ফয়সাল আহমেদ,গাজীপুর সদর : অনিরাপদ হয়ে উঠেছে ঢাকা-ময়মনসিংহ চার লেনের মহাসড়ক। শৃঙ্খলার অভাব, দখলযজ্ঞ আর হাইওয়ে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তায় মহাসড়কটির বিভিন্ন স্থানে জট ছাড়াও প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। গেল বুধবার বিকালে রাজেন্দ্রপুর চৌরাস্তায় মহাসড়ক দখল করে গড়ে তোলা পার্কিংয়ে দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় পিকআপ চাপায় মারা গেছেন একটি অভিজাত হোটেলের নিরাপত্তকর্মী হানিফ (৫০)।
দেখা গেছে, গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে শ্রীপুরের মাওনা চৌরাস্তা পর্যন্ত ২৯ কিলোমিটারে ন্যূনতম শৃঙ্খলা নেই। চান্দনা চৌরাস্তা থেকে রাজেন্দ্রপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত ১২ কিলোমিটারে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে দায়সারাভাব গাজীপুর মেট্রোপলিটন ট্রাফিক পুলিশ বিভাগের। অন্যদিকে, রাজেন্দ্রপুর চৌরাস্তা থেকে শ্রীপুর মাওনা চৌরাস্তা পর্যন্ত ১৭ কিলোমিটারে দখলযজ্ঞ চললেও নিষ্ক্রিয় ভূমিকায় হাইওয়ে পুলিশ।
সরেজমিন দেখা যায়, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চান্দনা চৌরাস্তার অদূরে নগপাড়া এলাকায় পূর্ব পাশে মহাসড়কের অন্তত ১৫ ফুট দখল করে স্ট্যান্ড গড়ে তুলেছে বসুমতি বাস সার্ভিস। এ ছাড়া ব্যস্ততম মাওনা চৌরাস্তায় প্রভাতী বনশ্রী পরিবহন এবং জৈনা বাজারে স্ট্যান্ড গড়ে তুলেছে হাইওয়ে মিনি পরিবহন। রাজেন্দ্রপুর চৌরাস্তা এলাকায় মহাসড়ক ঘেঁষে গড়ে উঠেছে অভিজাত হোটেল এক্সসহ আরও কয়েকটি হোটেল-রেস্তোরাঁ। এসব হোটেলের সামনে মহাসড়ক দখল করে প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসের পার্কিং গড়ে তোলা হয়েছে।
গেল বুধবার বিকালে পার্কিংটিতে দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় একজন নিহত হন। অথচ ঘটনার পরের দিন বৃহস্পতিবার সকালে মহাসড়ক দখলের একই চিত্র দেখা গেছে। হোটেল এক্স’র উত্তরে ময়মনসিংহ অভিমুখে রাজেন্দ্রপুর চৌরাস্তা থেকে বাংলাবাজার সড়কে প্রবেশপথ পর্যন্ত সার্ভিস লেন রয়েছে। তবে তা ব্যবহার হচ্ছে গাড়ি পার্কিংয়ের স্থান হিসেবে। লেনটিতে নিউ সুরমা, নিরিবিলি ও কুমিল্লা হোটেলে আসা যাত্রী ও পণ্যবাহী বিভিন্ন ধরনের গাড়ি পার্কিং করা হয়।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন ট্র্রাফিক পুলিশ বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার আবদুল্লাহ আল মামুন দাবি করেন, এ সার্ভিস লেনটি ট্রাফিক পুলিশ বিভাগকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। সার্ভিস লেনে কোন কোন পরিবহন চলবে এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপথ বিভাগ সুনির্দিষ্ট করেনি।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ঘেঁষে গড়ে উঠা বিভিন্ন কারখানার পণ্য পরিবহনের গাড়িও রাস্তার লেন দখল করে পার্কিং করা হয়।
কারখানার পণ্য পরিবহনের গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকার বিষয়ে মাওনা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম বলেন, কারখানাগুলোতে পার্কিংয়ের কোনো সুযোগ না থাকায় মহাসড়কের লেনে দাঁড়িয়ে থাকে পণ্য পরিবহনের গাড়ি।
ময়মনসিংহ অভিমুখে ভবানীপুর, বাঘেরবাজার, গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ি, এমসিবাজার, নয়নপুর বাজার, জৈনাবাজার বাসস্ট্যান্ডে মহাসড়কের লেন দখল করে ওপর বাজার গড়ে উঠেছে। প্রতিদিন বেলা ৩টা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এ বাজার মহাসড়কের অর্ধেক দখল করে রাখে।
উচ্চ আদালতের নির্দেশনা থাকার পরও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবৈধ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার দাপট অব্যাহত রয়েছে। এ ছাড়া আইন লঙ্ঘন করে মহাসড়ক ঘেঁষেই গড়ে তোলা হচ্ছে বহুতল ভবন ও স্থায়ী স্থাপনা। এ ছাড়া সড়ক ও জনপথ বিভাগের জায়গাও এখন অবৈধ দখলে নানা ধরনের স্থাপনা গড়ে উঠছে। কয়েক কিলোমিটার পর পর বিভিন্ন এলাকার সংগৃহিত বর্জ্য নিয়ে মহাসড়কের পাশে ডাম্পিং করায় লেন দখল হয়ে যায়। গত বছরের জুলাই-আগস্ট মাসে সড়ক ও জনপথ বিভাগ গাজীপুরজুড়ে অবৈধ দখল উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করলেও ফের অবৈধ দখল হয়ে যায়।
গাজীপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার মোহাম্মদ শরিফুল আলম বলেন, ‘গত ছয় মাসে এ মহাসড়কে দুবার উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। উচ্ছেদের পর পরই ফের দখল হয়ে যায়। সাধারণ মানুষের আইন মানার প্রবণতা নেই। আমরা অনেক সময় অসহায়।’
এ ব্যাপারে গাজীপুর হাইওয়ে গাজীপুর জোনের পুলিশ সুপার আলী আহমদ খান বলেন, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ওপর পরিবহন পার্কিং বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Comment here