৪৪৫ টন বিপজ্জনক পণ্যে বিপদে চট্টগ্রাম বন্দর - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

৪৪৫ টন বিপজ্জনক পণ্যে বিপদে চট্টগ্রাম বন্দর

মো. মহিউদ্দিন,চট্টগ্রাম : বিভিন্ন শেডে থাকা ৩১৯ টিইইউস (টুয়েন্টি ফুট ইক্যুয়েভেলেন্ট ইউনিট) কনটেইনার এবং ৪৪৫ টন বিপজ্জনক পণ্য নিয়ে বিপদে আছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। নিলামের জন্য হস্তান্তর করা হয়েছে; কিন্তু এখনো নিলাম প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারেনি কাস্টসম কর্তৃপক্ষ। ফলে ঝুঁকি নিয়ে এসব পণ্য পাহারা দিতে হচ্ছে বন্দর কর্তৃপক্ষকে।

জানা গেছে, ১৯৯৪ সালে বন্দরে আসা পণ্য নিলাম বা ধ্বংসের অপেক্ষায় রয়েছে। এ ছাড়া অধিকাংশ পণ্য ১০ থেকে ১৫ বছর এবং গড়ে ১৮ থেকে ২০ বছর ধরে বন্দরে পড়ে আছে। অত্যন্ত ঝুঁকির মধ্যে থাকা পণ্য নিয়ে নিয়মিত টেনশনে থাকতে হয় বন্দরকে। কারণ এসব পণ্যে একাধিকবার অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার দুপুরে হাউড্রোলিক থাকা একটি কনটেইনার থেকে ধোঁয়া বের হলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ২০২০ সালে জুনে কেমিক্যাল থেকে অগ্নি দুর্ঘটনায় পুরো একটি শেড পুড়ে যায়। গত মে মাসে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড থাকা কনটেইনার থেকে ধোঁয়া বের হয়। তবে বিএম কনটেইনার ডিপোর ঘটনার পর কেমিক্যাল জাতীয় পণ্য দ্রুত নিলামে বিক্রির চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন কাস্টমস কর্মকর্তারা। গত সোমবার দুই কনটেইনার হাউড্রোজেন পারঅক্সাইড নিলামে বিক্রিও হয়েছে।

২০২০ সালের ৪ আগস্ট লেবাননের বৈরুত বন্দরে বিস্ফোরণ ঘটে। এতে প্রায় দেড়শজন নিহত ও ৫ হাজারের অধিক মানুষ আহত হন। ওই ঘটনার পর ৬ আগস্ট চট্টগ্রাম বন্দরে জরুরি বৈঠকে বসে। বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য হারবার

অ্যান্ড মেরিনের সভাপতিত্বে ওই সভায় পরিচালক পরিবহন এনামুল করিম জানিয়েছিলেন, ও-শেড এবং পি-শেডে বিপজ্জনক পণ্য রাখা হতো। ও-শেডকে ওয়ার্কশপ হিসেবে ব্যবহার করায় কেবল পি-শেডে পণ্য রাখতে হচ্ছে। পুরনো ওই শেডে গাদাগাদি করে পণ্য রাখা হয়েছে। ফলে অত্যাধুনিক একটি নতুন শেড নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। বিপজ্জনক পণ্য থাকা শেডকে সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা করে চারপাশে নিরাপত্তা বেস্টনি, সাত দিন ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগ, স্মোক ডিটেকটর এবং থার্মোমিটার স্থাপন, এ ধরনের পণ্য সরাসরি খালাস বৃদ্ধি, নিলামযোগ্য পণ্য দ্রুত নিলাম ও ধ্বংসযোগ্য পণ্য ধ্বংসের সিদ্ধান্ত হয়। নতুন শেড নির্মাণের দরপত্র আহ্বান হলেও অধিকাংশ এখনো বাস্তবায়ন হয়নি।

