৭ মার্চ জাতীয় ঐতিহাসিক দিবস ঘোষণার নির্দেশ - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
জাতীয়

৭ মার্চ জাতীয় ঐতিহাসিক দিবস ঘোষণার নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক : একাত্তরে স্বাধীনতার ডাক দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেওয়া ঐতিহাসিক ভাষণের তারিখ ৭ মার্চকে ‘জাতীয় ঐতিহাসিক দিবস’ ঘোষণা করে এক মাসের মধ্যে গেজেট প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আদালতের আদেশ বাস্তবায়নের অগ্রগতি জানিয়ে এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এ সংক্রান্ত

এক রিটের শুনানিকালে গতকাল মঙ্গলবার বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি এএম কামরুল কাদেরের বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এ ছাড়া এ মুজিববর্ষের মধ্যেই দেশের সব জেলা-উপজেলায় বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল স্থাপনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক জেলার ডিসি ও ইউএনওকে এ আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।

পাশাপাশি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভেতরে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরের পরের যে কোনো স্থাপনা উচ্ছেদসহ কয়েক দফা নির্দেশনা সংবলিত রায় বাস্তবায়ন না হওয়ায় হাইকোর্ট ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। হাইকোর্ট কেন ২০০৯ সালে দেওয়া ওই রায়ের নির্দেশনা বাস্তবায়ন হয়নি তা এক মাসের মধ্যে লিখিতভাবে ব্যাখ্যা দিতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে নির্দেশ দিয়েছেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী বশির আহমেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।

জাতীয় ঐতিহাসিক দিবস : ২০১৭ সালে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বশির আহমেদের করা রিটে ৭ মার্চকে কেন ‘জাতীয় ঐতিহাসিক দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিল হাইকোর্ট। এ ছাড়া একাত্তরের ৭ মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে স্থানে, যে মঞ্চে ভাষণ দিয়েছিলেন, পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ, মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র সমর্পণ এবং ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছিল যে স্থানে সেই স্থানে মঞ্চ পুনঃনির্মাণ কেন করা হবে না, রুলে তাও জানতে চাওয়া হয়। এ ছাড়া ৭ মার্চের সেই ঐতিহাসিক ভাষণের সময় বঙ্গবন্ধুর ‘স্পিচ মোডের’ (তর্জনী উঁচিয়ে ভাষণের সময়কার ভঙ্গি) ভাস্কর্য নির্মাণের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না- তাও জানতে চাওয়া হয়। মন্ত্রিপরিষদ সচিব, অর্থ সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, শিক্ষা সচিব, গণপূর্ত সচিব, সংস্কৃতি সচিবকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছিল। সে রুলের শুনানিকালে রিট আবেদনকারীর সম্পূরক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ৭ মার্চকে জাতীয় ঐতিহাসিক দিবস ঘোষণার এ আদেশ দেন হাইকোর্ট।

ক্ষোভ প্রকাশ

ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দান বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একাত্তরের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণের স্থান ও একই বছরের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের স্থান সংরক্ষণের নির্দেশনা চেয়ে মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার কেএম সফিউল্লাহ ও অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন জনস্বার্থে ২০০৯ বছরের ২৫ জুন হাইকোর্টে রিট করেছিলেন। এর এক বছর পর দেওয়া এ রিটের রায়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের একাত্তর-পরবর্তী স্থাপনা, যেমনÑ শিশু পার্ক, শাহবাগ থানা, ফুলের মার্কেট সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। আদালত রায়ে এক বা একাধিক কমিটি গঠন করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ঐতিহাসিক স্থান চিহ্নিত করতে নির্দেশ দিয়েছিল।

এগুলো হল ১৯৪৮ সালের ২১ মার্চ পাকিস্তানের প্রথম গভর্নর মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দেওয়া ভাষণের স্থান; ১৯৬৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণের স্থান; একাত্তর সালের ৩ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ থেকে জাতীয় ও প্রাদেশিক সংসদে নির্বাচিত সদস্যদের শপথের স্থান; ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণের স্থান; পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের স্থান; ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণের স্থান এবং ১৯৭২ সালের ১৭ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর ভাষণের স্থান। এই সাতটি স্থান ছাড়া সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সব ধরনের স্থাপনা অপসারণ করতে বলা হয়েছিল রায়ে। এ বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কাছে আদালতের আদেশ বাস্তবায়নের প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছিল।

সে প্রতিবেদন দেখে হাইকোর্ট ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বাশার আমাদের সময়কে বলেন, ‘সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়, ধর্ম মন্ত্রণালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বাস্তবায়ন প্রতিবেদন দিয়েছি আদালতে। সে প্রতিবেদনে দেখা গেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ আদালতের আদেশের বিষয়ে কিছুই জানত না, অন্ধকারে ছিল। আমি যখন ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করেছি তখন এতটুকু বোঝা গেল তারা আদালতের আদেশের বিষয়ে ওয়াকিবহালই নয়, এ রকম একটা পরিস্থিতি। তবে এখন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ অত্যন্ত আন্তরিক। মহামান্য আদালতের যে আদেশ আছে সে আদেশ অনুযায়ী যত দ্রুত সম্ভব সব নির্দেশনাই বাস্তবায়ন করবেন আশা করি।’

তিনি বলেন, ‘আদালত ক্ষোভ প্রকাশ করে এ বিষয়টাই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে যে, কেন তারা ২০০৯ সালের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করেননি বা কেন নিষ্ক্রিয়তা দেখিয়েছেন, লিখিতভাবে এক মাসের মধ্যে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।’ আগামী এক মাস পর এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানি হবে।

Comment here