ঢাকা ওয়াসার ৪টি সোর্স পয়েন্ট, ১০টি জোন, ১০টি ঝুঁকিপূর্ণ এবং ১০টি র্যান্ডম এলাকার নমুনা সংগ্রহ করে পানি পরীক্ষা করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আগামী ২ জুলাই পরীক্ষার প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে সংশ্লিষ্ট কমিটিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কমিটির সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ড. সাবিতা রিজওয়ানা রহমানের মতামত শুনে আজ মঙ্গলবার এ আদেশ দেন বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
আদেশে আদালত বলেছেন, পানি পরীক্ষার ব্যয় বহন করবে ওয়াসা। যা সমন্বয় করবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। পরীক্ষার জন্য পানির নমুনা সংগ্রহে ওয়াসা কর্তৃপক্ষকে পূর্ণ সহযোগিতা করতে বলা হয়েছে।
রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে ছিলেন, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন। রিট আবেদনের পক্ষে ছিলেন, আইনজীবী তানভীর আহমেদ।
এর আগে গত ১৬ মে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পক্ষে একটি প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। ওই প্রতিবেদনে ঢাকা ওয়াসার লিংকে গত তিন মাসে ময়লা পানির অভিযোগের তালিকা বিশ্লেষণ করে ১০টি জোনের ৫৯ এলাকায় ময়লা পানির প্রবণতা বেশি বলে উল্লেখ করা হয়।
প্রতিবেদনের বিষয়ে মতামত শুনতে ওই কমিটির সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের (মাইক্রোবায়োলজি ডিপার্টমেন্ট) চেয়ারম্যান ড. সাবিতা রেজওয়ানা রহমানকে আদালতে আসতে বলেন হাইকোর্ট বেঞ্চ। আদালতের এ আদেশ অনুসারে অধ্যাপক সাবিতা রিজওয়ানা রহমান আজ মঙ্গলবার হাইকোর্টে আসেন।
আদালত বলেন, ‘মূলত বেশি বাজেট সম্পর্কে জানতে আপনার মতামত জানতে চাচ্ছি। আমাদের মূল উদ্দেশ্য দূষিত পানি সরবরাহের বিষয়টি নিয়ে। কেন এটা সাপ্লাই হচ্ছে? এটা এক্সামিনের জন্য। এ এক্সামিনে এত লার্জ স্কেল কেন? স্যাম্পল কিভাবে নেওয়া হবে। মূলত পরীক্ষায় খরচ কিভাবে কমানো যায়। সে বিষয়ে জানতে আপনাকে আসতে বলেছি।’
এ সময় অধ্যাপক সাবিতা বলেন, পানি দূষিত এমন ঢালাও অভিযোগের কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। বিগত দিনগুলোতে অর্থাৎ ২০০৯ সালে ঢাকা ওয়াসার সংযোগ ছিলো ২ লাখ ৭২ হাজার ৮৪৪টি। যার বর্তমান সংখ্যা ৩ লাখ ৮৭ হাজার ১৭৭টি। সুপেয় পানিতে কোন রকম রং, গন্ধ বা অস্বচ্ছতা কখনই গ্রহণযোগ্য নয়। সুপেয় পানি সকল নাগরিকের মৌলিক অধিকার। এ সকল লক্ষণাবলী থাকলে অভিযোগ কেন্দ্রে আনা পানির নমুনা চূড়ান্তভাবে অগ্রহণযোগ্য বিবেচনায় কর্তৃপক্ষের তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।
