কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারির প্রাদুর্ভাবের আগে থেকেই ই-কমার্স খাতের উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি ঘটছিলো। বৈশ্বিকভাবে ৪.৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা বজায় রেখে এই খাত সম্প্রসারিত হচ্ছিলো।[1] এর পেছনে ছিলো মূলত ডিজিটালাইজেশনের সম্প্রসারণ, প্রযুক্তি ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন, এবং গ্রাহকদের স্বাচ্ছন্দ্যের প্রতি ঝোঁক বৃদ্ধি।
বৈশ্বিক মহামারি ই-কমার্স খাতের অভূতপূর্ব প্রবৃদ্ধিতে নতুন মাত্রা যুক্ত করে। কোভিড-১৯ এর আগে দক্ষিণ এশিয়া ই-কমার্স খাতে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার থেকে পিছিয়ে থাকলেও বৈশ্বিক মহামারি দক্ষিণ এশিয়ায় ই-কমার্স খাতের প্রবৃদ্ধিকে ত্বরাণ্বিত করে। লকডাউনের কারণে সব বয়সী গ্রাহকদের অনলাইনে কেনাকাটা বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের গ্রাহক ধরে রাখতে ও ব্যবসা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পণ্য বিক্রির নতুন চ্যানেল অনুসন্ধান দক্ষিণ এশিয়ায় ডিজিটালাইজেশনকে ত্বরাণ্বিত করে।
এর সাথে সামঞ্জস্য রেখে, দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম দারাজের বছরপ্রতি ১০০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ঘটেছে এবং এই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে চলতি অর্থ বছরে প্ল্যাটফর্মটিতে বিক্রি একশ কোটি মার্কিন ডলারের কোটা পার করতে যাচ্ছে। গত বছর, প্রতিষ্ঠানটি এর পাঁচটি বাজারে ৪০ মিলিয়নের অধিক ব্যবহারকারী এবং এক লাখ সক্রিয় ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তার কাছে পৌঁছেছে।
ই–কমার্স খাতের সুযোগ
এই অঞ্চলে ক্রমশ ইন্টারনেটের ব্যবহার বৃদ্ধি, অনেক ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তার ই-কমার্সের মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনায় আগ্রহ প্রকাশ এবং এই অঞ্চলের সরকারের ই-কমার্সের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা সম্পর্কে ধারণা পরিবর্তন এই প্রবৃদ্ধিকে আরও ত্বরাণ্বিত করবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারি দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের সরকারকে সঙ্কটকালীন সময়ে এই অঞ্চলের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে ই-কমার্সের গুরুত্ব উপলব্ধি করাতে সক্ষম হয়েছে। ই-কমার্স খাতের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান দারাজ দেখিয়ে দিয়েছে কীভাবে এর প্ল্যাটফর্ম ব্যবসা সচল রাখতে সাহায্য করতে পারে, প্রয়োজনীয় পণ্য ও সেবা ডেলিভারি নিশ্চিত করতে পারে এবং এর সংশ্লিষ্ট বাজারে অর্থনৈতিক স্থিতি বজায় রাখতে পারে।
