নিজস্ব প্রতিবেদক : আজ থেকে রাত ৮টার পর মার্কেট দোকান খোলা রাখা যাবে না। গতকাল রবিবার শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। বৈঠক শেষে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান এ তথ্য জানিয়েছেন। তবে জরুরি দোকানপাট এ নির্দেশনার বাইরে থাকবে।
আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেল, এলএনজিসহ জ্বালানির উচ্চমূল্যের কারণে আমদানিনির্ভর বাংলাদেশ জ্বালানি সাশ্রয়ের উপায় খুঁজছে। এ কারণেই বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ে রাত ৮টার পর সারাদেশে দোকান, বিপণিবিতান, মার্কেট ও কাঁচাবাজার বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যা আজ থেকেই কার্যকর হবে।
গত ১৬ জুন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন) আহসান কিবরিয়া সিদ্দিকের সই করা চিঠিতে রাত ৮টার পর সারা দেশে দোকান, শপিংমল, মার্কেট, বিপণিবিতান, কাঁচাবাজার খোলা না রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই চিঠিতে বিশ্বব্যাপী জ্বালানির অব্যাহত মূল্যবৃদ্ধিজনিত বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার কথা বলা হয়। গত ১০ জুন এক সেমিনারে রাত ৮টার পর ঢাকা শহর বন্ধ রাখার কথা জানিয়েছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসও।
শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ানের সভাপতিত্বে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন, এমপ্লয়ার্স ফেডারেশন, এফবিসিসিআই, এমসিসিআই, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, দোকান মালিক সমিতি, ঢাকা চেম্বারসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী মালিক সংগঠন এবং শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিনিধিরা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। বাণিজ্য, বিদ্যুৎ, শিল্প মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরাও ছিলেন।
শ্রম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, শ্রম আইন-২০০৬ অনুযায়ী এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হবে। শ্রম মন্ত্রণালয়ের তথ্য কর্মকর্তার পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রত্যেক দোকান বা বাণিজ্য বা শিল্প প্রতিষ্ঠান প্রতি সপ্তাহে অন্তত দেড় দিন সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে। কোন এলাকায় কোন প্রতিষ্ঠান কোন সময় বন্ধ থাকবে সেটা প্রধান পরিদর্শক কর্মকর্তা ঠিক করে দেবেন। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সব দোকান রাত ৮টার পর বন্ধ থাকবে। তবে কোনো গ্রাহক যদি ওই সময়ে কেনাকাটার জন্য দোকানে থাকেন তা হলে আধা ঘণ্টা পর বন্ধ করা যাবে কেনাকাটার সুযোগ দেওয়ার লক্ষ্যে। তবে ডক, জেটি, স্টেশন, বিমানবন্দর এবং পরিবহন সার্ভিস টার্মিনাল অফিস এ নির্দেশনার বাইরে থাকবে। তরকারি, মাংস, মাছ, দুগ্ধজাতীয় সামগ্রী, রুটি, মিষ্টি ও ফুল বিক্রির দোকান, ওষুধ, অপারেশন সরঞ্জাম, ব্যান্ডেজ বা চিকিৎসা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় সামগ্রীর দোকান এ নির্দেশার বাইরে থাকবে। দাফন কাফন ও অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত দোকানও খোলা রাখা যাবে। রাত ৮টার মধ্যে বন্ধ রাখার নির্দেশনার বাইরে রাখা হয়েছে তামাক, সিগারেট, পান-বিড়ি, বরফ, খবরের কাগজ, সাময়িকী বিক্রির দোকান এবং দোকানে বসে খাওয়ার জন্য নাশতা বিক্রির খুচরা দোকানও রয়েছে। খুচরা পেট্রল বিক্রির জন্য পেট্রলপাম্প এবং মেরামত কারখানা নয় এমন মোটর গাড়ির সার্ভিস স্টেশন, সেলুন এবং যে কোনো ময়লা নিষ্কাশন অথবা স্বাস্থ্যব্যবস্থার সঙ্গে সম্পৃক্ত দোকান। যে কোনো শিল্প, ব্যবসা বা প্রতিষ্ঠান যা জনগণকে শক্তি, আলো বা পানি সরবরাহ করে। ক্লাব, হোটেল, রেস্তোরাঁ, খাবার দোকান, সিনেমা, থিয়েটারও এ নির্দেশনার বাইরে। তবে একই দোকানে বা বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানে যদি একাধিক ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালিত হয় এবং তাদের অধিকাংশ তাদের প্রকৃতির কারণে এ ধারার অধীন অব্যাহতি পাওয়ার যোগ্য হলে সমগ্র দোকান বা বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানটির ক্ষেত্রে ৮টার মধ্যে বন্ধ রাখার বিষয়টি প্রজোয্য হবে না।
এদিকে আগামী ঈদুল আজহা পর্যন্ত আরও বেশি সময় দোকান খোলা রাখতে চান ব্যবসায়ীরা। গত শনিবার এফবিসিসিআইর এক বৈঠকে ব্যবসায়ীরা বলেন, করোনায় গত দুবছরে ঈদ ও নববর্ষসহ অন্যান্য উৎসবে পুরোমাত্রায় বেচাকেনা না হওয়ায় লোকসান গুনতে হয়েছে। এমন অবস্থায় রাত ৮টার পর প্রতিষ্ঠান বন্ধ করলে ব্যবসায়ীদের ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা ব্যাহত হবে।
Comment here