আবু আলী : করোনা মহামারীর কারণে গত কয়েক বছর আয়কর মেলা আয়োজন করেনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এ বছরও এই মেলা হচ্ছে না। তবে বিশাল অঙ্কের রাজস্ব আহরণের বিষয় মাথায় রেখে মেলার সেবা কর অফিসে দেবে এনবিআর। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, রাজস্ব আহরণ বাড়াতে এরই মধ্যে এনবিআর নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে। তারই অংশ হিসেবে আগামী নভেম্বরকে করসেবা মাস ঘোষণা করা হয়েছে। এ সময় দেশের সব কর অফিসে উৎসবমুখর পরিবেশে করদাতারা রিটার্ন দাখিল, ই-টিআইএন গ্রহণসহ সব সেবা পাবেন। মাসের শেষে ৩০ নভেম্বর উদযাপন করা হবে আয়কর দিবস। এরই মধ্যে করসেবা মাস ও আয়কর দিবস উদযাপনে কর অঞ্চলগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে এনবিআর।
এনবিআর কর্মকর্তারা জানান, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে তাদের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) রাজস্ব আহরণে ঘাটতি সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা দাঁড়িয়েছে। এ সময়ে এনবিআর আদায় করেছে মাত্র ৬৫ হাজার ৭৩৭ কোটি টাকা। অথচ তিন মাসে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ছিল ৭১ হাজার ২৫৬ কোটি টাকা। সে জন্য রাজস্ব আহরণ বাড়াতে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হচ্ছে। আগামী ১ নভেম্বর সকাল ১০টায় এনবিআর সম্মেলনকক্ষে চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম করসেবা মাস উদ্বোধন করবেন।
এনবিআর সূত্র জানায়, করসেবা মাস উদযাপন উপলক্ষে রেডিও, টেলিভিশন, পত্রিকা ও অনলাইনভিত্তিক মিডিয়ায় প্রচার কার্যক্রমের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এ উপলক্ষে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হবে। আয়কর প্রদানে উৎসাহ ও সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে টেলিভিশনে আয়োজন করা হবে আলোচনা অনুষ্ঠানের। যেখানে এনবিআরের কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীরা অংশগ্রহণ করবেন। এ ছাড়া করসেবা মাস উদযাপন উপলক্ষে একটি ডকুমেন্টারি তৈরি করা হয়েছে। আয়কর সংক্রান্ত একটি থিম সং, জনসচেতনতামূলক নাটিকা বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে সম্প্রচারে নেওয়া হয়েছে ব্যবস্থা। আয়কর বিষয়ে গণসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিশেষ পোস্টার ও উৎসাহব্যঞ্জক সেøাগানসংবলিত স্টিকার, বেলুন, বর্ণিল ফেস্টুন, ব্যানার বিভিন্ন কর অঞ্চলে স্থাপন করা হবে।
জানা গেছে, করসেবা মাসে করদাতারা নির্ধারিত কর অঞ্চলে তাদের ২০২২-২৩ করবর্ষের নিজ নিজ আয়কর রিটার্ন জমা দিতে পারবেন। প্রতিটি কর অঞ্চলের ওয়েবসাইটে আয়কর সংক্রান্ত বিভিন্ন ফরম, পরিপত্র, রিটার্ন পূরণের নির্দেশিকা, ভিডিও টিউটোরিয়ালসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য সন্নিবেশিত থাকবে। দেশব্যাপী ৩১টি কর অঞ্চলের ৬৪৯টি সার্কেলে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত অফিস চলাকালীন সময়ে নিরবচ্ছিন্নভাবে গ্রহণ করা হবে আয়কর রিটার্ন। কর অঞ্চল-৪, ঢাকার ব্যবস্থাপনায় সচিবালয় ও অফিসার্স ক্লাবে রিটার্ন গ্রহণ বুথ ও হেল্প ডেস্ক স্থাপন এবং পরিকল্পনা কমিশনে ৫ দিন করতথ্য সেবা প্রদান করা হবে। সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের জন্য ঢাকা সেনানিবাসের সেনা মালঞ্চে ৯ ও ১০ নভেম্বর করদাতাদের প্রদান করা হবে রিটার্ন গ্রহণ ও করতথ্য সেবা। অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল সিস্টেমটি চালু রয়েছে। ইতোমধ্যে করদাতারা সিস্টেমে রেজিস্ট্রেশন করাসহ রিটার্ন তৈরি এবং রিটার্ন দাখিল করতে পারছেন। এনবিআরের হট লাইন নম্বর ০৯৬১২৭১৭১৭১ এর মাধ্যমে ই-রিটার্ন নিয়ে পরামর্শ গ্রহণ করে অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন করদাতারা। ই-টিডিএস সিস্টেমের মাধ্যমে সব কর অঞ্চলের অধিক্ষেত্রাধীন উৎসে কর কর্তনকারী কর্তৃপক্ষে বাস্তবায়ন কার্যক্রম চলমান আছে। করদাতাদের আয়কর রিটার্ন, টিআইএন আবেদন এবং চালান ফরম প্রদান করা হবে। ই-পেমেন্টের মাধ্যমে করদাতারা অনলাইনে আয়কর পরিশোধ করতে পারবেন।
এনবিআরের তথ্য বলছে, বর্তমানে দেশে ৭০ লাখ মানুষ করের আওতায় আছে। চলতি বছরের মধ্যে এই সংখ্যা এক কোটিতে উন্নীত করতে চায় এনবিআর। বর্তমানে ১০০টি উপজেলায় কর অফিস আছে। দেশের সব উপজেলায় কর অফিস চালুর জন্য নতুন জনবল দরকার। এরই মধ্যে নতুন জনবল কাঠামো অনুমোদনের বিষয়টি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে আছে। শিগগিরই এটি পাস হবে। এনবিআর সদস্য জাহিদ হাসান আমাদের সময়কে বলেন, আগের দুই বছরের মতো এবারও কর অফিসেই করমেলার সেবা পাবেন করদাতারা। এ বিষয়ে প্রতিটি কর অঞ্চল সেবা দেওয়ার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে। আশা করি আগের বছরের ধারাবাহিকতায় এ বছর আরও ভালো সাড়া মিলবে।
Comment here