‘আমাকে বাঁচাও বাবা যেভাবেই হোক’ - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

‘আমাকে বাঁচাও বাবা যেভাবেই হোক’

বাবা, আমার অফিসে আগুন লাগছে, বের হতে পারছি না; যেভাবেই হোক আমাকে বাঁচাও’ মেয়ের এমন আকুতি শুনেই ঢাকার পথে রওনা দেন অ্যাডভোকেট মাসুদুর রহমান মাসুদ। কিন্তু রাত ৯টায় যখন তিনি কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে পৌঁছান, ততক্ষণে নিভে গেছে মেয়ের জীবন প্রদীপ।

একমাত্র মেয়ের আগুনে পোড়া লাশ দেখে তাই পাগলপ্রায় অ্যাডভোকেট মাসুদ। মাত্র আট মাস আগেই মেয়ে তানজিলা মৌলি মিথির বিয়ে দিয়েছিলেন। বিয়ের পরই মেয়ে লেখাপড়ার পাশাপাশি যোগ দিয়েছিলেন এক ট্যুরিজম কোম্পানির চাকরিতে। সেই কর্মস্থলেই গতকাল বৃহস্পতিবার আগুন লেগে দগ্ধ হয়ে মারা যান মিথি।

মিথির বাবা অ্যাডভোকেট মাসুদুর রহমান মাসুদ বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহার পৌর এলাকার বশিপুর সরদার পাড়ার বাসিন্দা। গত বছরের ৪ আগস্ট একমাত্র সন্তান মিথির বিয়ে দেন তিনি। স্বামী রায়হানুল ইসলাম রায়হান কাজ করেন ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সে।

মিথি সান্তাহার হার্ভে সরকারি বালিকা বিদ্যালয় থেকে ২০০৯ সালে এসএসসি পাস করে। পরে ঢাকায় গিয়ে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি থেকে বিবিএ সম্পন্ন করেন। বিয়ের পর হেরিটেজ এয়ার এক্সপ্রেস নামের একটি ট্যুরিজম কোম্পানিতে যোগ দেন মিথি। এই নবদম্পতি থাকতেন ঢাকার মিরপুরে এক ভাড়ার বাসায়।

মিথির চাচা সরদার মো. সালাউদ্দিন জানান, ঢাকার বনানীতে কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউয়ের এফ আর টাওয়ারের দশম তলায় ছিল মিথির কর্মস্থল। গতকাল ওই টাওয়ারে আগুন লাগলে অন্যদের সঙ্গে মিথিও আটকে পড়েন ভবনটিতে। আটকে থাকা অবস্থাতেই তিনি ফোনে বিষয়টি জানান তার বাবাকে। মেয়ের বিপদ জেনেই বাবা ছুটে যান ঢাকায়। সেখানে পৌঁছে তিনি জানতে পারেন, ওই ভবনের আগুনে ঝলসে গেছে মিথির শরীর, এ কারণে তাকে কুর্মিটোলা হাসপাতালে পাঠিয়েছে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। ওই হাসপাতালে গিয়ে তিনি জানতে পারেন, সেখানে নেওয়ার কিছু পরেই মারা গেছেন মিথি। পরে তার পরিচয়পত্র দেখে মরদেহ শনাক্ত করা হলে কর্তৃপক্ষ লাশ হস্তান্তর করে।

 

 

ঢাকার মিরপুর প্রথম নামাজে জানাজে শেষে আজ শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টায় নিজ গ্রাম বগুড়ার সান্তাহারের বশিপুর তানজিলা মৌলি মিথির মরদেহ নিয়ে আসা হয়। এর আগে থেকেই এলাকার শত শত নারী-পুরুষ ভিড় জমায় তাদের বাড়িতে। তার মৃত্যুতে যেন সান্তাহার পৌর এলাকাজুড়ে চলছে শোকের মাতম। জুমার নামাজের পর দ্বিতীয় জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক করবস্থানে দাফন করা হয়।

গতকাল দুপুরে বনানীর এফ আর টাওয়ারে লাগা আগুনে এখন পর্যন্ত ২৫ জন নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। এর মধ্যে ২৪ জনের লাশ তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

Comment here