৯ মাসের অভিজ্ঞতায় ৫ বছরের পরিকল্পনা - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
ঢাকাসমগ্র বাংলা

৯ মাসের অভিজ্ঞতায় ৫ বছরের পরিকল্পনা

আরিফুজ্জামান মামুন : দেশের অন্যতম শীর্ষ ব্যবসায়ী আতিকুল ইসলাম। আসন্ন নির্বাচনে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন বা ডিএনসিসিতে মেয়র পদে লড়াইয়ে নেমেছেন তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে। আমাদের সময়ের সঙ্গে একান্ত আলাপে উঠে এসেছে ঢাকা উত্তরকে নিয়ে তার নানা পরিকল্পনার কথা

‘সুস্থ, সচল, আধুনিক ঢাকা হচ্ছে আমার সেøাগান। এ কনসেপ্ট নিয়ে আমি কাজ করতে চাই।’ শুরুতেই বলেন আতিকুল। কনসেপ্টের ব্যাখ্যাও দেন তিনি। বলেন, সুস্থ ঢাকা বলতে আমাদের এখানে অনেক মানুষ অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে, ডিপ্রেশনে ভুগছে; ট্রাফিক জ্যামে আমাদের অধিকাংশ সময় চলে যাচ্ছে; ফলে মাল্টিভাইরাল ইফেক্ট পড়ছে মানুষের মধ্যে। শিশুদের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যে খেলার মাঠ আছে, সেগুলো পর্যাপ্ত নয়। তাই যত দ্রুত সম্ভব আমাদের খেলার মাঠগুলো নতুন প্রজন্মের কাছে ফিরিয়ে দিতে চাই। তাদের একটি খেলাধুলার পরিবেশ দিতে চাই। ৯ মাস দায়িত্ব পালনের সময় নগরের সমস্যাগুলো কাছ থেকে দেখেছি। সেগুলোর সমাধানে কাজও শুরু করেছি।

 

সে অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়েই আগামী পাঁচ বছরের পরিকল্পনা করেছি। আমি গতিশীল ও জবাবদিহিমূলক একটি সিটি করপোরেশন গড়ে তুলতে চাই; যেখানে নগরবাসীর প্রাপ্য সেবা ও সব ধরনের নাগরিক সুযোগ-সুবিধাপ্রাপ্তির বিষয়ে মেয়র থেকে শুরু করে কাউন্সিলর এবং প্রতিটি কর্মকর্তা-কর্মচারী জবাবদিহিতার আওতায় থাকবেন।
উপনির্বাচনের আগে দেওয়া প্রতিশ্রুতির প্রসঙ্গ তুলে ধরে আতিকুল বলেন, আমি বলেছিলাম জলাবদ্ধতামুক্ত শহর গড়ব। সে অনুযায়ী কালশী খাল উদ্ধারে কাজ করেছি। বাইসাইকেলের জন্য পৃথক লেনের কাজও শুরু করেছি। নগরীকে আলোকময় করার কাজ শুরু করেছি। আলোকিত নগরী গড়তে আমার সময় ৪২ হাজার এলইডি লাইট লাগানোর প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। ২৪টি পার্ক ও খেলার মাঠের আধুনিকায়ন ও সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এগুলো পুরোপুরি বিশ্বমানের হবে। এলইডি লাইটের স্বচ্ছ আলোতে শিশু, নারী-পুরুষ, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা সবাই অবাধে চলাফেরা করতে পারবেন। ১৫টি ফুটওভার ব্রিজের আধুনিকায়নের কাজও আগেই শুরু হয়েছে।

 

আওয়ামী লীগ মনোনীত এ প্রার্থী বলেন, এর আগে, মেয়র নির্বাচিত হয়ে নাগরিক সেবা নিশ্চিতে নগরীর বিভিন্ন স্থানে আমি ছুটে বেড়িয়েছি ভাঙা পা নিয়ে। ভবিষ্যতেও সর্বোচ্চ সচেষ্ট থাকব নগরবাসীকে সেবা প্রদানে। তিনি বলেন, ডিএনসিসির নতুন ওয়ার্ড ও অনগ্রসর এলাকার উন্নয়নে আমি এলাকাভিত্তিক পৃথক পরিকল্পনা করেছি। কোনো এলাকাই বঞ্চিত হবে না। নতুন ওয়ার্ডগুলোতে পরিকল্পিত নগরায়ণ করব। ৯ মাস মেয়রের দায়িত্ব পালনকালে গুলশান-বনানীর চেয়ে রামপুরা-বনশ্রী, মিরপুর, মোহাম্মদপুর ও নতুন সংযুক্ত এলাকাকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। নতুন এলাকাগুলোয় কোথায় বাজার হবে, কোথায় খেলার মাঠ হবে, কোথায় কমিউনিটি সেন্টার হবেÑ এসব পরিকল্পনা মাথায় রেখে সেভাবেই নকশা করা হবে এবং ওয়ার্ডগুলোর আধুনিকায়ন করা হবে। প্রান্তিক এলাকাকে গুরুত্ব দিয়ে ঢাকা উত্তরকে পরিকল্পিত শহর হিসেবে গড়ে তুলব। এ জন্য প্রথমে কিছু মডেল ওয়ার্ড করব। এগুলোকে বেজ ধরে উন্নয়ন করব। এতে সফলতা পেলে অন্যান্য ওয়ার্ডেও একই ধরনের কর্মসূচি নেওয়া হবে।

