নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে তথা দেশব্যাপী উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। এসব নির্দেশনা যথাযথভাবে বাস্তবায়নে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তায় গতকাল বুধবার থেকে মাঠে নেমেছে সশস্ত্র বাহিনী। সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ কর্তৃক ‘ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’-এর আওতায় সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর সদস্যরা সারাদেশে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে শুরু করেছেন। দেশের প্রতিটি জেলায়
জেলা প্রশাসককে (ডিসি) সভাপতি করে গঠিত হয়েছে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ কমিটি। তাই মাঠে নামার আগে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা ও সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করছে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী। গতকাল বুধবার সকাল থেকেই জেলা শহরগুলোতে শুরু হয়েছে সেনাবাহিনীর টহল। তারা হ্যান্ড মাইকে সবার প্রতি আহ্বান জানান জনসমাগম না করার জন্য। এর পাশাপাশি চলছে সচেতনতামূলক প্রচার। সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখার বিষয়েও তারা সজাগ রয়েছেন।
গতকাল বিভিন্ন জেলা থেকে আমাদের প্রতিনিধি ও নিজস্ব প্রতিবেদকের পাঠানো খবরÑ
নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া জানান, জেলায় জনসাধারণকে করোনার সংক্রমণ থেকে সুরক্ষিত থাকতে সচেতনতামূলক প্রচার ও সাধারণ মানুষকে সতর্ক থাকার কাজ শুরু করেছেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। বগুড়া শহর ও সব উপজেলায় এ প্রচার চলছে। জেলার পাঁচটি উপজেলায় সেনাক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। ডিসি ফয়েজ আহাম্মদ জানান, সেনাসদস্যরা প্রচারণামূলক কাজ শুরু করছেন। শহরসহ গোটা জেলায় প্রচার অব্যাহত থাকবে।
নিজস্ব প্রতিবেদক, কুমিল্লা জানান, জনসমাগম বন্ধে চলছে সেনা টহল। নগরীতে বন্ধ রয়েছে দোকানপাট ও বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। গতকাল নগরীর প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে সেনাসদস্য বহণ করা গাড়িবহর। সেনাসদস্যরা হ্যান্ড মাইকে জনসমাগম না করার আহ্বান জানান।
হবিগঞ্জ প্রতিনিধি জেলা প্রশাসকের বরাত দিয়ে জানান, জেলা সদরে ১০০ জন ও প্রতিটি উপজেলায় ৩৫ জন সেনাসদস্য মাঠে থাকবেন। হবিগঞ্জ সদর ও শায়েস্তাগঞ্জ অস্থায়ী ক্যাম্প থেকে দুর্যোগের এ মুহূর্তে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তার জন্য কাজ করবেন তারা।
রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, করোনা ভাইরাস সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সচেতন, দ্রব্যমূল্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ ও সর্বোপরি লোকজনকে ঘরে ফেরাতে কী কী করণীয়, এসব বিষয় নিয়ে গতকাল বিকালে সেনাবাহিনী-প্রশাসন ও রূপগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাংবাদিকদের নিয়ে মতবিনিময়সভা অনুষ্ঠিত হয়।
মাগুরা প্রতিনিধি জানান, গতকাল সকাল থেকে জেলা শহরে সব রকম শপিংমল, মার্কেট বন্ধ ও চায়ের দোকানসহ বিভিন্ন স্থানে জনসমাগম প্রতিরোধে মাঠে নেমেছে সেনাবাহিনী। সকাল থেকে সেনাবাহিনীর গাড়িবহর শহরে টহল দিয়ে সরকারি ঘোষণা মোতাবেক সংশ্লিষ্ট দোকান, মার্কেট বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেন।
লামা প্রতিনিধি জানান, সংকট মোকাবিলায় সহায়তার জন্য বান্দরবানের লামা উপজেলায় মাঠে নেমেছে সেনাবাহিনী। করোনার সংক্রমণ রোধে বিদেশ ফেরতদের হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা, স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলা, সামাজিক দূরত্ব বজায় নিশ্চিতকরণ ও আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সহায়তাসহ সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য মাঠে সক্রিয় আছেন সেনাসদস্যরা। তাদের সঙ্গে রয়েছেন পুলিশ বাহিনীর সদস্যরাও।
