম থেকে মহেশখালী আসেন ভুক্তভোগী তরুণী।

রোববার সকাল ১০টার দিকে চালিয়াতলী স্টেশনে নেমে ওসমান গণি নামের এক ব্যক্তির সিএনজি রিজার্ভ করেন ওই তরুণী। সেখান থেকে প্রথমে মাতারবাড়ী যান। পরে সেখান থেকে গোরকঘাটা এলাকা পৌঁছান তিনি। প্রায় দেড় ঘণ্টা সেখানে অবস্থান করেন ওই তরুণী। কিন্তু তার কথিত সেই প্রেমিক গোরকঘাটা না আসায় আবার একই সিএনজিতে চালিয়াতলী ফিরে আসেন তিনি।

এদিকে যাতায়াতের টাকা না থাকায় সিএনজির ভাড়া মেটাতে পারছিলেন না তিনি। এ নিয়ে চালক ওসমান গণির সঙ্গে বাক-বিতণ্ডা শুরু হয় তার। এ সময় সেখানে আরও কয়েকজন সিএনজিচালক উপস্থিত হন। পরে নিজের মোবাইল দিয়ে সিএনজি মিটারের ভাড়া পরিশোধ করে সেখানেই অবস্থান করছিলেন ওই তরুণী।

সন্ধ্যার দিকে চালিয়াতলী এলাকার আমির সালাম, এনিয়া, আদালত খাঁ নামের তিন সিএনজিচালক ওই তরুণীকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে চালিয়াতলী বালুরডেইল পাহাড়ি ঝিরিতে নিয়ে যান। এ সময় ওসমান গনিসহ আরও ১১ জন ওই স্থানে এসে তাকে ধর্ষণ করে।

পরের দিন সোমবার মাতারবাড়ি-চালিয়াতলী সড়কের দরগাহ ঘোনা নামক স্থানে ওই তরুণীকে অস্বাভাবিক অবস্থায় দেখতে পান এক মাছ ব্যবসায়ী। পরে তাকে কিছু টাকা দিয়ে মাতারবাড়ী যাওয়ার বাসে তুলে দেন তিনি। ওই তরুণী মায়ের বাড়ি পৌঁছানোর পর  ধর্ষণের ঘটনাটি জানাজানি হয়।

এ ঘটনায় এলাকায় প্রতিবাদ শুরু হলে চালিয়াতলী সিএনজি স্টেশনের লাইনম্যান রশিদসহ একটি প্রভাবশালী মহল ধর্ষণে জড়িত চালকদের বাঁচাতে মরিয়া হয়ে ওঠে। তিনি চালিয়াতলীর স্থানীয় মেম্বার লিয়াকত আলী ও মাতারবাড়ী মহিলা মেম্বার শামীমার শরণাপন্ন হয়ে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন।

ধর্ষণের শিকার ওই তরুণীর পরিবার এসব তথ্য নিশ্চিত করেন। তারা আরও জানান, পর পর দুবার থানায় গিয়ে ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মামলা করতে চাইলেও লিয়াকত-শামীমার কারণে তা সম্ভব হয়নি। তারা বিষয়টিকে ‘মীমাংসা’ করবেন বলে ওই তরুণীকে জিম্মায় নেন। এ নিয়ে দুবার সালিশও বসে। কিন্তু কোনো মীমাংসা না হওয়ায় ভুক্তভোগীকে নিজ জিম্মায় নেন শামীমা।

পরবর্তীতে গত বুধবার মেম্বার লিয়াকত আলীর অফিসে ‘চূড়ান্ত’ সালিশ বসে। সেখানে ধর্ষণকাণ্ডে জড়িতদের লাঠিপেটা করা হয়। একই সঙ্গে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

ভুক্তভোগীর পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, সালিশে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হলেও তা এখনো দেওয়া হয়নি। তাছাড়া জিম্মায় রাখার নাম করে তাদের মেয়েকে মেম্বার শামীমা আটকে রেখেছেন।

এ বিষয়ে চালিয়াতলীর মেম্বার লিয়াকত আলী বলেন, ‘ধর্ষণের ঘটনাটি সত্য। মাতারবাড়ী এলাকার সিএনজি স্টেশনের লাইনম্যান রশিদ এ ঘটনার মূল হোতা। তাদের লাঠিপেটা করা হয়েছে, জরিমানাও করা হয়েছে।’

তবে মাতারবাড়ীর সিএনজি লাইনম্যান রশিদ এ অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি জানান, দুই মেম্বার মিলে বিষয়টি সমাধান করছেন। টাকার ব্যাপারেও তিনি কিছু জানেন না।

মাতারবাড়ীর মেম্বার শামীমার সঙ্গে যোগযোগ করা হলেও তিনি কোনো কথা বলতে চাননি।

মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জামিরুল ইসলাম আমাদের সময়কে জানান, আজ তিনি ঘটনা জেনেছেন। যেভাবে মীমাংসার কথা বলা হচ্ছে তা কোনো কায়দায় পড়ে না। ঘটনার পূর্ণাঙ্গ বিচারের আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

মহেশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রভাষ চন্দ্র ধর আমাদের সময়কে জানান, ভুক্তভোগী তরুণীকে উদ্ধার করে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে একটি টিম মাতারবাড়ীতে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Comment here