নজরুল ইসলাম ; চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহের পর খুলনায়ও ‘কঠিন চ্যালেঞ্জ’ মোকাবিলা করে বড় জমায়েত ঘটাতে সক্ষম হয়েছে বিএনপি। দলটির নেতারা বলেন, তিনটি বিভাগীয় সমাবেশে বিশাল জমায়েত করতে পেরে তারা আপাতত স্বস্তি অনুভব করছেন। কারণ, এর মধ্য দিয়ে তারা তাদের চারটি লক্ষ্য অর্জন করেছেন। এগুলো হচ্ছে- সাংগঠনিক সক্ষমতা যাচাই, নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করা, তাদের দাবির পক্ষে সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করা এবং সরকারকে চাপে ফেলা।
দলটির নেতারা আরও বলেন, এ অবস্থায় সরকার যদি নিজে থেকে তাদের দাবি মেনে না নেয়, তা হলে সময় সুযোগ বুঝে সরকারের ওপর আরও চাপ সৃষ্টিতে রাজপথে গণআন্দোলন সৃষ্টিতে কর্মসূচি গ্রহণ করা সম্ভব হবে। সব শেষে সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করতে চূড়ান্ত আন্দোলনে যাওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে দলটির।
বিএনপির নীতিনির্ধারকরা জানান, তাদের মূল দাবি হচ্ছে- সরকারের পতন, সংসদ বিলুপ্তি, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন এবং দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের মামলা প্রত্যাহার।
এসব দাবি আদায়ে প্রথমে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে দলের নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করা, সাধারণ জনগণকে সম্পৃক্ত করা এবং সরকারকে চাপে রাখাই উদ্দেশ্য বিএনপির। এ বিষয়ে খুলনায় সমাবেশ আয়োজনের উপদেষ্টা ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বরচন্দ্র রায় আমাদের সময়কে বলেন, বিএনপির সাংগঠনিক সক্ষমতা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে মন্তব্য করে থাকেন। এই সমাবেশগুলোতে লাখো জনতার জমায়েতের কারণে সরকারের মন্ত্রী-এমপি ও নেতাদের কথার সুর পরিবর্তন হয়েছে।
তিনি বলেন, ক্ষমতাসীন সরকার তার পুলিশ এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দিয়ে প্রতিটি সমাবেশ ব্যর্থ করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু বিএনপি নেতাকর্মীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে সমাবেশ সফল করার চেষ্টা করেছে। সব মিলিয়ে সরকার এখন চাপে পড়েছে।
দলের গুরুত্বপূর্ণ একজন নেতা আমাদের সময়কে বলেন, গত জুন থেকে জেলা, মহানগর, থানা, উপজেলা, পৌর, ওয়ার্ড এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে নিয়মতান্ত্রিকভাবে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বিএনপি। রাজধানীতে ১৬টি সমাবেশ করেছে। এসব কর্মসূচির মধ্য দিয়েই মূলত ঘুরে দাঁড়ায় দলটি। এর ফলে দলের শীর্ষ নেতৃত্বসহ নীতিনির্ধারকরাও সাহসী হয়ে ওঠেন। এ অবস্থায় যে কোনো কর্মসূচি দেওয়ার মতো অবস্থায় রয়েছেন নীতিনির্ধারকরা।
তবে সতর্কও রয়েছেন তারা। কর্মীদের আবেগকে তারা বিবেক দিয়ে পরিচালিত করতে চান। সরকারের কোনো ফাঁদে পা দেবেন না তারা। বিএনপির কর্মসূচিতে সক্রিয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ সমর্থকরাও অংশ নিচ্ছেন। যার ফলে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের ওপরে চাপ সৃষ্টি করা গেছে। এটাকে কাজে লাগিয়ে প্রচণ্ড গণআন্দোলন সৃষ্টি করে সরকারের ওপর আরও চাপ সৃষ্টি করতে চাইছে দলটি।
খুলনা বিভাগীয় সমাবেশের সহসমন্বয়ক রফিকুল ইসলাম বকুল আমাদের সময়কে বলেন, ‘খুলনার গণসমাবেশে নেতাকর্মী ও খুলনাবাসীর যে মনোবল দেখেছি, তাতে করে যে কোনো আন্দোলন সফল করতে আমরা প্রস্তুত। আওয়ামী লীগ ও পুলিশ যেভাবে বাধা দিয়েছে তা বর্ণনা দিয়ে শেষ করা যাবে না। এক কথায় বলতে পারি, খুলনাবাসী এবার অগ্নিপরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে।’
গত ২৬ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকের পরদিন এক সংবাদ সম্মেলনে ১০ বিভাগীয় সমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছিলেন, ‘এসব কর্মসূচির মধ্য দিয়ে আমরা জনমত গড়ে তুলতে চাই, জনগণকে সম্পৃক্ত করতে চাই। জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণের ফলে আমরা প্রচণ্ড গণআন্দোলন সৃষ্টি করে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে চাই। আমরা দেখছি আমাদের কর্মসূচিতে জনসম্পৃক্ততা বেড়েছে।’
দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী ২৯ অক্টোবর রংপুরে, ৫ নভেম্বর বরিশালে, ১২ নভেম্বর ফরিদপুরে, ১৯ নভেম্বর সিলেটে, ২৬ নভেম্বর কুমিল্লায় এবং ৩ ডিসেম্বর রাজশাহীতে সমাবেশ শেষে ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশ করবে বিএনপি।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সরকারের বিরুদ্ধে জনগণ জেগে উঠেছে। গণসমাবেশে তা প্রমাণিত হয়েছে। সরকারের পতন এখন সময়ের ব্যাপার। তারা কখন যাবে, সেটাই আমাদের লক্ষ্য। তবে দিনক্ষণ চূড়ান্ত করে কোনো আন্দোলন হয় না। আন্দোলনের নিজস্ব একটা গতি আছ্
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৬ সালের ত্রয়োদশ সংশোধনীর আলোকেই নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা দেওয়া নিয়ে একটি খসড়া তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। সংবিধানের ৫৮ (খ), (গ) যেটা সংবিধানে (ত্রয়োদশ সংশোধনী) ছিল, তার আলোকে এ রূপরেখা তৈরি হচ্ছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের জনগণের সুবিধার জন্য রাজনীতি করি। আর বাংলাদেশের মানুষের সুবিধা হবে দেশে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে।’
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান আমাদের সময়কে বলেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের শত বাধার পরও চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ এবং খুলনার সমাবেশ যেভাবে জনস্রোত নেমেছে, তাতেই প্রমাণিত হয়েছে দেশের মানুষ এ সরকারকে চায় না। ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় আমরা যে আন্দোলন করছি, তার প্রতি দেশের ৯০ ভাগ মানুষের সমর্থন রয়েছে। এখন সরকার কিভাবে যাবে, তা তাকেই ঠিক করতে হবে।
Comment here