তিনি বলেন, ‘যেসব পানিতে ময়লা দেখা যাচ্ছে বা ঘোলা সেটাতো পরীক্ষার দরকার নেই। সেটা রিজেক্টেড। যেটা সাধারণত স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এমন পরিষ্কার পানি পরীক্ষায় অগ্রাধিকার দিয়ে থাকি যা পান করে কোনো এলাকার রোগ ছড়াবার তথ্য মেলে। আমাদের মনে রাখতে হবে অভিযোগ আছে এমন এলাকার পানি আমাদের সাত দিনের মধ্যে পরীক্ষা করতে হবে পদক্ষেপ গ্রহণে দূষণের প্রকৃত চিত্র পাওয়ার জন্য।’
ড. সাবিতা রিজওয়ানা বলেন, ওয়াসা যে রিপোর্ট দিয়েছে ৫৯ এলাকা নিয়ে সেটাতো কয়েকমাস আগে। ওয়াসা পানির উৎস হলো ভূমিস্থ, ভূগর্ভস্থ, শীতলক্ষ্যা বা বুড়িগঙ্গা। এসব উৎসের পানি সিজন টু সিজনে তারতম্য থাকতে পারে। ঢাকা ওয়াসার ১০টি জোনের ৩ লাখ ৬০ হাজার ৩৪৩টি আউটলেট আছে ধরে আমরা ইতিমধ্যে জানিয়েছি ৯৯ ভাগ আস্থা অর্জন করতে হলে ১৫ হাজার ৮৫৮ আউটলেট পরীক্ষার প্রয়োজন। অন্তত ৯৫ ভাগ আস্থা অর্জনে এক হাজার ৬৫ আউটলেট পরীক্ষা করা আবশ্যক।’
এ সময় আদালত বলেন, টেস্টের মাধমে বিশুদ্ধ পানি পাওয়া যাবে না। জানার জন্য এত টাকা খরচের দরকার নেই। উদ্দেশ্যে পানি দূষিত আছে কিনা?
জবাবে সাবিতা রিজওয়ানা বলেন, চারটি সোর্সে পানি আসে। তখন আদালত বলেন, চারটি সোর্স পিওর হলে, বিতরণের ১০টি জোনে, পর্যায়ক্রমে ১০টি র্যান্ডম এবং ১০টি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার স্যাম্পল নিয়ে পরীক্ষা করা যেতে পারে। মোট ৩৪টি। আপনাদের যতদিন সময় লাগে। প্রতি স্যাম্পলে কত টাকা লাগবে?
এ সময় অধ্যাপক সাবিতা বলেন, প্রতি স্যাম্পলে পাঁচ হাজার টাকা খরচ হবে। সে ক্ষেত্রে মোট ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা খরচ হবে। এরপর আদালত আদেশ দেন।
ওয়াসার প্রতিবেদন অনুসারে, অভিযোগের তালিকা বিশ্লেষণ করে যেসব এলাকায় ময়লা পানি পাওয়ার প্রবণতা বেশি লক্ষ করা যায় সেসব এলাকা হচ্ছে: যাত্রাবাড়ী, বাসাবো, মুগদা, রাজারবাগ, কুসুমবাগ, জুরাইন, মানিকনগর, মান্ডা, দোলাইরপাড় ও মাতুয়াইল, ভাগলপুর, লালবাগ, বকশীবাজার, শহীদনগর, জিগাতলা, ধানমন্ডি, শুক্রাবাদ, কলাবাগান, ভূতের গলি, মোহাম্মদপুর, শেওড়াপাড়া, পীরেরবাগ, মণিপুর, পাইকপাড়া, কাজীপাড়া, মিরপুর, মহাখালী, তেজগাঁও, সিদ্ধেশ্বরী, শাহজাহানপুর, খিলগাঁও, মগবাজার, নয়াটোলা, রামপুরা, মালিবাগ, পরিবাগ, কদমতলী, দনিয়া, শ্যামপুর, রসুলবাগ, মেরাজনগর, পাটেরবাগ, শনিরআখড়া, কোনাপাড়া, মুসলিম নগর, বাড্ডা, আফতাবনগর, বসুন্ধরা, ভাটারা, উত্তরা, খিলক্ষেত, ফায়েদাবাদ, মোল্লারটেক, রানাভোলা, কাফরুল, কচুক্ষেত, পল্লবী।
অভিযোগ পাওয়ার পর পাইপলাইনের ছিদ্র মেরামত করে ময়লা পানির অভিযোগ নিরসন করা হয় বলেও উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
Comment here