সারাদেশ

আশা জাগাচ্ছে রিজার্ভ

রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। সর্বশেষ জুলাই ও আগস্ট মাসের আকুর প্রায় দেড় বিলিয়ন ডলার বিল পরিশোধের পরও রিজার্ভ ৩০ বিলিয়ন ডলারের ওপরে রয়েছে। সেই সঙ্গে ডলারের বাজারেও এসেছে স্থিতিশীলতা। বৈদেশিক উৎসের ঋণের পাশাপাশি রেমিট্যান্সের উড়ন্ত গতি ও রপ্তানি আয়ের ইতিবাচক ধারা রিজার্ভ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে। অর্থনীতিবিদসহ সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, রিজার্ভের এই স্থিতিশীল প্রবণতা অর্থনীতির জন্য স্বস্তির বার্তা দিচ্ছে, যা বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে বড় ভূমিকা রাখবে।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) অধ্যাপক শাহ মো. আহসান হাবীব আমাদের সময়কে বলেন, বর্তমানে আমাদের যে রিজার্ভ রয়েছে, তা অবশ্যই স্বস্তিদায়ক। কারণ বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়ানোর জন্য এবং বাজারে হস্তক্ষেপ করার জন্য যে পরিমাণ রিজার্ভ থাকা দরকার, সেটা বাংলাদেশ অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। এর ফলে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারেও স্থিতিশীলতা এসেছে।

এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন বা আকু হলো এশিয়ার কয়েকটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যকার একটি আন্তঃআঞ্চলিক লেনদেন নিষ্পত্তি ব্যবস্থা। এর মাধ্যমে এশিয়ার ৯টি দেশের মধ্যে যেসব আমদানি-রপ্তানি হয়, তার মূল্য দুই মাস পরপর নিষ্পত্তি করা হয়। আকুর সদস্য দেশগুলো হলো- বাংলাদেশ, ভারত, ইরান, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, মিয়ানমার, ভুটান ও মালদ্বীপ। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার জুলাই ও আগস্ট মাসের আমদানি বিলের দায় বাবদ ১৫০ কোটি ডলার (১.৫ বিলিয়ন) পরিশোধ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই অর্থ পরিশোধের পর বৈদেশিক মুদ্রার মোট রিজার্ভ ৩০ বিলিয়নের ওপরে রয়েছে।

মূলত বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের চেয়ে ব্যয় কম হওয়ায় ধারাবাহিক বাড়ছে রিজার্ভ। ফলে দুই মাস পর পর আকুর বিল পরিশোধেও রিজার্ভের ওপর তেমন চাপ সৃষ্টি হচ্ছে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, আকুর পেমেন্টের পর গত বৃহস্পতিবার মোট রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩০ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলার। তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব-পদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভ রয়েছে ২৫ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলার। গত বুধবার মোট রিজার্ভ ৩১ দশমিক ৪৩ বিলিয়ন ডলার উঠেছিল। আর বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভ ছিল ২৬ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে গত বছরের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের সময় মোট রিজার্ভ ছিল ২৫ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলার। আর বিপিএম-৬ অনুযায়ী ছিল ২০ বিলিয়নের মতো।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান আমাদের সময়কে বলেন, আকুর বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ ৩০ বিলিয়ন ডলারের ওপরে রয়েছে। এটি অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক সংকেত। রিজার্ভের এই স্থিতিশীলতা বাজারে আস্থা ফেরাতে সাহায্য করবে।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর বিশ্ববাজারে জ্বালানি, খাদ্যমূল্য ও পরিবহন খরচ বেড়ে যায়। এতে বাংলাদেশে আমদানি খরচ বেড়ে যায়, শুরু হয় ডলারের সংকট। ডলারের এই সংকটে ব্যবসা-বাণিজ্যও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সংকট মোকাবিলায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে এক সময়ের ৪৮ বিলিয়ন ডলারের রিজার্ভ কমে প্রায় অর্ধেকে নেমে আসে। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নানা পদক্ষেপে ডলারের আয়-ব্যয়ে অনেকটা ভারসাম্য চলে এসেছে। শুধু তাই নয়, বাজার থেকে এখন নিয়মিত ডলার কিনছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। মূলত প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের উড়ন্ত গতি ও রপ্তানি আয়ের ইতিবাচক ধারা বাজারে ডলারের প্রবাহ বাড়াতে মূল ভূমিকা রাখছে। আবার আমদানি ব্যয় কমে আসাও রিজার্ভ বৃদ্ধিতে সহায়ক হচ্ছে। এতে বৈদেশিক মুদ্রার বাজারও স্থিতিশীল রয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি বছরের আগস্ট মাসে প্রবাসীরা ২৪২ কোটি ২০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স পাঠান। আগের মাস জুলাই মাসে আসে ২৪৭ কোটি ৭৯ লাখ ডলার। সব মিলে চলতি অর্থবছরের (জুলাই-আগস্ট) প্রথম দুই মাসে প্রবাসী আয় এসেছে ৪৯০ কোটি ডলার। গত অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে এসেছিল ৪১৩ কোটি ৮০ লাখ ডলার। এই হিসাবে দুই মাসে প্রবাসী আয় বেড়েছে ১৮ দশমিক ৪০ শতাংশ।

অন্যদিকে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যানুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাস (জুলাই-আগস্ট) মিলিয়ে বাংলাদেশ ৮ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানি আয় করেছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১০ দশমিক ৬১ শতাংশ বেশি। এ ছাড়া চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত সাত দফায় মোট ৮১ কোটি ডলারের বেশি কিনে নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

Comment here

Facebook Share