পদ্মা সেতু রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হচ্ছে। আগামী ১ নভেম্বর থেকে সুন্দরবন ও বেনাপোল এক্সপ্রেসের ট্রেন দুটি চলতে শুরু করবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১০ অক্টোবর পদ্মা সেতুতে ট্রেন চলাচলের উদ্বোধন করেছেন। এখন ১ নভেম্বর থেকে বাণিজ্যিকভাবে যাত্রী পরিবহন করবে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ইতোমধ্যে এ রুটে ট্রেন চলাচলের ভাড়া চূড়ান্ত করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। প্রস্তাবিত ভাড়া নিয়ে সমালোচনা হওয়ায় ভাড়ার হার আপাতত কমানো হয়েছে। তবে পরে তা আবার কার্যকরের কথা রয়েছে।
রেলওয়ের মহাপরিচালক কামরুল আহসান জানান, ১ তারিখ থেকে দুটি ট্রেনে পদ্মা রেল সেতু হয়ে চলাচলের জন্য রুট পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। আগে চলত বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে, এখন চলবে পদ্মা সেতু হয়ে। রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ঢাকা-খুলনা রুটের সুন্দরবন এক্সপ্রেস এবং ঢাকা-বেনাপোল রুটের বেনাপোল এক্সপ্রেস দিয়ে প্রথমে
পদ্মা রেল সেতুতে ট্রেন চলাচল শুরু হচ্ছে।
নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রথম প্রস্তাবে পদ্মা সেতু পারাপারে প্রতি কিলোমিটারকে ২৫ কিলোমিটার ধরা হয় এবং ভায়াডাক্টের ক্ষেত্রে কিলোমিটারপ্রতি ৬ কিলোমিটার ধরা হয়েছিল। পরে এ নিয়ে বিস্তর সমালোচনা হওয়ায় এখন পদ্মা সেতু অতিক্রমে ২৫ কিলোমিটারের ১০ শতাংশ কমানো হয়েছে। আর ভায়াডাক্টের ক্ষেত্রে কমানো হয়েছে ১০০ শতাংশ। একে রেলের ভাষায় বলা হচ্ছে রেয়াত। তার মানে সেতু অতিক্রমে ২২ দশমিক ৫ শতাংশ ধরা হলেও ভায়াডাক্ট অতিক্রমে বাড়তি ভাড়া আপাতত ধরা হচ্ছে না।
বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে চলাচলকারী খুলনা-ঢাকা-খুলনা রুটের সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনের রুট পরিবর্তন করে পদ্মা সেতু দিয়ে ট্রেন চলবে। ১ নভেম্বর খুলনা থেকে রাত পৌনে ১০টায় রওনা হয়ে পদ্মা সেতু অতিক্রম করে পরদিন ভোর ৫টা ১০ মিনিটে পৌঁছাবে। এরপর বিকাল ৪টায় রওনা হয়ে পরদিন সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে ফিরতি গন্তব্যে পৌঁছবে। এ ট্রেনটি দৌলতপুর, নোয়াপাড়া, যশোর, মোবারকগঞ্জ, কোটচাঁদপুর, চুয়াডাঙ্গা, আলমডাঙ্গা, পোড়াদহ, কুষ্টিয়া কোর্ট, রাজবাড়ী, ফরিদপুর ও ভাঙ্গা জংশনে যাত্রাবিরতি থাকবে। পদ্মা সেতু দিয়ে চলাচলকারী বেনাপোল-ঢাকা-বেনাপোল রুটের ট্রেনটি দুপুর ১টায় রওনা হয়ে রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে পৌঁছবে। এরপর রাত পৌনে ১২টায় রওনা হয়ে সকাল ৭টা ২০ মিনিটে ফিরবে। এ ট্রেনটি ঝিকরগাছা, যশোর, মোবারকগঞ্জ, কোটচাঁদপুর, দর্শনা হল্ট, চুয়াডাঙ্গা, পোড়াদহ, কুষ্টিয়া কোর্ট, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, ভাঙ্গা জংশন স্টেশনে যাত্রা বিরতি থাকবে। ঢাকার কমলাপুর থেকে গেণ্ডারিয়া, কেরানীগঞ্জ, নিমতলী, শ্রীনগর, মাওয়া, পদ্মা সেতু, শিবচর হয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত দূরত্ব ৭৭ কিলোমিটার।
রেল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পন্টেজ চার্জের কারণে ভাড়া বেড়েছে। তারা জানিয়েছেন, পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। ভাড়া নির্ধারণের ক্ষেত্রে এই দূরত্বকে ২৫ দিয়ে গুণ করা হয়েছিল। একেই পন্টেজ চার্জ বলা হয়। এখন তা ১০ শতাংশ কমানো হয়েছে।
কেরানীগঞ্জে ভায়াডাক্টের ওপর নির্মাণ করা হয়েছে পদ্মা সেতু সংযোগ। এটিই দেশের প্রথম উড়াল রেলপথ। ২৩ দশমিক ৩৭ কিলোমিটার ভায়াডাক্টকে ৬ দিয়ে গুণ করে দূরত্ব নির্ধারণ করা হয়েছে। এ কারণে ৭৭ কিলোমিটার দূরত্ব বেড়ে হয়েছে ৩৫৯ থেকে ৩৬৪ কিলোমিটার। এখন ৭৭ কিলোমিটারই থাকছে। ভায়াডাক্টের বাড়তি চার্জ আপাতত স্থগিত রেখেছে রেল কর্তৃপক্ষ। তবে পরে তা আদায় করা হবে। এর কারণ হিসেবে কর্মকর্তারা বলছেন, পদ্মা সেতুতে ৩০ বছরের জন্য রেলওয়ের কাছে সোয়া ছয় হাজার কোটি টাকার ট্যারিফ চেয়েছে সেতু বিভাগ। প্রথম বছরে ১০৬ কোটি টাকা দিতে হবে। রেল এত টাকা দিতে নারাজ। তবে এই ট্যারিফের কারণেই ভাড়া বেশি ধরা হয়েছিল বলে রেল কর্মকর্তাদের ভাষ্য। তারা জানিয়েছেন, বছরে শতকোটি টাকা দিতে হলে ভাড়া আরও বাড়াতে হবে ৩৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকায় নির্মাণ করা পদ্মা রেল সংযোগকে লাভজনক করতে। বলে রাখা ভালো, ঢাকা-যশোর রুটের দূরত্ব পদ্মা সেতুর কারণে কমে হবে ১৬৯ কিলোমিটার। কিন্তু ভাড়া নির্ধারণে পন্টেজ চার্জ বিবেচনা করে দূরত্ব ধরা হয়েছে ৬০৮ কিলোমিটার।
Comment here