পঞ্চগড় প্রতিনিধি : মিউজিক ভিডিওতে অভিনয় করানোর কথা বলে এক নারী মডেলকে গণধর্ষণের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় গ্রেপ্তার বোদা উপজেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক আবিদা সুলতানা লাকীকে (৪৫) সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার রাতে জেলা যুব মহিলা লীগের এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
জেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতি ও পঞ্চগড় সদর উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মোছা. নিলুফা ইয়াসমিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, সংগঠন বিরোধী ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে আবিদা সুলতানা লাকীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়।
জেলা শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে সংগঠনের সভাপতি মোছা. নিলুফা ইয়াসমিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় জেলা কমিটির অধিকাংশ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সভায় এক নারী মডেল গণধর্ষণের ঘটনায় তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের ও গ্রেপ্তারের বিষয়টি আলোচনা হয়।
সে সময় সভায় উপস্থিত সকলে লাকীকে সংগঠন থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কারের সিদ্ধান্তে একমত হন। পরে সংগঠনের প্যাডে তাকে সাময়িক বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত সংবাদকর্মীদের জানানো হয়।
প্যাডে উল্লেখ করা হয়, ‘গত ১৬ জুলাই আপনার বিরুদ্ধে বোদা থানায় একটি মামলা করা হয়েছে। এজন্য সংগঠন বিরোধী ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে আপনাকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হলো।’
উল্লেখ্য, গত ১৫ তারিখ রাতে বাদা উপজেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক আবিদা সুলতানা লাকীসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরদিন তাদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করে। পুলিশ তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে পাঁচদিনের রিমান্ডের আবেদন করেছে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গাজীপুরের কালিয়াকৈর এলাকায় থাকতেন ধর্ষণের শিকার ওই মডেল। ইউটিউবের জন্য বিভিন্ন মিউজিক ভিডিওতে কাজ করার সময় পাঁচ বছর আগে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার সাজ্জাদ হোসেন মিলনের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। ঢাকায় মিলন ভিডিও সম্পাদনার কাজ করতেন। তখন বাংলা টিভি নামে একটি প্রতিষ্ঠানের চিফ নিউজ এটিডর ও গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসেবে কাজ করতেন সাজ্জাদ।
এই সম্পর্কের সূত্র ধরেই সাজ্জাদ নিজ এলাকা বোদায় একটি মিউজিক ভিডিও তৈরির জন্য মডেল হিসেবে কাজ করতে ওই তরুণীকে আসতে বলেন। গত মঙ্গলবার সকালে বোদায় পৌঁছান ওই তরুণী। এরপর সাজ্জাদ তাকে বোদা উপজেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক আবিদা সুলতানা লাকীর বাড়িতে নিয়ে যান। তার বাড়িতেই সাজ্জাদসহ ৪-৫ জন মিলে তাকে গণধর্ষণ করেন।
পরদিন ওই মডেলকে বোদা পৌরসভার ভাসাইনগরের একটি বাড়িতে নিয়ে ফের গণধর্ষণ করা হয়। একপর্যায়ে সেখান থেকে পালিয়ে বোদা থানায় আশ্রয় নেন ওই তরুণী।
পরে বুধবার রাতে ওই তরুণী তিনজনের নাম উল্লেখ করে এবং ১০-১২ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা করেন। মামলার নামীয় আসামিরা হলেন, বোদা পৌরসভার ঝিনুকনগর এলাকার প্রথম বাংলা আইপি টিভির চিফ নিউজ এডিটর ও ইউটিউবার সাজ্জাদ হোসেন মিলন (৩৩), বোদা উপজেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি নজরুল ইসলামের স্ত্রী বোদা উপজেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক আবিদা সুলতানা লাকী (৪৫) ও বোদা নগরকুমারী এলাকার জসীম উদ্দিন (২২)। মামলার পর ওই রাতেই সাজ্জাদ হোসেন মিলন ও আবিদা সুলতানা লাকীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
Comment here