কয়েকজন দল বেধে কাগজ কুড়াচ্ছেন। দেখতে মনে হচ্ছে টোকাই। কিন্তু আসলে তারা টোকাই না; তারা নেপাল থেকে আসা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পর একজন নেপালি ছাত্র চিন্তা করেন, ক্যাম্পাসকে পরিষ্কার করে রাখার, যাতে ক্যাস্পাসকে আরও সুন্দর ও পরিচ্ছন্নতা দেখায়। বিভিন্ন স্থান থেকে আসা দর্শনার্থীরা ক্যাম্পাসকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখবেন। সেই চিন্তা থেকেই ক্যাম্পাস পরিষ্কার করার উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি।
আজ শনিবার সকাল ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবন চত্বরসহ বিভিন্ন স্থানে পরিচ্ছন্নতা অভিযানের এমন দৃশ্য দেখা গেছে। পরিচ্ছন্নতা অভিযানের উদ্যোগ নেওয়া নেপালী ছাত্র প্রবেশ রায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাগ্রোনমি অ্যান্ড এগ্রিকালচার এক্সটেনশন বিভাগের পড়ছেন। কেন তার মাথায় ক্যাম্পাস পরিষ্কারের এমন চিন্তা এসেছে-জানতে চাইলে প্রবেশ রায় ভাঙা বাংলায় উত্তর দেন।
প্রবেশ রায় বলেন বলেন, ‘আওয়ার ওয়েস্ট, আওয়ার রিসপোনসিবিলিটি-এই বিষয়কে সামনে রেখে আমরা ক্যাম্পাসকে পরিষ্কারের উদ্যোগ নিয়েছি। আমরা যদি ক্যাম্পাসকে পরিষ্কার করি এবং পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক আবর্জনা ক্যাম্পাসের যেখানে-সেখানে না ফেলে একটি নিদিষ্ট স্থানে ফেলি, তাহলে আমাদের এই ক্যাম্পাসের পরিবেশ দুষিত হবে না। এতে করে দর্শনার্থীদের জন্য একটি সুন্দর ক্যাম্পাসে পরিণত হবে।’
অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় হায়ার স্টাডি ক্লাবের সভাপতি শরীফ হোসেন। তিনি বলেন, ‘নেপালী শিক্ষার্থীদের যে উদ্যোগ, তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে। তাদের এই উদ্যোগের বিষয়টি জানার পর আমরা হায়ার স্টাডি ক্লাব তাদের সঙ্গে পরিচ্ছন্নতা অভিযানে অংশ নিই।’
পরিচ্ছন্নতা অভিযানে যোগ দেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত রসায়ন ও রসায়ন প্রকৌশল বিভাগের ছাত্র আশিস সূত্রধর বলেন, ‘ক্যাম্পাসকে পরিষ্কার করার উদ্যোগ নিয়েছে কয়েকজন নেপালি শিক্ষার্থী। আমি চাই আমাদের ক্যাম্পাস পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হবে। তাদের উদ্যোগে সাড়া দিয়ে আমিও তাদের সাথে কাজ করছি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের জোহা চত্বরের সামনে ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক লায়লা আরজুমান বানু পরিষ্কার অভিযানের উদ্বোধন করেন। উদ্বোধন শেষে তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘তোমাদের এই পরিষ্কার অভিযানের কাজকে আমি স্বাগত জানাই। তোমরা আরও ভালো উদ্যোগ গ্রহণ করো। এই কাজকে সহায়তা করার জন্য তোমারদের যত কিছু লাগবে আমি প্রশাসনের কাছে বিষয়টি বলব। তোমাদের দাবি পূরণের চেষ্টা করব।’
ছাত্র উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘এই ক্যাম্পাসকে সুন্দর রাখা প্রত্যেকের দায়িত্ব। শুধু পরিষ্কার করা নয়, আমাদের মানসিকতা থাকবে যে, আমরা যেখানে সেখানে ময়লা বা উচ্ছিষ্ট ফেলে ক্যাম্পাসকে অপরিষ্কার করব না।’
প্রসঙ্গত পরিচ্ছন্নতা অভিযানে নেপালি ছাত্রের গড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘আরইউ ক্লিন আপ মেগা ক্যাম্পেইন’র উদ্যোগে নেপালি, সোমালিয়া, নাইজেরিয়াসহ ডরমেটরিতে অবস্থানরত বিদেশি শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করে।
কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের হায়ার স্টাডি ক্লাব, ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের সংগঠন গ্রিন আর্থসহ আরও বেশ কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ৮২জন শিক্ষার্থী অংশ নেয়।
Comment here