ওই দিনের সভায় গঠিত ৬ সদস্যের কমিটি ১২ আগস্ট প্রথম সভায় মিলিত হয়। ২০ আগস্ট তৎকালীন বন্দর চেয়ারম্যান সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে আরেকটি সভা করেন। ২৩ আগস্ট ৬ সদস্যের কমিটি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের ঝুঁকিপূর্ণ শেডসগুলোর সামগ্রিক অবস্থা সম্পর্কে বিশেষ প্রতিবেদন দাখিল করে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল এ ধরনের পণ্য নিলাম বা ধ্বংসের ক্ষেত্রে বেশকিছু আইনি জটিলতা রয়েছে। তাই কাস্টমস হাউস থেকে এটি সম্পাদন করা দুরূহ হয়ে পড়ে। দ্রুত কার্যকরী ফল পেতে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ করলে নিলাম ও ধ্বংস কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্ন করা যাবে। ওই প্রতিবেদনের পর আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক হয়েছিল কিনা তা বন্দর ও কাস্টমস কর্মকর্তারা জানাতে পারেননি। তবে বিএম ডিপোর দুর্ঘটনার পর বন্দর চেয়ারম্যান নৌ মন্ত্রণালয়ে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিপজ্জনক পণ্য পড়ে থাকায় বন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। একই সঙ্গে বন্দরকে ঝুঁকিতে ফেলছে। গত বছরের ১১ নভেম্বর বন্দরের পি-শেডে পড়ে থাকা বিপজ্জনক পণ্যে অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটে। বছরের পর বছর এভাবে রাসায়নিক পণ্য পড়ে থাকায় বড় ধরনের বিপদের সম্ভাবনা রয়েছে।

বন্দর কর্তৃপক্ষের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, ৩১ মে পর্যন্ত বিভিন্ন ইয়ার্ডে ৩১৯ টিইইউস ও ৪৪৫ টন বিপজ্জনক পণ্য রয়েছে। বিপজ্জনক পণ্যের তালিকায় রয়েছে সালফেট, হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড, সালফিউরিক অ্যাসিড, ফায়ার এক্সটিংগুইশার, থিনার, সোডিয়াম সালফেট, মিথানল, ইথাইল হেক্সানল, নাইট্রিক অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম অক্সাইডসহ বিভিন্ন রাসায়নিক পণ্য।

চট্টগ্রাম বন্দর সচিব মো. ওমর ফারুক আমাদের সময় বলেন, বিপজ্জনক নিলামে বিক্রি বা ধ্বংস করতে কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে বারবার তাগাদা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তারা কাজটি সম্পন্ন করতে পারছে না। এসব পণ্যের কারণে বন্দর ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটছে। ঝুঁকি নিয়ে এসব পণ্য পাহারা দিতে হচ্ছে। বন্দরের নিরাপত্তা ও স্বাভাবিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে বিপজ্জনক পণ্য বন্দর থেকে সরিয়ে নেওয়া উচিত।

বিপজ্জনক ও ঝুঁকিপূর্ণ পণ্যগুলো নিলাম ও ধ্বংস করতে চেষ্টার ত্রুটি নেই উল্লেখ করে চট্টগ্রাম কাস্টমসের উপকমিশনার (নিলাম) আলী রেজা বলেন, এখন আমরা কেমিক্যাল দ্রুত নিষ্পত্তি করার উদ্যোগ নিয়েছি। চেষ্টা থাকলেও আইনি বাধ্যবাধকতা ও কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে নির্ধারিত সময়ে করা সম্ভব হয় না।

তিনি বলেন, কেমিক্যাল পণ্য সবাই কেনে না। আবার ধ্বংসযোগ্য পণ্য সব জায়গায় ধ্বংস করা সম্ভব হয় না। পরিবেশ, বিস্ফোরকসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় করে এটি সম্পন্ন করতে হয়।

কাস্টম হাউস সূত্র জানায়, বন্দরের পি-শেডে ধ্বংসযোগ্য প্রায় ৪৯ টন পণ্য ধ্বংস করা হয়েছে। আরও প্রায় ১০ টন পণ্য ধ্বংসের জন্য সুনামগঞ্জের লাফার্জ হোলসিম বাংলাদেশ লিমিটেডের কারখানায় স্থানান্তর করা হয়েছে।

 

Comment here