ইউসুফ সোহেল : শুক্রবার রাত আড়াইটা। রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বছিলার দয়াল হাউজিংয়ের চারদিক সুনসান নীরবতা। হাউজিংয়ের ৩ নম্বর প্লটের ঘুটঘুটে অন্ধকারাচ্ছন্ন ঝোপে কাঁদছিল এক নবজাতক। তখনো তার নাড়ি কাটা হয়নি। দুটি পলিথিন ব্যাগে জড়ানো ছোট্ট শরীরটাতে রক্ত ও ধুলা-বালিতে মাখামাখি।
ওই প্লটের অদূরেই হাসানের বাড়ি। সেই বাড়ির ভাড়াটিয়া ইব্রাহিম রাতের খাবার খেয়ে মাত্র ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। হঠাৎ দূর থেকে ভেসে আসে মেয়ে শিশুটির হৃদয় ভাঙা কান্না।
জঙ্গলে এত রাতে কে কাঁদছে? বুঝে উঠতে পারছিলেন না ইব্রাহিম। কৌতূহল নিয়ে এগিয়ে গিয়ে দেখেন, একটি ঝোপে কাঁদছে শিশুটি। ভেঙে গেছে গলা। পিঁপড়া আর মশা-মাছি ছেয়ে আছে তার শরীরজুড়ে।
ইব্রাহিম এত রাতে শিশুটিকে নিয়ে কী করবেন ভেবে উঠতে পারছিলেন না। তবে নবজাতকের স্বজনরা তার মৃত্যু কামনা করে জঙ্গলে ফেলে রেখে গেলেও জীবন বাঁচাতে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করেন ইব্রাহিম। অবশেষে রক্ষা পায় শিশুটি। সে এখন রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি। শিশুটি সুস্থ আছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
ইব্রাহিম ও হাসপাতালের চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে আজ শনিবার বিকেলে এসব তথ্য জানান মোহাম্মদপুর থানার এএসআই নরুল ইসলাম।
নরুল ইসলাম আমাদের সময়কে বলেন, ‘৯৯৯-এর মাধ্যমে ফোন পেয়ে শিশুটিকে উদ্ধার করেই তাকে নিয়ে যাওয়া হয় শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। কিন্তু গভীর রাতে এক প্রকার ভূতুরে পরিবেশ বিরাজ করছিল হাসপাতালে। চিকিৎসক-নার্স কারোরই দেখা মিলছিল না। এই অবস্থায় শিশুটির প্রাণশঙ্কার কথা চিন্তা করে কী যেন হয়ে গেল ভেতরটায়, চিৎকার দেই। কিছুক্ষণ পর একজন নার্স এগিয়ে এলেও চিকিৎসক তখনো আসেননি।’
পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘শিশুটি তখনও কাঁদছিল। এই অবস্থায় তার কিছু হয়ে গেলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দেব জানাই। বেশ কিছু সময় পর একজন চিকিৎসক এসে নবজাতককে নিয়ে যায় শিশু ওয়ার্ডে। ভোরের দিকে চিকিৎসকরা জানান, মেয়েটি ভালো আছে।’
এএসআই নরুল ইসলাম জানান, রাতের কোনো একটি সময়ে শিশুটিকে কেউ ওই ঝোপের মাঝে ফেলে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারা শিশুটিকে ফেলে গেছে তা তদন্ত চলছে। করোনা ইস্যুতে এই দুঃসময়ের মধ্যে যে বা যারাই শিশুটিকে জঙ্গলে ফেলে গেছে, দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে বলেও জানান তিনি।
Comment here