মোংলা প্রতিনিধি জানান, করোনা প্রতিরোধে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করতে মাঠে নেমেছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী। বুধবার দুপুরে মোংলা নদীর ফেরিঘাট থেকে নৌ-সেনাদের বহর ও গাড়িসহ শহরে প্রবেশ করেন নৌবাহিনীর সদস্যরা। প্রয়োজনীয় ওষুধ ও অ্যাম্বুলেন্সসহ নৌবাহিনীর দুটি প্লাটুন নৌ-সেনা কাজ করবে মোংলাবন্দর ও পৌর শহরসহ উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে।
করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় দেশের উপকূলীয় ৬ জেলায় কাজ শুরু করেছে নৌবাহিনীর কন্টিনজেন্টগুলো। ইতোমধ্যে খুলনা নৌ অঞ্চল থেকে ১৭ কর্মকর্তাসহ ১৮৬ নৌসদস্যের ৮টি কন্টিনজেন্ট বিভিন্ন প্লাটুনে ভাগ হয়ে উপকূলীয় বরগুনা সদর, আমতলী, বেতাগী, বামনা, পাথরঘাটা ও তালতলী উপজেলায় কাজ করছে। অন্যদিকে চট্টগ্রাম নৌ অঞ্চল থেকে ১৬ কর্মকর্তাসহ ১৪৪ নৌসদস্যের আরও ৭টি কন্টিনজেন্ট ভোলা সদর, বোরহানউদ্দিন, দৌলতখান, চরফ্যাশন, মনপুরা, লালমোহন, তজুমুদ্দিন, সন্দ¡ীপ, হাতিয়া, টেকনাফ, কুতুবদিয়া ও মহেশখালী এলাকায় তৎপর আছে। উপকূলীয় এসব এলাকায় স্থানীয় জনসাধারণের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব বজায় নিশ্চিত করা, দুর্গম এলাকায় সংক্রমিতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, বিদেশ ফেরত নাগরিকদের কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করাসহ সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় প্রশাসনকে সহায়তায় নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছেন নৌসদস্যরা। এ ছাড়া যে কোনো প্রয়োজনে সার্বিক সহায়তা প্রদানে প্রস্তুত রয়েছে বাহিনীটি।
এদিকে বিমানবাহিনীর প্রত্যেকটি ঘাঁটিতে ইতোমধ্যে ‘করোনা সমন্বয় ও মনিটরিং সেল’ স্থাপন করা হয়েছে। চিকিৎসা সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে বিমানবাহিনীর একটি মেডিক্যাল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এ টিম প্রয়োজনে সশস্ত্র বাহিনীর মেডিক্যাল টিমের সঙ্গে সমন্বিতভাবে সেবা প্রদান করবে। পাশাপাশি জরুরি বিমান পরিবহন এবং মেডিক্যাল ইভাকোয়েশন সহায়তা প্রদানেও প্রস্তুত বিমানবাহিনী। এ ছাড়া প্রভোস্ট পেশার বিমান সেনারা আশকোনার হাজি ক্যাম্পে কোয়ারেন্টিনে থাকা বিদেশ ফেরত মানুষের নিরাপত্তা বিধানে আগে থেকেই দায়িত্ব পালন করছেন। অন্যদিকে বিমানবাহিনীর নিজস্ব এলাকায় জনসমাগম নিয়ন্ত্রণ, বাহিনীর সদস্যদের হোম কোয়ারেন্টিন ও চিকিৎসা বহরগুলোতে আইসোলেশন ওয়ার্ড নিশ্চিতকরণসহ প্রয়োজনীয় কার্যক্রমও গ্রহণ করা হয়েছে।
এদিকে করোনা মোকাবিলায় শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ডাক্তার এবং নার্সদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সামগ্রী প্রদান করেছে নৌবাহিনী পরিবার কল্যাণ (বানৌপকস) সংঘ। হাসপাতালের ডাক্তার ও নার্সদের পার্সোনাল প্রোটেকশন ইকুইপমেন্ট (পিপিই), মাস্ক, গ্লোভসসহ জীবাণুনাশক সাবান ও পাউডার প্রদান করা হয়। গতকাল নৌবাহিনী পরিবার কল্যাণ (বানৌপকস) সংঘের সভাপতি অধ্যাপক ডা. আফরোজা আওরঙ্গজেব শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়–য়ার কাছে এসব মেডিক্যাল সামগ্রী হস্তান্তর করেন।
বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রকাশ না করার অনুরোধ
সশস্ত্র বাহিনী সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)। করোনা ভাইরাস বিস্তার রোধে দেশের সব জেলায় মোতায়েনকৃত সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী সম্পর্কে কোনো ধরনের অসত্য, বিভ্রান্তিকর ও অনুমান নির্ভর সংবাদ ও ছবি প্রকাশ না করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়েছে। এ ছাড়া সশস্ত্র বাহিনী সম্পর্কে সংবাদ পরিবেশনের আগে আইএসপিআরের কাছ থেকে যাচাই করে নেওয়ার জন্যও অনুরোধ করা হয়েছে।
Comment here