নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু হয় গত ১৮ সেপ্টেম্বর। এরপর থেকে বিভিন্ন সময় অভিযানে ৭ জন প্রভাবশালী গডফাদারসহ মোট ১৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর মধ্যে গ্রেপ্তার হওয়া বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভুইয়া, জিকে শামীম, শফিকুল আলম ফিরোজ, সেলিম প্রধান ও ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট জিজ্ঞাসাবাদে ক্যাসিনো সংশ্লিষ্টদের নাম বলে দেন। তাদের মধ্যে কয়েকজন সাংবাদিকও রয়েছেন। যারা ক্যাসিনো বাণিজ্য থেকে নিয়মিত টাকা নিতেন।
ইতোমধ্যে ক্যাসিনো সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ভোলার এমপি নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা আবু কাওসার, যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী ও প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুর রহমান মারুফসহ ২০ জনের ব্যাংক হিসাব জব্দে চিঠি পাঠানো হয়েছে। দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতন ও শামসুল হক চৌধুরীর। ক্যাসিনোকা-ে আরও কিছু রাজনৈতিক নেতা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যের সঙ্গে দেশের বেশ কয়েকজন সাংবাদিকের নামও আলোচিত হচ্ছে।
জানা গেছে, কয়েকজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন শিল্পপতি, প্রবাসী ও ধনাঢ্য ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা চাওয়ার বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। সম্প্রতি দৈনিক পত্রিকার একজন সম্পাদকের বিরুদ্ধে একটি ব্যাংকের চেয়ারম্যানের কাছে পাঁচ কোটি টাকা দাবিরও অভিযোগ পাওয়া গেছে। টাকা না দিলে তার বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রতিবেদন প্রকাশের হুমকি দেন ওই সম্পাদক। পরবর্তীতে টাকা না পেয়ে ওই ব্যাংকের বিরুদ্ধে প্রতিবেদনও প্রকাশ করেন। এ ছাড়া ক্যাসিনোকা-ে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে যে শতাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে তাদের মধ্যে ১০ জন সাংবাদিকের নামও রয়েছে। ওই সাংবাদিকদের সঙ্গে যে কোনো সময় গ্রেপ্তার হতে পারেন একাধিক শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক নেতা। তাদের সবার ব্যাংক হিসাব খতিয়ে দেখার নির্দেশনা রয়েছে।
দুদক সূত্র জানায়, দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে র্যাব যাদের গ্রেপ্তার করেছে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। ক্যাসিনোকারবারিদের সঙ্গে কারা যুক্ত এবং কারা এর সুবিধাভোগী ও পৃষ্ঠপোষক তাদের সম্পর্কে পাওয়া তথ্য দুদকের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, রাজধানীর প্রীতম-জামান টাওয়ারে ক্যাসিনো ব্যবসার সঙ্গে দুজন সাংবাদিকের সরাসরি সম্পৃক্ততা ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। আরও কিছু সাংবাদিক বিভিন্ন ক্যাসিনো মালিকের কাছ থেকে নিয়মিত আর্থিক সুবিধা নিতেন। দুজন সাংবাদিকের মালয়েশিয়ায় ‘সেকেন্ড হোম প্রকল্পে’ অংশ নেওয়ারও তথ্য রয়েছে।
বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে অনেকের ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করা হয়েছে। অনেকেরই ব্যাংক হিসাব খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ তালিকায় বেশ কয়েকজন সাংবাদিকের নামও আছে। ক্যাসিনোকা-ে অন্তত ২০ জন সাংবাদিকের ব্যাংক হিসাব খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, তদবির বাণিজ্যসহ দুর্নীতির অভিযোগ নতুন নয়। অনেকের বিরুদ্ধে অর্থ পাচার এবং শীর্ষ সন্ত্রাসীদের সঙ্গে সখ্যতার অভিযোগও রয়েছে। কয়েকজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, ব্ল্যাকমেইল, জমি দখলে সহায়তা, ঋণখেলাপি ও অর্থ আত্মসাৎকারীদের পক্ষাবলম্বনসহ নানা অপকর্মের অভিযোগ আছে। আবার কারও কারও বিরুদ্ধে পরিবহনের চাঁদাবাজি থেকে নিয়মিত মাসোহারা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
ব্যাংক হিসাব খতিয়ে দেখছেন বিএফআইইউর এমন একজন কর্মকর্তা বলেন, এখন পর্যন্ত যে কয়েকজন গ্রেপ্তার হয়েছে তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে নগদ অর্থসহ কোটি কোটি টাকার এফডিআর ও ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে প্রশাসন। অভিযুক্ত সাংবাদিকদের অন্তত পাঁচজনের অর্থসম্পদও শতকোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।
এদিকে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের কৌশল নির্ধারণে র্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদের সঙ্গে দুদক চেয়ারম্যান ও বিএফআইইউ প্রধান বৈঠক করেছেন। বৈঠকে দুদক চেয়ারম্যানের কাছে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের নানা গোয়েন্দা তথ্য হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
Comment here