 

আতিকুল আরও বলেন, আমি নির্বাচিত হলে নাগরিকরা অনলাইনেই হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধ করতে পারবেন, জন্মনিবন্ধন ও ট্রেড লাইসেন্সও পেয়ে যাবেন। নাগরিকরা সমস্যার কথা তুলে ধরতে পারবেন ‘সবার ঢাকা’ অ্যাপ এবং ৩৩৩ হটলাইনে। ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাধ্যমে তাদের সমস্যার তাৎক্ষণিক সমাধানও হবে।
রাজধানীর অন্যতম সমস্যা পরিবহন খাত, এ কথা জানিয়ে আতিকুল ইসলাম বলেন, পাবলিক বাস যেগুলো আছে, সেগুলো বাড়াতে হবে। সেই সঙ্গে বাড়াতে হবে রুটের সংখ্যাও। এ জন্য আমাদের ফ্রাঞ্চাইজি আনতে হবে। অবশ্যই পাবলিক বাস বাড়বে। আগেই বলেছিÑ আমি একটি সুস্থ ঢাকা, সচল ঢাকা করতে চাই। এ জন্য পাবলিক বাস ভেরি ভেরি ইম্পর্ট্যান্ট। আশা করছি নতুন করে পদক্ষেপের মাধ্যমে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, আমাদের এখানে আটটা মন্ত্রণালয়ের ৫৪টা সংস্থা কাজ করছে। আলোচনার মাধ্যমে একটি ছাতার নিচে সব সংস্থাকে নিয়ে এসে যদি কাজ করতে পারি, তা হলে আমাদের প্রচুর আর্থিক সাশ্রয় হবে, সময়ও কম লাগবে। আমরা দেখেছিÑ একটি রাস্তা তৈরির পর অন্য আরেকটি কাজে ফের সেই রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করা হয়। এটি যেন না হয়, সে জন্য সমন্বয় করেই আমরা কাজগুলো করব।

বিএনপি মনোনীত মেয়রপ্রার্থী তাবিথ আউয়াল আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছেন আতিকুলের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, প্রতিদ্বন্দ্বী এ প্রার্থী একটি রাজনৈতিক দল থেকে এসেছেন। আমিও একটি দল থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি। আমরা নির্বাচন করব সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশে। এটিই থাকা দরকার। নির্বাচনে হার-জিত থাকবেই। আজও আমি রামপুরাতে ধানের শীষের একটি মিছিলকে আমার পাশ দিয়ে যেতে দেখেছি। এ সহনশীলতা থাকা দরকার। তা ছাড়া তাবিথ আউয়ালের বাবা দেশের একজন স্বনামধন্য ব্যবসায়ী। তার সঙ্গে আমার হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক।

ইভিএমে ভোটগ্রহণে বিএনপির আপত্তি ও কারচুপির শঙ্কা প্রসঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের মনোনীত প্রার্থী আতিকুল বলেন, নির্বাচন কমিশন একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পুরো ক্ষমতা তাদের। ভোটগ্রহণের বিষয়ে নির্বাচন কমিশন যে সিদ্ধান্ত নেবে, সেটিই আমি মেনে নেব। তবে এটি হচ্ছে ডিজিটাল যুগ। আর ইভিএম পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণ ডিজিটাল যুগেরই বাস্তব প্রতিফলন।
উজানে সাঁতার কেটে যুদ্ধজয়ী আতিকুল ইসলাম। বাবা-মায়ের ১১ সন্তানের মধ্যে কেবল তিনিই ব্যবসায়ী। বাকি সবাই চাকরিজীবী। স্রোতের বিপরীতে গিয়েও নিজের কর্মদক্ষতায় হয়েছেন সফল। শুরুটা ১০২ শ্রমিক আর ৪৮টি সুইং মেশিন দিয়ে। এখন তার এক হাজার ২০০ মেশিনের পোশাক তৈরির কারখানা। সেখানে কাজ করেন ১৯ হাজার শ্রমিক। হয়েছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীদের একজন। ব্যবসায়ী নেতা হিসেবে পরিচিত আতিকুল ক্রীড়া ও সামাজিক সংগঠনেও নেতৃত্ব দিয়েছেন বলিষ্ঠ হাতে। রাজনীতিতে নাম লিখিয়েছেন তিনি ঢাকা উত্তরের মেয়র পদে গত উপনির্বাচনের সময়। নির্বাচনে জয়ী হয়ে ৯ মাসের জন্য মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী আতিকুল মনে করেন, ব্যবসায়ী হিসেবে সফল হওয়ার মন্ত্র তাকে মেয়র হিসেবে কাজ করার অনুপ্রেরণা জোগাবে।

Comment here