নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশে মহামারি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী প্রথম শনাক্ত হয় গত ৮ মার্চ। এরপর দিনে দিনে সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে। দেশে এখন পর্যন্ত ২১৮ জন করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক রোগী ঢাকার। এরপরই দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে নারায়ণগঞ্জ। সেখানে ৪৬ জন রোগী ধরা পড়ার পর প্রশাসন নড়েচড়ে বসলেও পালাচ্ছেন অধিবাসীরা।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে নারায়ণগঞ্জকে লকডাউন করেছে প্রশাসন। আর লকডাউনের পরই গোপনে নারায়ণগঞ্জ থেকে মানুষ পালিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে দেশের বিভিন্ন জেলায়।
এর আগে করোনার ভয়াবহতা আঁচ করতে পেরে কারফিউ জারির আবেদন করেছিলেন নারায়ণগঞ্জের সিটি মেয়র আইভী রহমান। কিন্তু কারফিউ দাবি করলেও তা লকডাউন পর্যন্ত সীমাবদ্ধ আছে। তারপরও আইনশঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে নারায়ণগঞ্জের মানুষ।
এ ব্যাপারে মেয়র আইভী বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জে লকডাউন হয়েছে। কিন্তু পাড়া-মহল্লায় মানুষ এখনো হাঁটাহাঁটি করে। সচেতনতার অভাব আছে। নারায়ণগঞ্জ অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। প্রতিটি মহল্লায় প্রচুর মানুষ। তারা যদি না শোনে, তাহলে তো সর্বত্রগামী হয়ে তাদের পক্ষে ভূমিকা রাখা কঠিন হবে।’
জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে নারায়ণগঞ্জে কাজের জন্য আসা এসব মানুষদের বেশির ভাগই গার্মেন্টস কর্মী। রাতে শ্রমিকরা নারায়ণগঞ্জ থেকে নিজ নিজ গ্রামে পালিয়ে যাচ্ছেন। এরপর সেখানে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। পুলিশের কাছে খবর যাওয়ার পর নিজ গ্রাম থেকেও পালানোর ঘটনা ঘটছে।
এ ব্যাপারে জামালপুর জেলার মেলান্দহ উপজেলার কাজাইকাটা গ্রামের ওয়াহেদুজ্জামান বিদ্যুৎ বলেন, ‘বুধবার আমাদের গ্রামে একই পরিবারের চারজন ফিরেছেন। রাতে তারা মাইক্রোবাসে করে বাড়িতে আসেন। ফিরেই গ্রামের চৌরাস্তা থেকে শুরু করে বিভিন্ন বাড়ি ঘুরছেন তারা। এর ফলে গ্রামে ভীতি ছড়িয়ে পড়েছে। চেয়ারম্যানকে জানানোর পর তাদের নামে তালিকা চেয়েছেন।’
লক্ষ্মীপুরের নজরুল ইসলাম দিপু জানান, নারায়ণগঞ্জে মানুষের অযথা যাতায়াতের সুযোগ সুবিধা বন্ধ করার পর চাঁদপুর হয়ে অনেক লোক তাদের জেলায় ফিরছেন।
চাঁদপুরের মেহিদী হাসান বাপ্পি জানান, চাঁদপুরের কচুয়া এলাকার উজানী তুলপাই গ্রামে একজন গত দুদিন আগে নারায়ণগঞ্জ থেকে ফিরেছেন। এই খবর প্রকাশ পাওয়ার পর কচুয়ার পুলিশ তার গ্রামে এসে খুঁজে বের করে এবং রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা করে। কিন্তু বুধবার ভোর থেকে ওই ছেলে পলাতক। সঙ্গে তার তার দুই ভাইও পলাতক।
কুড়িগ্রাম জেলার রাজীবপুর থানার কর্তিমারী গ্রামের সাব্বির হোসেন বলেন, ‘দুদিন ধরেই নারায়ণগঞ্জ জেলা থেকে বেশ কয়েকজন আমাদের গ্রামে এসেছে। গ্রামের সহজ-সরল মানুষ না জেনে তাদের সঙ্গে মিশছেন। তারাও সব জায়াগায় যাচ্ছেন।’
এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জের অধিবাসী সরকারি এক কর্মকর্তা লিয়াকত হোসেন বলেন, অনেকে চিটাগাং মোড় হয়ে বিভিন্ন জায়গায় যাচ্ছেন।
এদিকে, নারায়ণঞ্জ থেকে পালিয়ে বরগুনায় গিয়ে ১০৯ জন আটক হয়েছেন বলে জানা গেছে। গতকাল বুধবার বরগুনার আমতলী উপজেলার গাজীপুর নামক এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়। আটককৃতদেরকে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আমতলী থানা পুলিশ।
জানা গেছে, আটককৃত সবার বাড়িই বরগুনায়। জীবিকার তাগিদে তারা নারায়ণগঞ্জে থাকতেন।
Comment here