নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকায় ফের ‘আইস’ বা ‘মেথ’ নামের ৬০০ গ্রাম বিপজ্জনক মাদক জব্দ করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। গ্রেপ্তার করা হয়েছে এই মাদককারবারি চক্রের ৬ সদস্যকে। প্রায় দুই বছর আগে রাজধানীর একটি বাড়িতে ‘আইস’ তৈরির একটি ল্যাবের সন্ধান পেয়েছিল মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।
গত বুধবার গভীর রাতে রাজধানীর গে-ারিয়ায় অভিযান চালিয়ে ভয়ঙ্কর এই মাদককারবারি চক্রের অন্যতম সদস্য চন্দন রায় নামে এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) রমনা বিভাগ। চন্দন মালয়েশিয়া থেকে ‘আইস’ এনে বাংলাদেশে বাজার তৈরির চেষ্টা করছিলেন। তার তথ্য অনুযায়ী রাজধানীর গুলশান, বনানী ও ভাটারা এলাকায় অভিযান চালিয়ে এই মাদক বিক্রি, সেবন ও পরিবহনের সঙ্গে জড়িত আরও ৫ জনকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। তারা হলেন- সিরাজ, অভি, জুয়েল, রুবায়েত ও ক্যানি। তাদের কাছ থেকে জব্দ করা হয় প্রায় ৬০ লাখ টাকা মূল্যের ৬শ গ্রাম আইস। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার একেএম হাফিজ আক্তার।
মেথামফিটামিন মাদক ‘আইস’। ‘সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেম স্টিমুলেটিং ড্রাগস’ নামে পরিচিত এই মাদক ইয়াবার চেয়েও ৫০-১০০ গুণ বেশি উত্তেজনা সৃষ্টি করে। ব্যয়বহুল এ ড্রাগ- সেবু, ক্রিস্টাল ম্যাথ, ডি ম্যাথসহ ভিন্ন ভিন্ন নামেও পরিচিত মাদকসেবীদের কাছে। মাত্র ১০ গ্রাম আইসের দাম প্রায় এক লাখ টাকা। এ হিসাবে প্রতিবার দুই-তিন কণা সমপরিমাণ মাদক নিতে খরচ হয় প্রায় ১২ হাজার টাকা। এ কারণে আইসকে অভিজাতদের মাদক বলছেন অপরাধ বিশেষজ্ঞরা। এই মাদক পাচারে জড়িত বাংলাদেশের একাধিক চক্র। ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান ছাড়াও এই চক্রের টার্গেট রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিজাত পার্টির গেস্ট।
ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার একেএম হাফিজ আক্তার বলেন, আইস বাংলাদেশের পেক্ষাপটে একেবারেই নতুন মাদক। আইসের কেমিক্যাল নাম মেথামফিটামিন, যার উৎপত্তিস্থল অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও চীন। একটি নতুন মাদকের নাম আমরা বেশকিছু দিন ধরে শুনে আসছিলাম এবং বাংলাদেশেও এর অস্তিত্ব আছে বলে খবর পাই। এর পরিপ্রেক্ষিতে ডিবি রমনা বিভাগের ডিসি এইচএম আজিমুল হক, এডিসি জুয়েল রানা ও এসি জাবেদ ইকবালের নেতৃত্বে বুধবার রাতে গে-ারিয়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রথমে চন্দন রায়কে আটক করা হয়। তার তথ্যানুযায়ী গ্রেপ্তার করা হয় অন্য ৫ জনকে।
হাফিজ আক্তার আরও জানান, এটি মূলত স্নায়ু উত্তেজক মাদক, যা গ্রহণের ফলে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় হরমনের উত্তেজনা এক হাজার গুণ বেড়ে যায়। ফলে ব্রেন স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাক হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এটির তীব্র রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে ধীরে ধীরে দাঁতও ক্ষয়ে যায়। এ ছাড়া এটি গ্রহণে স্থায়ী হ্যালুসিনেশন সৃষ্টি হয়।
ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, আইস মূলত সমাজের উচ্চবিত্ত শ্রেণির মাদক। এই মাদকের মাত্র দুই-তিন কণা একবার নিতে প্রায় ১২ হাজার টাকা খরচ হয়। জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তাররা বলেছেন, উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানদের টার্গেট করে তারা এদেশের বাজার ধরতে আইস আমদানি করেছে। চন্দন রায় বাংলাদেশে আইসের মূল ডিলার অর্থাৎ মূল হোতা। উচ্চবিত্তদের বিভিন্ন পার্টি বা ধনাঢ্য ব্যক্তির সন্তানদের টার্গেট করে আইসের বাজার সৃষ্টির চেষ্টা করছিল চক্রটি। চন্দন রায়ের হাত ধরেই মালয়েশিয়া থেকে বাংলাদেশে ঢোকে অভিজাত মাদক আইস। প্রবাসী আত্মীয় শঙ্কর বিশ্বাসের মাধ্যমে মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আইস ব্যাগেজে করে বিমানযোগে দেশে আনতেন চন্দন রায়। এগুলো পরে ঢাকার খুচরা বিক্রেতাদের মাধ্যমে বিক্রি করতেন তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশ উন্নয়নে এগিয়ে যাচ্ছে। অভিজাত শ্রেণির লোকের সংখ্যা বাড়ছে। সব মাদকের বাজার তৈরির পেছনে অর্থলগ্নি করা হয়। বাংলাদেশে সেই চেষ্টা চলছে। এই মাদক গুলশান-বনানী এলাকার ইনডোর পার্টি সেন্টারে ব্যবহার করা হয়। চন্দন রায় পেশায় স্বর্ণ ব্যবসায়ী হলেও এই ব্যবসার আড়ালে তিনি নতুন এই মাদক আমদানি করে অভিজাত শ্রেণির মধ্যে পরিচিত করাচ্ছিলেন। আমরা বিষয়গুলো খতিয়ে দেখছি। মাদকের উৎস, আনার প্রক্রিয়া, অর্থায়ন এবং দেশের অন্যান্য চক্রের বিষয়গুলো তদন্তে উঠে আসবে। স্বর্ণ ব্যবসায়ী চন্দন রায়ের বিষয়েও তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটকদের কাছ থেকে এর সঙ্গে জড়িত আরও কয়েকজনের নাম জানা গেছে। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে বলেও অতিরিক্ত কমিশনার হাফিজ আক্তার জানান।
Comment here