বর্তমানে, দক্ষিণ এশিয়ার ডিজিটাল অর্থনীতি পরিবর্তিত হতে যাচ্ছে এবং এই বিশ্বাসের সাথে দারাজ এর পাঁচটি বাজারে ই-কমার্স ও ডিজিটালাইজেশনের প্রবৃদ্ধি ত্বরাণ্বিত করার লক্ষ্যে এই অঞ্চলের সরকারের সাথে একসাথে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এর লক্ষ্য দারাজ প্ল্যাটফর্মে ই-কমার্স ও ডিজিটালের জ্ঞান থাকা সক্রিয় ক্ষুদ্র ও মাঝারি বিক্রেতার সংখ্যা বৃদ্ধি করা ও এর মার্কেটপ্লেস মডেলের মাধ্যমে আরও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা।
অর্থনৈতিক প্রভাব ছাড়াও, দারাজ প্ল্যাটফর্ম ‘আপলিফট কমিউনিটিস থ্রু দ্য পাওয়ার অব কমার্স’ লক্ষ্যের সাথে সামঞ্জস্য রেখে দক্ষিণ এশিয়ার জনগোষ্ঠির কাছে ব্যবসাকে আরও সহজ করে তুলেছে। প্রতিষ্ঠানটি এমন একটি পরিবেশ তৈরিতে গুরুত্ব আরোপ করে, যেখানে উদ্যোক্তা এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা দারাজের উদ্ভাবনী, প্রযুক্তি-চালিত লজিস্টিকস এবং পেমেন্টের সমাধানের সাহায্য নিয়ে প্রবৃদ্ধি অর্জনের পাশাপাশি শুরু থেকে কীভাবে সফলতার সাথে ই-কমার্স চালানো যায় এবং এ সংক্রান্ত টুল সম্পর্কে জানার সুযোগ পায়।
দক্ষিণ এশিয়ায় উদ্যোক্তা মানসিকতার বিকাশ ঘটানোর মাধ্যমে গ্রাহকদের বিস্তৃত পরিসরের পণ্য এবং সেবা প্রদান করতে পারবে বলে বিশ্বাস করে দারাজ।
২০২২ এর জন্য নতুন পরিকল্পনা
বিগত কয়েক বছরে সকল অঞ্চলে দারাজের প্রবৃদ্ধির গতি ত্বরাণ্বিত হয়েছে। আজ, প্রতিষ্ঠানটি বাজারে নেতৃত্ব দিচ্ছে এবং এর ইকোসিস্টেমের বিভিন্ন অংশ, যেমন: ই-কমার্স মার্কেটপ্লেস, ডিজিটালাইজড লজিস্টিকস নেটওয়ার্ক, ই-পেমেন্ট, এবং আর্থিক সেবা এই সম্ভাবনাময় অঞ্চলে আরও প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে যাচ্ছে।
বছরের শুরুতে দারাজ সম্পূর্ণভাবে ব্র্যান্ড রিফ্রেশের মধ্য দিয়ে যাবে। ব্র্যান্ডকে আরও আধুনিক, সমসাময়িক এবং প্রাসঙ্গিক করার পাশাপাশি দারাজ এখন এর ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ এবং অভিজ্ঞতামূলক সম্পর্ক স্থাপন করবে।
ব্র্যান্ডটি এখন পারসোনালাইজড অভিজ্ঞতায় বিশেষ নজর দিবে, যেখানে কেবল পণ্য বিক্রি নয়, বরং অভিজ্ঞতা প্রাধান্য পাবে। প্ল্যাটফর্মে বিভিন্ন ক্যাটাগরির বিস্তৃত পরিসরের পণ্যের মাধ্যমে সারা দেশের মানুষের কাছে কেনাকাটার আনন্দ পৌঁছে দিবে এবং প্রতিষ্ঠানটি নিজেদের উদ্ভাবনের ধারা অব্যাহত রাখবে এবং ক্রেতা ও বিক্রেতাদের বিনোদন প্রদান ও সংযুক্ত করার নতুন উপায় তৈরি করবে। মানুষের কেনাকাটা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয়তা পূরণের ক্ষেত্রেই নয়, এর মাধ্যমে ই-কমার্সকে মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অন্যতম অংশে পরিণত করার প্রতিষ্ঠানটির লক্ষ্যও পূরণ হবে।
শুধু ডিজাইনেই পরিবর্তন নয়, ব্র্যান্ড রিফ্রেশ দারাজের সার্বিক পরিবর্তনকেও নির্দেশ করে। ২০৩০ সালের মধ্যে দারাজ ১০০ মিলিয়ন গ্রাহক এবং ব্যবসায়ের কাছে পৌঁছানোর লক্ষ্য অর্জন এবং দক্ষিণ এশিয়ায় ই-কমার্সে নতুন যুগের সূচনা করতে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটি মানুষকে তাদের ক্রয়কৃত পণ্যের মাধ্যমে অভিজ্ঞতা প্রদান করছে এবং বিস্তৃত পরিসরের পণ্যের মাধ্যমে সবার চাহিদা পূরণে কাজ করছে।
Comment here